চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুরে একই স্থানে আ.লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ আহ্বান
কারও ভাঁড়ামি করে, চামচামি করে টিকে থাকা যাবে না : আসাদুল হক বিশ্বাস
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ^াসের গাড়িবহরের পথরোধ করে হামলা করেছেন প্রতিপক্ষ-সমর্থিত মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিলন মাস্টার ও সদর থানা মহিলা লীগের সভানেত্রী শেফালী খাতুনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় নীলমনিগঞ্জ রেলগেটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আসাদুল হক বিশ^াসের সফরসঙ্গী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অপরপক্ষ-সমর্থিত নেতা-কর্মীদের কয়েক দফা হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এ ঘটনার নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে মোমিনপুর বাজার মাঠে প্রস্তুতি সভা আহ্বান করেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় গতকাল সকালে একই স্থানে জনসভা আহ্বান করেন প্রতিপক্ষ-সমর্থিত মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিলন মাস্টার ও সদর থানা মহিলা লীগের সভানেত্রী শেফালী খাতুনসহ নেতা-কর্মীরা। এরপর থেকেই দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি (তদন্ত) লুৎফুল কবিরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দুপুরের কিছু আগে ওই মাঠে সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওই স্থানে অবস্থান নেয়। এরপর পৃথক স্থানে সভা ও সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা থেকে গাড়িবহরসহ সদরের মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ^াস। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁর গাড়িবহরটি নীলমনিগঞ্জ রেলগেটে পৌঁছালে ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ করে গাড়িবহর আটকে দেন প্রতিপক্ষ-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। এরপর আসাদুল বিশ^াস-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা ক্রসিং-গেট তুলে দিতে বললে তাঁদের ওপর হামলা চালান মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিলন মাস্টার ও সদর থানা মহিলা লীগের সভানেত্রী শেফালী খাতুনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী। এ সময় বহরে থাকা নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ করলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষকেই ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। প্রায় ১০ মিনিট পর পুলিশের উপস্থিতিতে রেলগেট খুলে দেওয়া হলে আবারও সভার উদ্দেশে যাত্রা করেন আসাদুল বিশ^াসসহ নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার পর ইউনিয়নজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, একই স্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের আয়োজন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আগেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরবর্তী সময়ে নেতা-কর্মীরা রেলগেট বন্ধ করে গোলযোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ সদস্যরা তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ছাড়া বড় ধরনের কোনো ঘটনা বা হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি।
এদিকে, নির্ধারিত স্থানে সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়ায় জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের বাসভবনের পাশর্^বর্তী আমবাগানে প্রস্তুতি সভা করেন আসাদুল হক বিশ^াস-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। মোমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামাত জোয়ার্দ্দারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ^াস। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য সাখাওয়াত হোসেন টাইগার, সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শফিউদ্দীন শফি, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবির, সদর থানা কৃষক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মতিন দুদু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি, পৌর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. ওয়াসিম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হুসাইন জ্যাকি।
সভাস্থলে আসার পথে বাধা প্রদানের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুল হক বিশ^াস বলেন, ‘বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছে, নৌকার জয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আজও তারা বাধা দিয়ে নৌকার কর্মসূচি প- করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভালো মানুষ, স্বচ্ছ মানসিকতা নিয়ে চলে। কারও ভাঁড়ামি করে, চামচামি করে টিকে থাকা যাবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। বিচার যা নেওয়ার, বিচার ব্যবস্থাই নেবে। সামনে আরও ভয়াবহ দিন আসছে। জনগণ তাড়ালে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।’