গত ১১ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ব্ল্যাকমেইল করে তিন লক্ষ আড়ায় হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের দুই সাংবাদিকসহ ৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় উভয় পক্ষ পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা ছিল। তাই আমি পড়া বুঝতে স্যারের চেম্বারে যায়। সেখানে সকালে যাওয়ার কথা থাকলেও স্যার একটু ব্যস্ত থাকায় আমি বিকেলে গিয়েছিলাম। স্যারের কাছে পড়া বুঝতে বুঝতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এসময় হঠাৎ কয়েকজন স্যারের চেম্বারে নক করে। পরে স্যার দরজা খুলে দেন।
রুমে ঢুকে তারা প্রথমে আমার গায়ে হাত দিলে আমার গা থেকে ওড়না পড়ে যায়। তারা আমাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয়। তখন তারা মোবাইলে ভিডিও করার কথা বললে আমি টেবিলের তলে গিয়ে লুকাই। পরে তারা বের হওয়ার জন্য জোর করলে আমি গামছা মাথায় নিয়ে বের হই। তারা প্রথম ৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্যার আমার নিরাপত্তার ভয়ে এক পর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হয় এবং চেম্বার থেকে বের হয়ে জুবেরী ভবনের দিক থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে দেয়। পরেরদিন তাদের আরো দুই লক্ষ টাকা দিতে হয়।
এসময় তিনি ক্যাম্পাসের দুজন সাংবাদিক-সহ ৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনেন। তারা হলেন কালবেলার রাবি প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন সজীব, খবরের কাগজের রাবি প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সুমন, আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, আইবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাবেক সহসমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশের) রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেন সাংবাদিক সাজ্জাদ ও সুমন। এদিন বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এ সম্মেলন করেন তারা।
সম্মেলন তারা বলেন, গত ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এক স্যারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, হেদায়েত উল্লাহ স্যার তার চেম্বারে এক ছাত্রীসহ অবস্থান করছেন। খবর পাওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর স্যারের অনুমতিক্রমে স্যারের চেম্বারের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, রুমের লাইট বন্ধ। আমরা নক করলে স্যার নিজেই দরজা খুলে দেন। তখন আমরা রুমে প্রবেশ করি এবং স্যারের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে টেবিলের নিচে ওই নারী শিক্ষার্থীকে লুকিয়ে থাকতে দেখি।
সম্মেলনে তারা আরও জানান,পরে স্যার নিজেই ছাত্রীকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে আনেন। এসময় ছাত্রীটি অনুরোধ করে বলেন, যেন ভিডিও বা সংবাদ প্রকাশ না করা হয় অন্যথায় তিনি আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে হুমকি দেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা প্রক্টর স্যারকে কল করি বিষয়টি জানানোর জন্য। পরে হেদায়েত উল্লাহ স্যারের অনুরোধে আমরা প্রক্টর স্যারকে আর ঘটনা খুলে বলিনি। এসময় ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা তখন ভিডিও প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিই।
তারা জানান, পরবর্তীকালে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারকে জানানো হয়। স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয় এবং জানানো হয়, অভিযোগকারীদের পরিচয় গোপন রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এর মধ্যেই আমাদের অজ্ঞাতে একটি সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা লক্ষ্য করি, উক্ত শিক্ষক ও ছাত্রী কর্তৃক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে—যেখানে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর গুজব ছড়ানো হয়েছে।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কেবল একটি অনৈতিক ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ ও প্রশাসনকে অবহিত করা। ঘটনার সত্যতা আড়াল করতে কেউ যেন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
টাকা লেনদেনের বিষয়ে তারা বলেন, সেখানে টাকা লেনদেনের কোনো কথাই আসেনি। আমরা মেয়ের আত্মহত্যার হুমকির কারণে ভিডিও আগে প্রকাশ করিনি।