নিউজ ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে গভীর উদ্বেগ এবং সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশ ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করলেও রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা আরো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগী লাখ লাখ ( জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৩ লাখ ৮০ হাজার) রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। একইসাথে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার প্রদানের আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ উল্লেখ করেছে যে, অন্তত পক্ষে এমন একটি বৈধ অধিকার দেয়া উচিত, যার মাধ্যমে তারা নিজ জন্মভূমিতে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করতে সক্ষম হন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ আন্তজাতিক মহলকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে। বিশেষ করে খাদ্য, চিকিৎসাসহ ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার জন্যে।
রাষ্ট্রদূত মোমেন বুধবার সন্ধ্যায় এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার সুফল হিসেবে দীর্ঘ ৯ বছর পর নিরাপত্তা পরিষদ অত্যন্ত উপযোগী একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। তবে এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশকে লবিং অব্যাহত রাখতে হবে মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতির স্থায়ী অবসানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাবার পথ সুগম করতে।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, ‘শিগগিরই ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার একটি বৈঠক হবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে। এছাড়া, ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের শীর্ষ নেতারাও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে এ ইস্যুতে বৈঠকে মিলিত হবেন। এভাবেই মিয়ানমার ইস্যু সকলকে নাড়া দিয়েছে।
বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৫ সদস্যের এই কাউন্সিল মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অতিরিক্ত সহিংসতার খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে। “রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ, পরিস্থিতির উত্তরণ, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য ও অস্থায়ী সদস্য সুইডেন। বৈঠকের পর জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফট বলেন, গত নয় বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতিতে সম্মত হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছিলেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈঠকের জন্য। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ইস্যুকে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা হিসেবে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকটি ছিল শুধুমাত্র নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সেখানে যেতে পারেননি। তবে তিনি সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকদের সাথে লাগাতার যোগাযোগ রক্ষা করেছেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের প্রকৃত পরিস্থিতির আলোকে।
মহাসচিব গুতেরেস বুধবার এক প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, ‘আমি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বলেছি অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে। সহিংসতা বন্ধ করে আইনের শাসনে ফিরে যাবার আহ্বানও জানিয়েছি। এবং যারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে তাদেরকে আইনসিদ্ধভাবে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া অবলম্বনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছি। ’
উল্লেখ্য, ৭২তম সাধারণ অধিবেশন শুরুর পর এটিই মহাসচিবের প্রথম প্রেস কনফারেন্স। এ সময় মহাসচিব আবারো সংশ্লিষ্ট সকলকে মিয়ানমার পরিস্থিতির অবসানে শান্তিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। মহাসচিব একইসাথে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের খাদ্য, ওষুধসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য-সামগ্রী ভিকটিমদের মাঝে বিতরণের সুযোগ দানের জন্য।