শিরোনাম :
Logo জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অ্যালামনাসদের রুয়া’র নির্বাচন বর্জন Logo মুখোমুখি অবস্থানে ভারত-পাকিস্তান, ভারতীয় নৌবাহিনীর মিসাইল ধ্বংসের পরীক্ষা Logo কাশ্মীরে হামলার পর তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা পাকিস্তানের Logo কাতারে উচ্চ পর্যায়ের মধ্যাহ্নভোজে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা Logo জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ, দেওয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম Logo অন্তর্বর্তী সরকারকে অকার্যকর প্রমাণের চক্রান্ত চলছে: রিজভী Logo ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জামায়াতের ব্যানারে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেন আমির Logo পুলিশের ঊর্ধ্বতন বড় কর্মকর্তা বরখাস্ত Logo পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক Logo বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ
বিনিয়োগ ও বাণিজ্য

দেশীয় বিনিয়োগ সম্মেলন জরুরি

  • সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৩১:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১০ বার পড়া হয়েছে

||মন্‌জুরুল ইসলাম||

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংগঠনের  প্রতিনিধিদল গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ৯ দফা দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ব্যবসা করতে এসে জেলে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যবসা থেকে সম্মান নিয়ে বেরিয়ে যেতে চান তারা।

যখন দেশীয় ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারী সম্মানজনকভাবে ব্যবসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন, এর তিন মাসের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন।

বিশ্বের ৪২ দেশের ৩০৮ জন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। আলিবাবা, স্যামসাংয়ের মতো বিখ্যাত কোম্পানিগুলোও সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। স্বল্প ব্যয়ে চার দিনের এ বিশাল আয়োজনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। বিদেশিরা বিনিয়োগ করবেন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দেশ হবে সমৃদ্ধ- এমন প্রত্যাশা সব দেশপ্রেমিক মানুষেরই থাকে।

কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যে দরজা খুলে দেওয়ার উদার ঘোষণা দেওয়া হলো, সে দরজা দিয়ে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের প্রবেশাধিকার আছে কি না, তা স্পষ্ট করা হলো না।

এ দেশের শত শত বিনিয়োগকারী নিজেদের শ্রম, ঘাম, মেধা, অর্থ ব্যয় করে দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশের ভিত্তিটা তৈরি করেছেন দেশীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা। অথচ গত আট মাসে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের এক কাপ চায়ের আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি সরকার।

আধুনিক চিন্তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিদেশিদের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর আগে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যদি এক  কাপ চা পান করতেন, তাহলে জাতীয় অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার পথনির্দেশনা পেত। দেশীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার সম্মানজনক পথ খুঁজতেন না। আরও বেশি বিনিয়োগ করার সাহস পেতেন। সম্মান নিয়ে ব্যবসা করার মনোবল ফিরে পেতেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সে কারণে দেশীয় ব্যবসায়ীদের আরও বেশি নিরাপদ করতে খুব দ্রুত একটি ‘দেশীয় বিনিয়োগ’ সম্মেলন জরুরি।

বিডা যদি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি সুন্দর মেলবন্ধন তৈরি করে দিতে পারে, সবার জন্য সুযোগ যদি একই রকম হয়, তা হলেই দেশকে ২০৩৫-এর লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তা না হলে শুধু বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি গতিশীল ও স্থিতিশীল হবে না।

৭ থেকে ১০ এপ্রিল  ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজন করে। দেশের ইতিহাসে এত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সম্মেলন অতীতে কখনো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেগাপ্লুত বক্তব্যে মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থিত দেশিবিদেশি অতিথিরা। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য একজন মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার উপলব্ধির প্রতি করতালির মধ্য দিয়ে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের জাদুকরী উপস্থাপনা উপস্থিত সবাইকে সম্মোহিত করেছে। বিনিয়োগ সম্মেলন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে তিনি অসাধারণ দক্ষতায় বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। ২০২৫ সালে বিদেশি বিনিয়োগ মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ২০৩৫ সালে কেমন হবে বাংলাদেশ, সেই ধারণাচিত্র তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার মতো ভিশনারি মানুষ আশিক মাহমুদ বিশ্ববরেণ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে বিলাসী জীবন ছেড়ে দেশে এসেছেন। প্রধান উপদেষ্টার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজে তিনি পরিশ্রম করছেন।

বাংলাদেশএদিকে চার দিনের সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক বিষয়ও উঠে এসেছে। যেমন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সনদপত্র পেতে ভোগান্তি, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় এনবিআরের অসহযোগিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্নীতি। আরেকটি বড় নেতিবাচক বিষয় হলো নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এসব নেতিবাচক সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক থাকবে বলে সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন একদিকে যেমন প্রশংসিত হয়েছে, অন্যদিকে এ নিয়ে স্পষ্ট করে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। উচ্চাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ সম্মেলনের সাফল্য অর্জিত না হলে তা দুঃখজনক হবে বলে মনে করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে হাঁকডাক করে আয়োজন করা বিনিয়োগ সম্মেলনের সুবিধা বাংলাদেশ পাবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।

 

১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এবি পার্টি মনে করে গত রেজিমের দেওয়া বিভিন্ন মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ২০২৬-এর নভেম্বরে অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এসে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার রূপকল্প দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ যে কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে, তা আর থাকবে না। তাই দেশিবিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রাসঙ্গিক সব পরিসংখ্যান যাচাইবাছাই করে পুনঃপ্রকাশ জরুরি।

দেশের মোট জনসংখ্যা (প্রবাসী, কর্মক্ষম তরুণসহ), জিডিপির পরিমাণ, মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, শিক্ষা ও দক্ষতার হার, ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন দেশীয় বাজারের পরিধি, রিজার্ভ ও ঋণের পরিমাণ, বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং ইত্যাদির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রকাশ করা আবশ্যক। যাতে তারা ভেবেচিন্তে সঠিক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা, দুনিয়াজুড়ে রপ্তানির সম্ভাবনা, অবকাঠামোগত সুবিধা, প্রতিযোগিতামূলক কর-ভ্যাট আছে কি না, জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ব্যাংক ঋণ, ডলারের মজুত ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার বাস্তবভিত্তিক পথনকশা জরুরি।

চার দিনের সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, সম্মেলনে প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’-এ সরকারের মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। তবে সম্মেলনে যারা অংশীদার হিসেবে ছিলেন, তারা ব্যয় করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চার দিনের সম্মেলনে খরচ হয়েছে ৫ কোটি টাকা। দেশে বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা মোট আটটি সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ (২০২৩)। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে গতি প্রত্যাশা করা হয়, তার বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগের হার অপর্যাপ্ত। বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ মোটেও ভালো করছে না।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ যেখানে জিডিপির ১.৫ শতাংশের কম, সেখানে মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ ডিজিপির ১২ শতাংশের বেশি, আর অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক বিনিয়োগও জিডিপির ২০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩.০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। এতে এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ১৬ শতাংশ। আগামী জুনে ২০২৪ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে।

দেশটা স্বাধীন হওয়ার পর এ ভূখণ্ড ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত মাটির অবকাঠামো। শিল্পকারখানা সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তাঘাট, ব্রিজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় ভয়াবহ দুর্ভোগে ছিল নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ। এ পূর্ব পাকিস্তানে উল্লেখ করার মতো কোনো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি ছিলেন না। বিগত ৫৪ বছরে দেশে হাজার হাজার শিল্পকারখানা তৈরি হয়েছে। ২২ পরিবারের জায়গায় শত শত শিল্পপতি, ব্যবসায়ী পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে।

বেসরকারি বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ীদের শ্রমে ঘামে নিরন্তর প্রচেষ্টায় দেশটাকে গড়ে তোলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। সারা দেশে বেসরকারি পর্যায়ে যে পরিমাণ ছোটবড় শিল্পকারখানা আছে, তার অর্ধেকের তালিকাও সরকারি খাতায় নেই। বহু ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। যেমন পুরান ঢাকার ধোলাইপাড়, কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরায় যে অসংখ্য ছোট ছোট শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, এর কোনো হিসাব সরকারের কোনো খাতায় নেই।

এ ছাড়া এমন কোনো পণ্য নেই যা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগকারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা আসুন, শুধু বাংলাদেশ বা আপনার ব্যবসার পরিবর্তনের জন্য নয়, বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে আসুন।’ যে বিনিয়োগ পরিবেশের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশিদের বাংলাদেশে আহ্বান করেছেন, সেই ভিত্তিটি এ দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি বিনিয়োগকারীরা তৈরি করেছেন।

দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হতাশায় রেখে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পথ মসৃণ হবে না। সে কারণেই খুব দ্রুত সময়ে ‘দেশীয় বিনিয়োগ সম্মেলন’ আয়োজন করা দরকার। দেশের ব্যবসায়ীরা কী কী সমস্যায় আছেন, তা শুনে এক ছাতার নিচে বসে সমাধান দিতে হবে। তা না হলে শুধু বিদেশিদের আহ্বান করলে হতাশা বাড়বে এবং ড. ইউনূসের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

লেখক : মন্‌জুরুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন 

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অ্যালামনাসদের রুয়া’র নির্বাচন বর্জন

বিনিয়োগ ও বাণিজ্য

দেশীয় বিনিয়োগ সম্মেলন জরুরি

আপডেট সময় : ০১:৩১:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

||মন্‌জুরুল ইসলাম||

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংগঠনের  প্রতিনিধিদল গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ৯ দফা দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ব্যবসা করতে এসে জেলে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যবসা থেকে সম্মান নিয়ে বেরিয়ে যেতে চান তারা।

যখন দেশীয় ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারী সম্মানজনকভাবে ব্যবসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন, এর তিন মাসের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন।

বিশ্বের ৪২ দেশের ৩০৮ জন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। আলিবাবা, স্যামসাংয়ের মতো বিখ্যাত কোম্পানিগুলোও সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। স্বল্প ব্যয়ে চার দিনের এ বিশাল আয়োজনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। বিদেশিরা বিনিয়োগ করবেন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দেশ হবে সমৃদ্ধ- এমন প্রত্যাশা সব দেশপ্রেমিক মানুষেরই থাকে।

কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যে দরজা খুলে দেওয়ার উদার ঘোষণা দেওয়া হলো, সে দরজা দিয়ে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের প্রবেশাধিকার আছে কি না, তা স্পষ্ট করা হলো না।

এ দেশের শত শত বিনিয়োগকারী নিজেদের শ্রম, ঘাম, মেধা, অর্থ ব্যয় করে দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশের ভিত্তিটা তৈরি করেছেন দেশীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা। অথচ গত আট মাসে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের এক কাপ চায়ের আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি সরকার।

আধুনিক চিন্তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিদেশিদের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর আগে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যদি এক  কাপ চা পান করতেন, তাহলে জাতীয় অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার পথনির্দেশনা পেত। দেশীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার সম্মানজনক পথ খুঁজতেন না। আরও বেশি বিনিয়োগ করার সাহস পেতেন। সম্মান নিয়ে ব্যবসা করার মনোবল ফিরে পেতেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সে কারণে দেশীয় ব্যবসায়ীদের আরও বেশি নিরাপদ করতে খুব দ্রুত একটি ‘দেশীয় বিনিয়োগ’ সম্মেলন জরুরি।

বিডা যদি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি সুন্দর মেলবন্ধন তৈরি করে দিতে পারে, সবার জন্য সুযোগ যদি একই রকম হয়, তা হলেই দেশকে ২০৩৫-এর লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তা না হলে শুধু বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি গতিশীল ও স্থিতিশীল হবে না।

৭ থেকে ১০ এপ্রিল  ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজন করে। দেশের ইতিহাসে এত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সম্মেলন অতীতে কখনো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেগাপ্লুত বক্তব্যে মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থিত দেশিবিদেশি অতিথিরা। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য একজন মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার উপলব্ধির প্রতি করতালির মধ্য দিয়ে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের জাদুকরী উপস্থাপনা উপস্থিত সবাইকে সম্মোহিত করেছে। বিনিয়োগ সম্মেলন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে তিনি অসাধারণ দক্ষতায় বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। ২০২৫ সালে বিদেশি বিনিয়োগ মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ২০৩৫ সালে কেমন হবে বাংলাদেশ, সেই ধারণাচিত্র তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার মতো ভিশনারি মানুষ আশিক মাহমুদ বিশ্ববরেণ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে বিলাসী জীবন ছেড়ে দেশে এসেছেন। প্রধান উপদেষ্টার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজে তিনি পরিশ্রম করছেন।

বাংলাদেশএদিকে চার দিনের সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক বিষয়ও উঠে এসেছে। যেমন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সনদপত্র পেতে ভোগান্তি, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় এনবিআরের অসহযোগিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্নীতি। আরেকটি বড় নেতিবাচক বিষয় হলো নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এসব নেতিবাচক সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক থাকবে বলে সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন একদিকে যেমন প্রশংসিত হয়েছে, অন্যদিকে এ নিয়ে স্পষ্ট করে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। উচ্চাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ সম্মেলনের সাফল্য অর্জিত না হলে তা দুঃখজনক হবে বলে মনে করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে হাঁকডাক করে আয়োজন করা বিনিয়োগ সম্মেলনের সুবিধা বাংলাদেশ পাবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।

