শুক্রবার | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তি আবেদন শুরু ৭ নভেম্বর Logo চাকরির শেষ কর্মদিবসেই মৃত্যুবরণ করলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক Logo সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি জয়ের ১২০৮ কোটি টাকার রহস্যময় লেনদেনে তদন্তে সিআইডি Logo সিরাজগঞ্জে চাঞ্চল্যকর মাদক ব্যবসায়ী খুনে পিবিআইয়ের হাতে দুই আসামি গ্রেফতার Logo সুন্দরবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর অস্ত্র সরবরাহকারী আটক করেছে কোস্ট গার্ড Logo ইবি শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু  Logo সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাছপট্টি এলাকায় গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণে ২ জন আহত Logo ইবির আরবী বিভাগের স্নাতক সমাপনী র‍্যালি অনুষ্ঠিত! Logo খুবিতে ওবিই পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিমার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ!

বন্যার্তদের সহযোগিতায় যেসব বিষয়ে সতর্কতা জরুরি

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৭:২২:২২ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৫ আগস্ট ২০২৪
  • ৭৭৯ বার পড়া হয়েছে

কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর, ফসলি ক্ষেত ইত্যাদি। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া গেছে যে এরই মধ্যে গ্রামীণ দোকানপাটগুলোও পানিতে ডুবে আছে। ফলে কেনার মতো শুকনা খাবারেরও সংকট রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আমাদের  উচিত আমাদের ভাইদের সহায়তা করার জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা। নিম্নে বন্যার্তদের সহযোগিতায় করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—

 

বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার
কিছু কিছু এলাকায় এই পরিমাণ পানি বেড়েছে যে মানুষ তাদের বৃদ্ধ মা-বাবা, নারী ও শিশুদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আকস্মিক বন্যার কারণে হঠাৎ করে কোনো নৌকা বা স্পিডবোটও পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার অভিযান চালানো আবশ্যক। এতে মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তার বান্দাকে সাহায্য করেন। ’ (আবু দাউদ : ৪৯৪৬)

ত্রাণসামগ্রী বিতরণ
যেহেতু বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, শুকনা খাবার), বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওষুধপত্র ইত্যাদির সংকট আছে, তাই সেসব এলাকায় সাধ্যমতো এগুলো পাঠানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করাকে উত্তম ইসলাম বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১২)

অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র
বন্যার কারণে পানিবন্দি মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাই এই মুহূর্তে তাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা উচিত। কারো উঁচু দালানে যদি প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়-স্বজন আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। নারীদের পর্দা রক্ষা করে থাকার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এ সময় অসহায় মানুষের ওপর দয়া করলে, কঠিন বিপদের দিন আমাদের ওপরও আল্লাহ দয়া করবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাঁর দয়ালু বান্দাদের ওপরই দয়া করেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৮)

চিকিৎসাসেবা
ইখলাসের সঙ্গে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (রুগ্ণ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

আর কঠিন বিপদে থাকা মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিলে আরো বেশি সওয়াবের আশা করা যাবে; ইনশাআল্লাহ।

মানসিক সহায়তা
দুর্গতদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন। তাদের মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ধৈর্যের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বিপদে ধৈর্য ধারণের উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদগুলো শোনানো যেতে পারে। কারণ পবিত্র কোরআনে বলা আছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই সুখ রয়েছে। ’ (সুরা : ইনশিরাহ আয়াত : ৫)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘মহাকালের শপথ, প্রত্যেক মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে, তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, সৎ কাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। ’ (সুরা : আসর, আয়াত : ১-৩)

পুনর্বাসন কার্যক্রম
বন্যা যখন চলে যাবে, তখন আমাদের দায়িত্ব হবে, বন্যায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোয় সহযোগিতা করে, একটি সুুন্দর ও স্বাবলম্বী সমাজ গঠনে এগিয়ে আসা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)

তাই আমাদের ভাইদের বিপদে অনাহারে রেখে শান্তিতে ঘুমানো মুমিনের কাজ হবে না। মহান আল্লাহ আমাদের আক্রান্ত মুমিনদের এই পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তি আবেদন শুরু ৭ নভেম্বর

বন্যার্তদের সহযোগিতায় যেসব বিষয়ে সতর্কতা জরুরি

আপডেট সময় : ০৭:২২:২২ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৫ আগস্ট ২০২৪

কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর, ফসলি ক্ষেত ইত্যাদি। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া গেছে যে এরই মধ্যে গ্রামীণ দোকানপাটগুলোও পানিতে ডুবে আছে। ফলে কেনার মতো শুকনা খাবারেরও সংকট রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আমাদের  উচিত আমাদের ভাইদের সহায়তা করার জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা। নিম্নে বন্যার্তদের সহযোগিতায় করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—

 

বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার
কিছু কিছু এলাকায় এই পরিমাণ পানি বেড়েছে যে মানুষ তাদের বৃদ্ধ মা-বাবা, নারী ও শিশুদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আকস্মিক বন্যার কারণে হঠাৎ করে কোনো নৌকা বা স্পিডবোটও পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার অভিযান চালানো আবশ্যক। এতে মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তার বান্দাকে সাহায্য করেন। ’ (আবু দাউদ : ৪৯৪৬)

ত্রাণসামগ্রী বিতরণ
যেহেতু বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, শুকনা খাবার), বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওষুধপত্র ইত্যাদির সংকট আছে, তাই সেসব এলাকায় সাধ্যমতো এগুলো পাঠানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করাকে উত্তম ইসলাম বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১২)

অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র
বন্যার কারণে পানিবন্দি মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাই এই মুহূর্তে তাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা উচিত। কারো উঁচু দালানে যদি প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়-স্বজন আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। নারীদের পর্দা রক্ষা করে থাকার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এ সময় অসহায় মানুষের ওপর দয়া করলে, কঠিন বিপদের দিন আমাদের ওপরও আল্লাহ দয়া করবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাঁর দয়ালু বান্দাদের ওপরই দয়া করেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৮)

চিকিৎসাসেবা
ইখলাসের সঙ্গে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (রুগ্ণ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

আর কঠিন বিপদে থাকা মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিলে আরো বেশি সওয়াবের আশা করা যাবে; ইনশাআল্লাহ।

মানসিক সহায়তা
দুর্গতদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন। তাদের মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ধৈর্যের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বিপদে ধৈর্য ধারণের উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদগুলো শোনানো যেতে পারে। কারণ পবিত্র কোরআনে বলা আছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই সুখ রয়েছে। ’ (সুরা : ইনশিরাহ আয়াত : ৫)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘মহাকালের শপথ, প্রত্যেক মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে, তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, সৎ কাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। ’ (সুরা : আসর, আয়াত : ১-৩)

পুনর্বাসন কার্যক্রম
বন্যা যখন চলে যাবে, তখন আমাদের দায়িত্ব হবে, বন্যায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোয় সহযোগিতা করে, একটি সুুন্দর ও স্বাবলম্বী সমাজ গঠনে এগিয়ে আসা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)

তাই আমাদের ভাইদের বিপদে অনাহারে রেখে শান্তিতে ঘুমানো মুমিনের কাজ হবে না। মহান আল্লাহ আমাদের আক্রান্ত মুমিনদের এই পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন