নিউজ ডেস্ক:
স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম-কানুন না মানায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে মার্কেট ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। এ গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরপরই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে বন্ধ থাকার নির্দেশনা মাইকিং করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। কিন্তু পূর্বের ন্যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকানপাটগুলো খোলা থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জনসাধারণের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ও মৃত্যু ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির’ ১৪ মে-এর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে ৩০ মে শপিংমল ও দোকানপাটসমূহ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। এ জেলার সব প্রকার দোকান, চায়ের দোকান, পূর্বের ন্যায় সার্বক্ষণিক বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান (ওষুধ ব্যাতীত) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ঈদ উপলক্ষে নিজ আবাসস্থল ত্যাগ করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ও নৌপথে বা অন্য কোনো জেলা হতে কেউ এ জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না। এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং পূর্বের ন্যায় ইজিবাইক, অটো এবং সব অবৈধ যানবহন সম্পূর্ণ নিষেধ থাকবে। জরুরি সেবা ও কৃষি পণ্য সার কীটনাশক, খাদ্যপণ্যের চলাচল, কাঁচা বাজার ও ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে পূর্বে জারিকৃত সব নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। জারিকৃত নির্দেশনার ব্যতয় পরিলক্ষিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনায় গত রোববার সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম-কানুন মেনে চুয়াডাঙ্গায় খুলে দেওয়া হয় মার্কেট ও অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নির্দেশনা মানতে না পারায় পাঁচ দিনের মাথায় মার্কেট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল জেলা প্রশাসন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেলা প্রশাসন বন্ধের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার পর ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর, পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান, চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল আসিফুল হক, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান, জেলা মার্কেটিং অফিসার সহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা শিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি শাহারিন হক মালিক, দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হোসেন জোয়ার্দ্দার ইবু, চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মিজাইল হোসেন জোয়ার্দ্দার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি সরকারি নির্দেশনা দিয়ে সীমিত আকারে ঈদ বাজারের জন্য গত ১০ মে থেকে জেলার মাকের্ট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু খুলে দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই নির্দেশনা মানতে অনীহা দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। তাই খুলে দেওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে আবারও এসব মার্কেটগুলো বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে বাজার মনিটরিং কমিটির সভার আহ্বান করা হয়। সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য ও করোনার গুচ্ছ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি জেলার সব ধরনের মার্কেট-দোকানপাট বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঝুঁকি নিতে চাই না বলেই মার্কেট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আগের মতো জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানপাট খোলা রাখা যাবে।