 

১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এবি পার্টি মনে করে গত রেজিমের দেওয়া বিভিন্ন মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ২০২৬-এর নভেম্বরে অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এসে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার রূপকল্প দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ যে কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে, তা আর থাকবে না। তাই দেশিবিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রাসঙ্গিক সব পরিসংখ্যান যাচাইবাছাই করে পুনঃপ্রকাশ জরুরি।

দেশের মোট জনসংখ্যা (প্রবাসী, কর্মক্ষম তরুণসহ), জিডিপির পরিমাণ, মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, শিক্ষা ও দক্ষতার হার, ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন দেশীয় বাজারের পরিধি, রিজার্ভ ও ঋণের পরিমাণ, বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং ইত্যাদির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রকাশ করা আবশ্যক। যাতে তারা ভেবেচিন্তে সঠিক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা, দুনিয়াজুড়ে রপ্তানির সম্ভাবনা, অবকাঠামোগত সুবিধা, প্রতিযোগিতামূলক কর-ভ্যাট আছে কি না, জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ব্যাংক ঋণ, ডলারের মজুত ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার বাস্তবভিত্তিক পথনকশা জরুরি।

চার দিনের সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, সম্মেলনে প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’-এ সরকারের মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। তবে সম্মেলনে যারা অংশীদার হিসেবে ছিলেন, তারা ব্যয় করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চার দিনের সম্মেলনে খরচ হয়েছে ৫ কোটি টাকা। দেশে বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা মোট আটটি সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ (২০২৩)। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে গতি প্রত্যাশা করা হয়, তার বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগের হার অপর্যাপ্ত। বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ মোটেও ভালো করছে না।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ যেখানে জিডিপির ১.৫ শতাংশের কম, সেখানে মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ ডিজিপির ১২ শতাংশের বেশি, আর অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক বিনিয়োগও জিডিপির ২০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩.০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। এতে এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ১৬ শতাংশ। আগামী জুনে ২০২৪ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে।

দেশটা স্বাধীন হওয়ার পর এ ভূখণ্ড ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত মাটির অবকাঠামো। শিল্পকারখানা সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তাঘাট, ব্রিজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় ভয়াবহ দুর্ভোগে ছিল নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ। এ পূর্ব পাকিস্তানে উল্লেখ করার মতো কোনো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি ছিলেন না। বিগত ৫৪ বছরে দেশে হাজার হাজার শিল্পকারখানা তৈরি হয়েছে। ২২ পরিবারের জায়গায় শত শত শিল্পপতি, ব্যবসায়ী পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে।

বেসরকারি বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ীদের শ্রমে ঘামে নিরন্তর প্রচেষ্টায় দেশটাকে গড়ে তোলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। সারা দেশে বেসরকারি পর্যায়ে যে পরিমাণ ছোটবড় শিল্পকারখানা আছে, তার অর্ধেকের তালিকাও সরকারি খাতায় নেই। বহু ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। যেমন পুরান ঢাকার ধোলাইপাড়, কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরায় যে অসংখ্য ছোট ছোট শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, এর কোনো হিসাব সরকারের কোনো খাতায় নেই।

এ ছাড়া এমন কোনো পণ্য নেই যা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগকারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা আসুন, শুধু বাংলাদেশ বা আপনার ব্যবসার পরিবর্তনের জন্য নয়, বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে আসুন।’ যে বিনিয়োগ পরিবেশের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশিদের বাংলাদেশে আহ্বান করেছেন, সেই ভিত্তিটি এ দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি বিনিয়োগকারীরা তৈরি করেছেন।

দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হতাশায় রেখে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পথ মসৃণ হবে না। সে কারণেই খুব দ্রুত সময়ে ‘দেশীয় বিনিয়োগ সম্মেলন’ আয়োজন করা দরকার। দেশের ব্যবসায়ীরা কী কী সমস্যায় আছেন, তা শুনে এক ছাতার নিচে বসে সমাধান দিতে হবে। তা না হলে শুধু বিদেশিদের আহ্বান করলে হতাশা বাড়বে এবং ড. ইউনূসের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

লেখক : মন্‌জুরুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন