শিরোনাম :
Logo পলাশবাড়ীতে ভূয়া সমিতির নামে পৌনে এক কোটির টাকার গাছ বিক্রি করে অর্থ লুটপাট Logo কুবিতে এক সাংবাদিক সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo পঞ্চগড়ে ভিডাব্লিউবি কার্ড বিতরণ নিয়ে লিখিত অভিযোগ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন Logo সিরাজগঞ্জে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক পথচারী নিহত, চারজন আহত Logo ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন কচুয়ায় ফসলি জমি নষ্ট করে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন, বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি  Logo চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল সমাবেশ Logo ইবিতে “ক্যারিয়ার গাইডলাইন ফর ফ্রেশার্স ২০২৫” অনুষ্ঠিত  Logo বেলকুচি আনন্দমেলায় টিকিট বাণিজ্য সময় বাড়ানোর আবেদন Logo বিনামূল্যে বাইসাইকেল পেয়ে উচ্ছ্বসিত চাঁদপুর সদরের ৫২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা  Logo বীরগঞ্জে ৪টি ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ ও ১টি ইউনিয়ন শিশু শ্রম মুক্ত ঘোষণা

প্রতিষ্ঠার পথচলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: উত্তরাঞ্চলের জ্ঞানের বাতিঘর

উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আজও তার গৌরবময় পথচলায় এগিয়ে চলেছে দৃপ্ত পদক্ষেপে। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে এই বিদ্যাপীঠ, যেটি আজ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়—বরং একটি স্বপ্ন, একটি পরিচয়, একটি ইতিহাস। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভ লগ্নে ফিরে দেখা যাক রাবির পথচলার কিছু মাইলফলক।

পাকিস্তান শাসনামলে ঢাকার বাইরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। সেই সময় রাজশাহীর বিদ্বান সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষক নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ তা বিস্তৃত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ও হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তার এক বিশাল পরিবারে।

রাবি বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রয়েছে ১২টি অনুষদ, ৫৯টি বিভাগ, এবং একাধিক ইনস্টিটিউট। গবেষণায় বরাবরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অনন্য অবদান। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, নবীন গবেষকদের অংশগ্রহণ এবং সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় রাবি রেখেছে বিশিষ্ট ভূমিকা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র একাডেমিক পরিসরে নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও অনন্য। সবুজে ঘেরা এ ক্যাম্পাসে রয়েছে সুবিশাল বটগাছ, খোলামেলা মাঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও সহায়ক। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে রাবি দেশের অন্যতম প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস, যেখানে নাট্যচর্চা, কবিতা, আবৃত্তি, বিতর্কসহ নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ড নিয়মিত আয়োজিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে রয়েছে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসী ঐতিহ্য। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে রাবির শিক্ষার্থীরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। এই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ান ইসলাম রিদয় বলেন, শুভ জন্মদিন, প্রাচ্যের ক্যামব্রিজখ্যাত আমাদের প্রাণের বিদ্যাপীঠ – রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।গৌরবের ৭২ বছরে পর্দাপণ করলো আজ।

মতিহারের সবুজ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি বৃক্ষ, প্রতিটি ইট, প্রতিটি ধূলিকণার সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো স্বপ্ন, হাসি, কান্না আর অগণিত স্মৃতি। ৭৫৩ একরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিদ্যাপীঠ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয় এ এক আবেগের নাম, অস্তিত্বের ঠিকানা, আত্মার সাথে লেপ্টে থাকা চিরন্তন ভালোবাসা।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম জ্ঞান, চিন্তা আর প্রগতির যে আলোকবর্তিকা বহন করে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তা আমাদের অহঙ্কার ও প্রেরণার উৎস। এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি করিডোর,চা এর দোকানের আড্ডা, লাইব্রেরির সিঁড়ি—সবই আমাদের জীবনের গল্পের পাতা হয়ে আছে।

আজ জন্মদিনে নতুন করে শপথ এই ভালোবাসা হবে অনন্ত, এই বন্ধন হবে অটুট। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়, তুমি বেঁচে থেকো যুগের পর যুগ, আলোকিত করো জ্ঞান-পিপাসু অসংখ্য প্রাণকে। জন্মদিনের অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা প্রাচ্যের এই অনন্য শিক্ষাকেন্দ্রকে। তোমার গর্বিত সন্তানদের পক্ষ থেকে, অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হচ্ছে নানা আয়োজনে। রয়েছে র‍্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ ও আলোকসজ্জা। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও প্রাক্তন রাবিয়ানদের অংশগ্রহণে দিনটি হয়ে উঠছে স্মরণীয় ও অর্থবহ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পলাশবাড়ীতে ভূয়া সমিতির নামে পৌনে এক কোটির টাকার গাছ বিক্রি করে অর্থ লুটপাট

প্রতিষ্ঠার পথচলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: উত্তরাঞ্চলের জ্ঞানের বাতিঘর

আপডেট সময় : ০২:০০:২৬ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আজও তার গৌরবময় পথচলায় এগিয়ে চলেছে দৃপ্ত পদক্ষেপে। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে এই বিদ্যাপীঠ, যেটি আজ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়—বরং একটি স্বপ্ন, একটি পরিচয়, একটি ইতিহাস। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভ লগ্নে ফিরে দেখা যাক রাবির পথচলার কিছু মাইলফলক।

পাকিস্তান শাসনামলে ঢাকার বাইরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। সেই সময় রাজশাহীর বিদ্বান সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষক নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ তা বিস্তৃত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ও হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তার এক বিশাল পরিবারে।

রাবি বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রয়েছে ১২টি অনুষদ, ৫৯টি বিভাগ, এবং একাধিক ইনস্টিটিউট। গবেষণায় বরাবরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অনন্য অবদান। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, নবীন গবেষকদের অংশগ্রহণ এবং সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় রাবি রেখেছে বিশিষ্ট ভূমিকা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র একাডেমিক পরিসরে নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও অনন্য। সবুজে ঘেরা এ ক্যাম্পাসে রয়েছে সুবিশাল বটগাছ, খোলামেলা মাঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও সহায়ক। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে রাবি দেশের অন্যতম প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস, যেখানে নাট্যচর্চা, কবিতা, আবৃত্তি, বিতর্কসহ নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ড নিয়মিত আয়োজিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে রয়েছে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসী ঐতিহ্য। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে রাবির শিক্ষার্থীরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। এই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ান ইসলাম রিদয় বলেন, শুভ জন্মদিন, প্রাচ্যের ক্যামব্রিজখ্যাত আমাদের প্রাণের বিদ্যাপীঠ – রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।গৌরবের ৭২ বছরে পর্দাপণ করলো আজ।

মতিহারের সবুজ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি বৃক্ষ, প্রতিটি ইট, প্রতিটি ধূলিকণার সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো স্বপ্ন, হাসি, কান্না আর অগণিত স্মৃতি। ৭৫৩ একরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিদ্যাপীঠ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয় এ এক আবেগের নাম, অস্তিত্বের ঠিকানা, আত্মার সাথে লেপ্টে থাকা চিরন্তন ভালোবাসা।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম জ্ঞান, চিন্তা আর প্রগতির যে আলোকবর্তিকা বহন করে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তা আমাদের অহঙ্কার ও প্রেরণার উৎস। এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি করিডোর,চা এর দোকানের আড্ডা, লাইব্রেরির সিঁড়ি—সবই আমাদের জীবনের গল্পের পাতা হয়ে আছে।

আজ জন্মদিনে নতুন করে শপথ এই ভালোবাসা হবে অনন্ত, এই বন্ধন হবে অটুট। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়, তুমি বেঁচে থেকো যুগের পর যুগ, আলোকিত করো জ্ঞান-পিপাসু অসংখ্য প্রাণকে। জন্মদিনের অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা প্রাচ্যের এই অনন্য শিক্ষাকেন্দ্রকে। তোমার গর্বিত সন্তানদের পক্ষ থেকে, অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হচ্ছে নানা আয়োজনে। রয়েছে র‍্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ ও আলোকসজ্জা। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও প্রাক্তন রাবিয়ানদের অংশগ্রহণে দিনটি হয়ে উঠছে স্মরণীয় ও অর্থবহ।