মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি গণসঙ্গীতের লোক
নিউজ ডেস্ক:গণসঙ্গীত ও দেশীয় পপ সঙ্গীত তারকা, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ও উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর বলেছেন, ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি গণসংগীতের লোক। ৫০ বছর ধরে এই সঙ্গীতের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে রেখেছি, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, বহু আন্দোলনে জাগরণ তুলেছি, আজ ৭০ বছর বয়সে একই কাজ করে যাচ্ছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণসঙ্গীত অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে। শিল্পীর কী আছে আর ভালোবাসা ছাড়া, সবকিছু উজাড় করে হাতে একতারা।’ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মুক্ত মঞ্চে মহান বিজয় দিবস-২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী গণসঙ্গীত উৎসব ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তিনি। বক্তব্যের মধ্যেই বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের গুণী পরিচালক ও অভিনয় শিল্পী আমজাদ হোসেনের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপস্থিত সকলের সঙ্গে ৩০ সেকেন্ড নিরবতা পালন করেন ফকির আলমগীর। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘সংস্কৃতিতে রাজনীতি ছিল, রাজনীতিতেও সংস্কৃতি ছিল। যা আজ বিরল প্রায়। সংস্কৃতির কোলাহল, স্লোগান আজ হারাতে বসেছে। সেজন্যই আমার ছুটে আসা। এ সময় তিনি লালন ফকির সাঁই ও রবিন্দ্রনাথের কয়েকটি কালজয়ী গানের মুখরা গেয়ে শোনান। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গণসঙ্গীত শোষণ মুক্তির গান, সব শ্রেণীর গান। গণসঙ্গীত কী ফকির আলমগীর একা গাইবে? গণসঙ্গীত সবাইকে গাইতে হবে, জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমানে সবাই কীভাবে জনপ্রিয় হবে সেটির দিকে ঝোক। তাদেরকে বলতে চাই- গণসঙ্গীত গাইতে হবে। এই সঙ্গীতের মাধ্যমেও জনপ্রিয় হওয়া যায়। আমি যেমন, আমার স্বপ্নে কল্পনা করে করে গণসঙ্গীত পেয়েছিলাম, চর্চা করেছি, এরমাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছি।’ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম, প্রফেসর এসএম ই¯্রাফিল, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান। আলোচনা ও বক্তব্য পর্ব শেষে সাংবাদিক শাহ আলম সনির কথা ও সুরে ‘লাখো প্রাণ একই সুরে, এসো জীবনের জয়গান গাই’ শিরোনামে উৎসবের ‘থিম সং’ পরিবেশন করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পী আব্দুস সালাম তারা ও সহ শিল্পীরা। সঙ্গীত শিল্পী শান্ত আহমেদের প্রানবন্ত উপস্থাপনা ও পরিচালনায় প্রথম দিনের আয়োজনে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে জেলার ছয়টি দল। দলগুলো হচ্ছে- আলমডাঙ্গা কলা কেন্দ্র, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদ শিল্পী গোষ্ঠী, দর্শনা আনন্দধাম, চুয়াডাঙ্গা সংলাপ সাংস্কৃতি গোষ্ঠী, চিত্রা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও উদীচি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। উদ্বোধনী আলোচনা পর্ব শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। সম্মানিত অতিথি এ সময় অন্যান্য অতিথিদেরকে বই উপহার দেন।দু’দিনব্যাপী গণসঙ্গীত উৎসবের ২য় ও আজ শনিবার সমাপণী সন্ধ্যায় গণসঙ্গীত গাইবেন আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা খেলাঘর, জীবননগর নিকেতন কালচারাল একাডেমি, দামুড়হুদা শহীদ সঙ্গীত নিকেতন, দামুড়হুদা সঙ্গীতা সাংস্কৃতিক সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও শহর বাউল একাডেমি। দু’দিনের গণসঙ্গীত উৎসবে প্রতিযোগিতা ভিত্তিক ১৩টি দলের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে বিশেষ পুরষ্কার দেওয়া হবে বলে আয়োজক সূত্র জানিয়েছে।