‘আন্দোলনে শহীদদের লাশ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে’

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৪:০০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭২০ বার পড়া হয়েছে

জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের লাশ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। রোববার (৬ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব অভিযোগ করেন। এ দিন বিকাল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বিবির বাগিচা এলাকার নূর কমিউনিটি সেন্টারে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘একটি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে তাদের স্বজনরা জীবন দিয়েছেন। দেশকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করতে যে আত্মত্যাগ তারা করেছেন তা যেন বিফলে না যায়। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে তারা আহ্বান জানান।

এ সময় দোষীদের বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। পাশের দেশে অনেক অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তারা বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়নি। শহীদদের নিয়ে রাজনীতি এবং লাশ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সভায় বক্তব্য রাখেন, শহীদ পান্থের বাবা জাহাঙ্গীর, শহীদ আহানাফ আবিরের বোন সাইদা, শহীদ হান্নানের স্ত্রী কমলা আক্তার, শহীদ মিরাজের বাবা। আহতদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জুবায়ের, মো. জিহাত হোসেন, মুয়াজ এবং মো. মুজাহিদুল ইসলাম।

বক্তব্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, বীর শহীদদের পাশে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসরের নাম দেখতে চাই না। যে কারণে কড়াভাবে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান না। বেসরকারি ফাউন্ডেশন হওয়ায় সীমাবদ্ধতা নিয়েই কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। তিনি অভিযোগ করেন পূর্ববর্তী সরকারের অনেক দোসর এখনো আমলাদের মধ্যে রয়ে গেছেন, যাদের অসহযোগিতার কারণে কাজ ধীর গতিতে আগাচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ঢাকাবাসী যখন হতাশ হয়ে গিয়েছিল, তখন গণঅভ্যুত্থানে আশার আলো দেখিয়েছিল যাত্রাবাড়ীবাসী। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের দুই মাসের মধ্যেই জাতির মাঝে নানা ধরনের বিভাজন দেখা দিয়েছে। শহীদ পরিবারদের বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। এই অবস্থার সুরাহা করার দাবি জানান তিনি।

সামান্তা শারমিন বলেন, নাগরিকদের এই দুর্ভোগ ঘোচানোর জন্যই গঠন করা হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তা এ দেশের জনগণই ঠিক করবে। আর জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে এই আলোচনায় সবাইকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যাত্রাবাড়ীর শ্রমিক, জনতা, ছাত্ররা মাঠে নেমেছিল বলেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে। আর নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার জন্যই প্রাণ দিয়েছে ছাত্র-জনতা। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব সকল দোষীর বিচারের ব্যবস্থা করা। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা সংস্কার প্রয়োজন, তা করার উদ্যোগ নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির যে এক দফা দাবি তা এখনো পূরণ হয়নি। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত এখনো চলছে। এসব চক্রান্ত রুখে দিতে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ সময় তিনি অতিদ্রুত আহতদের সুচিকিৎসা ও শহীদদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। যদি সরকার তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সকলকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে সরকারকে সে কাজ করতে বাধ্য করা হবে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, যাদের হাতে রক্ত, তারা এখনো কিভাবে সচিবালয়ে অবস্থান করে? তারা এখনো বিভিন্ন এলাকায় জনগণের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নাগরিকদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি পুরো দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে, সেই কাজে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ঢাকা রাইজিং কর্মসূচির মাধ্যমে পুরো ঢাকাকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে। আহতরা যোগাযোগ করলে তাদের জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাথে সংযোগ স্থাপনের কাজ করবে নাগরিক কমিটি। সকলকে সাথে নিয়ে, কোনো রাজনৈতিক দলকে শহীদদের নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ না দিয়ে, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে, শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন করার কাজে নিয়োজিত থাকবে নাগরিক কমিটি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মো. নিজাম উদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এস এম শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আলামিন, মো. আতাউল্লাহ ও মশিউর রহমান।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

‘আন্দোলনে শহীদদের লাশ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে’

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:০০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের লাশ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। রোববার (৬ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব অভিযোগ করেন। এ দিন বিকাল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বিবির বাগিচা এলাকার নূর কমিউনিটি সেন্টারে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘একটি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে তাদের স্বজনরা জীবন দিয়েছেন। দেশকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করতে যে আত্মত্যাগ তারা করেছেন তা যেন বিফলে না যায়। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে তারা আহ্বান জানান।

এ সময় দোষীদের বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। পাশের দেশে অনেক অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তারা বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়নি। শহীদদের নিয়ে রাজনীতি এবং লাশ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সভায় বক্তব্য রাখেন, শহীদ পান্থের বাবা জাহাঙ্গীর, শহীদ আহানাফ আবিরের বোন সাইদা, শহীদ হান্নানের স্ত্রী কমলা আক্তার, শহীদ মিরাজের বাবা। আহতদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জুবায়ের, মো. জিহাত হোসেন, মুয়াজ এবং মো. মুজাহিদুল ইসলাম।

বক্তব্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, বীর শহীদদের পাশে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসরের নাম দেখতে চাই না। যে কারণে কড়াভাবে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান না। বেসরকারি ফাউন্ডেশন হওয়ায় সীমাবদ্ধতা নিয়েই কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। তিনি অভিযোগ করেন পূর্ববর্তী সরকারের অনেক দোসর এখনো আমলাদের মধ্যে রয়ে গেছেন, যাদের অসহযোগিতার কারণে কাজ ধীর গতিতে আগাচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ঢাকাবাসী যখন হতাশ হয়ে গিয়েছিল, তখন গণঅভ্যুত্থানে আশার আলো দেখিয়েছিল যাত্রাবাড়ীবাসী। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের দুই মাসের মধ্যেই জাতির মাঝে নানা ধরনের বিভাজন দেখা দিয়েছে। শহীদ পরিবারদের বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। এই অবস্থার সুরাহা করার দাবি জানান তিনি।

সামান্তা শারমিন বলেন, নাগরিকদের এই দুর্ভোগ ঘোচানোর জন্যই গঠন করা হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তা এ দেশের জনগণই ঠিক করবে। আর জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে এই আলোচনায় সবাইকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যাত্রাবাড়ীর শ্রমিক, জনতা, ছাত্ররা মাঠে নেমেছিল বলেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে। আর নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার জন্যই প্রাণ দিয়েছে ছাত্র-জনতা। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব সকল দোষীর বিচারের ব্যবস্থা করা। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা সংস্কার প্রয়োজন, তা করার উদ্যোগ নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির যে এক দফা দাবি তা এখনো পূরণ হয়নি। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত এখনো চলছে। এসব চক্রান্ত রুখে দিতে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ সময় তিনি অতিদ্রুত আহতদের সুচিকিৎসা ও শহীদদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। যদি সরকার তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সকলকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে সরকারকে সে কাজ করতে বাধ্য করা হবে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, যাদের হাতে রক্ত, তারা এখনো কিভাবে সচিবালয়ে অবস্থান করে? তারা এখনো বিভিন্ন এলাকায় জনগণের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নাগরিকদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি পুরো দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে, সেই কাজে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ঢাকা রাইজিং কর্মসূচির মাধ্যমে পুরো ঢাকাকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে। আহতরা যোগাযোগ করলে তাদের জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাথে সংযোগ স্থাপনের কাজ করবে নাগরিক কমিটি। সকলকে সাথে নিয়ে, কোনো রাজনৈতিক দলকে শহীদদের নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ না দিয়ে, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে, শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন করার কাজে নিয়োজিত থাকবে নাগরিক কমিটি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মো. নিজাম উদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এস এম শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আলামিন, মো. আতাউল্লাহ ও মশিউর রহমান।