রোগীর জীবন নিয়ে চলছে খেলা। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিক ও হুদা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের সেবার নামে নানা অজুহাতে রোগীদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা, রোগীর সিরিয়াল দেয়া ও ডাক্তার দেখানো ও ব্যবস্থাপত্রের জন্য দিনভর অপেক্ষা ও হয়রানীর যেন শেষ নেই।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনরা জানান, গাংনী কুষ্টিয়া সড়কে অবস্থিত রাজা ক্লিনিক বাইরে থেকে যেমনটি দেখা যায় ভিতরের চিত্র ভিন্ন।
এখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও নেই সন্ধ্যার পরে চিকিৎসকের উপস্থিতি। প্রসুতীদেরকে অপারেশনের পর কাঙ্খিত সেবা না দিয়েই একরকম বাধ্য করেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক গর্ভবতীদেরকে সিজারিয়ান করানোর আগে যে টাকা নেওয়ার কথা অপারেশনের পর বিভিন্ন অজুহাতে তার বেশী নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ।
ধানখোলার গর্ভবতী সামসুন্নাহারের স্বামী ইমরান আলী জানান, গত শুক্রবার তার গর্ভবতী স্ত্রীকে রাজা ক্লিনিকে নিয়ে আসলে রোগীকে অপারেশনের পরামর্শ দেয়া হয়। অপারেশনের পর ওষুধ ও অপারেশনের খরচ বাবদ ১৭ হাজার টাকা দাবী করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরে অনেক দেন দরবার শেষে ১৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। ক্লিনিকের ভাষ্য, রোগীর অবস্থা ভালো ছিল না তাই বাইরে থেকে ডাক্তার এনে অপারেশন করানো হয়েছে। এভাবে অনেকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ নেয়া হয়।
ভুল অপরেশনে অনেক রোগীই জীবন সংশয়ে থাকেন। গাংনীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবু হানিফের ছেলে শাহিনের ফিসটুলার ভুল অপারেশনের ফলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে। অবশেষে কুষ্টিয়া থেকে পুনরায় অপারেশন করা হয় শাহিনের।
এদিকে শহরের হুদা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আদায় করা হয় গলাকাটা ফিস। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দেন এখানে। তারা অপ্রয়োজনীয় অনেক পরীক্ষা দেন ক্লিনিকের স্বার্থে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এমরানুল ইসলাম (আবির) রোগী দেখেন প্রতি সোমবার বিকেলে।
ডাক্তারের সাক্ষাৎকার ফিস গত সপ্তাহে ছিলো ৫শ টাকা। হঠাৎ এ সপ্তাহে ফিস করা হয়েছে ৬শ টাকা। এ যেন ব্যয় বুঝে আয়ের সুব্যবস্থা। রোগীকে সকালে টাকা জমা দিয়ে সিরিয়ালের টোকেন নিতে হয়। বিকেলে আবারও আসতে হয় ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে। আবার অনেক সময় সিরিয়াল নিয়ে ডাক্তারের ফিস দেয়া হলেও নানা অজুহাতে রোগীকে ফেরত দেয়া হয়। এমনটি জানালেন চোখের চিকিৎসা নিতে আসা বেতবাড়িয়ার গৃহবধু কবিরা খাতুনের স্বজন রেজা। সোমবার ওই গৃহবধু এসেছিলেন চিকিৎসা নিতে।
এব্যাপারে রাজা ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী পারভিয়াস হোসেন রাজা জানান, ক্লিনিক মালিক সমিতির বেধে দেয়া মুল্য তালিকা অনুযায়ি পরীক্ষা নিরীক্ষার ফিস নেয়া হয়। অপারেশনের ক্ষেত্রে অভিভাবক বা রোগী নিজেরাই যে চুক্তি করে তার বেশি নেয়া হয় না। রাতে কোন রোগীকে সেবা দেয়া হয় না কেন ? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
অপরদিকে হুদা ডায়াগনস্টিকের স্বত্তাধিকারী নাজমুল হুদা জানান, দুপুরে সিরিয়াল নিলে ভিড় হয়ে যায় তাই সকালে সিরিয়াল নেওয়া হচ্ছে আজ থেকে। মনগড়া ফিস নির্ধারনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ওটা ডাক্তারের বিষয় এটাতে আমাদের কিছু না। কুষ্টিয়াতে তিনি ৬শ টাকা ফিস নেন এখানেও তাই। সিভিল সার্জন ডাঃ নাসির উদ্দীন জানান, অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।