বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। রোববার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে তাঁরা এই সতর্কবার্তা দেন।
বৈঠকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব বলে নেতারা অভিমত দেন। সংস্কার নিয়ে আলোচনায় উভয় পক্ষের নেতারা বলেছেন, যেসব বিষয়ে দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে সংস্কার করে ফেলা যায়। কারণ, সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়; এটা জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার নির্বাচন নিয়ে অহেতুক কালক্ষেপণ করলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের মধ্যে বৈঠক করে প্রয়োজনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা যেতে পারে বলে মনে করছেন এই জোটের নেতারা।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও বরকতউল্লা বুলু উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ ও সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমরা ও আমাদের জোট বহু আগে থেকেই বলছি যে বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটা নির্বাচিত সরকার দরকার। গণ-অভ্যুত্থানের পর ওই দিনই আমরা বিবৃতিতে বলেছি, পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর অনেক দিন ধরে আমরা বলে আসছি যে ডিসেম্বরের আগেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা করে নির্বাচন করা সম্ভব। সুতরাং এর জন্য নতুন করে আজকে কোনো অজুহাতের দরকার নেই।’
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিএনপির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘আমরাও মনে করি, বাংলাদেশে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে তারা নির্বাচন কমিশনকে বলে দিক তারা অক্টোবর, নভেম্বর বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারে। তারা যেহেতু স্বাধীন কমিশন, তারাই ঘোষণা করবে এবং এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করতে পারব।’
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে জানিয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করব, তখন আমাদের একটা জোট আছে, জোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই বৈঠক করব, সেখানে জোটের অন্য নেতারাও থাকবেন। আজকে এখানে এক-দুজন নেতৃবৃন্দ, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়, তাঁদের আমন্ত্রণে আমরা এখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে চা খেতে এসেছি।’
বৈঠক শেষে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, যারা নির্বাচন করে সংস্কার করবে, তারাই আসল সংস্কারের পক্ষে আর যারা নির্বাচন ছাড়া সংস্কার চায় একটা ডিক্রি জারি করে, সেটা বালুতে গাঁথুনি। শক্ত ভিত্তির ওপর করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ লাগবে, জনগণের সমর্থন লাগবে এবং সেটা করতে হলে একটা ইলেকশন অপরিহার্য। তবে নির্বাচনের নামে প্রহসন তাঁরা মেনে নেবেন না।
এ ছাড়া দেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে বৈঠকে উদ্বেগ জানান নেতারা। এই সংকট মোকাবিলার উপায় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ, এক দলের সঙ্গে অপর দলের আলোচনা, বিভিন্ন বিষয় পরস্পরের আলোচনা এবং দেখা–সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন।