নিউজ ডেস্ক:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত অবহেলিত অঞ্চলের নাম বিশিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দর্শনগ্রাম, নন্দীগ্রাম ও তেমুখ এই তিন গ্রামের অবস্থান আত্রাই নদীর উত্তর দিকে। নেই কোন চলাচলযোগ্য রাস্তা। আত্রাই নদী দিয়ে নৌকা স্থানীয়দের নিজের বাড়িতে যেতে হয়। আর এই নদী পার হওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীসহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ঝুঁকি চলাচল করতে হয়। নৌকাডুবির মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনাও একাধিক বার ঘটেছে। তবুও উপায় নেই।
নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সুদরানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়। তাই প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে ও বাড়ি ফিরতে হয় নৌকা করেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয় বলে এই গ্রামগুলোর মাঠে উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। আত্রাই সদর থেকে শেষ সীমানা পর্যন্ত এই নদীতে কোন স্থানে পারাপারের জন্য সেতু নেই।
সুদরানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমরা প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করি। অনেক সময় আমাদেরকেই নৌকা বেয়ে নদী পার হতে হয়।
সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আওয়াল হোসেন বলেন, আমাদের এই ঘাটে একটি সেতু খুব প্রয়োজন। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, এই কয়েকটি গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা বদলাতেও সেতু প্রয়োজন। একাধিকবার এই ঘাটে নৌকা ডুবি হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককেই।
দর্শন গ্রামের প্রিন্স মাহমুদ জানান, একটি অঞ্চলের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠিই হলো আধুনিক মানসম্মত যোগাযোগ ব্যবস্থা। একটি সেতুর অভাবে এই প্রত্যন্ত অঞ্চল অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই গ্রামের মানুষগুলো সবকিছু থেকেই বঞ্চিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে, মুমূর্ষ রোগীকেও সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নন্দীগ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, কারও নজর এই প্রত্যন্ত অবহেলিত অঞ্চলের মানুষের দিকে নেই। আজ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয় বলেই আমরা সব কিছু থেকে বঞ্চিত। আধুনিকতার কোনো ছোঁয়াই আজও আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা জানি না কবে এই ঘাটে একটি সেতু হবে কিংবা আধুনিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে পারবো।
সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী জানান, এই ঘাটে একটি সেতুর জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হতে হয়। সত্যিই এই ক’টি গ্রাম আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন করতে হলে আগে এই গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান জানান, সুদরানা ঘাট কিংবা এর কাছাকাছি স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজটি দ্রুত শুরু হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

























































