গ্রাহকদের ১৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও!

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ১০:২৮:১৯ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  • ৭৩১ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:মেহেরপুরে ঋণ দেওয়ার নাম করে সদস্যদের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। দুই শতাধিক সদস্যকে ঋণ দেওয়ার নাম করে অনুমানিক ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ সদস্যদের। প্রতিষ্ঠানটির প্যাডে ঋণ প্রস্তাব করা সদস্যদের তালিকা দেওয়া রয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে সিটি কমপ্লেক্স, সার্কুলার রোড, দিলকুশা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর-২২০। তালিকাতে কোন সদস্যকে ৫০ হাজার আবার কোন সদস্যকে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক লাখ টাকার সদস্যর নিকট থেকে ১০ হাজার এবং ৫০ হাজার টাকার ঋণ নেওয়া সদস্যর নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মাস খানেক আগে মেহেরপুর শহরের মিয়াপাড়ার আবু সাইদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের’ অফিস শুরু করে কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম। অফিস ভাড়া নেওয়ার পর থেকে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে তার নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়ে ঋণ দেওয়ার নাম করে প্রথমে তারা সদস্য সংগ্রহ করেন। সদস্যদের সঞ্চয় বাবদ ১৫০টাকা, সঞ্চয় বই বাবদ ৫০ টাকা করে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ঋণ দেওয়ার নাম করে ১০ শতাংশ জামানত হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করেন। গত রবিবার ও গতকাল সোমবার ঋণের টাকা দেওয়া হবে এমন তথ্য জানানো হয় গ্রাহকদের। সে তথ্য অনুয়ায়ী গ্রাহকরা রবিবার সকালে অফিসে যান ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখেন তালা বদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার আগেই ওই এনজিও কর্মকর্তারা সেখান থেকে চলে গেছেন। অফিসের কাউকে না পেয়ে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিক এ ঘটনার পর পরই বাড়ির মালিক আবু সাইদও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের রাজুর স্ত্রী মারিয়ার নিকট থেকে ৫ হাজার, সাবান আলীর স্ত্রী আরজিনার নিকট থেকে ১০ হাজার, রাসেদুলের স্ত্রী সাবানার কাছ থেকে ১০ হাজার, ইনসান আলীর স্ত্রী রহিমার নিকট থেকে ৫ হাজার, দোয়াত আলীর স্ত্রী তানজিলার কাছ থেকে ৫ হাজার, হেরেন আলীর স্ত্রী তানজিলার কাছ থেকে ৪ হাজার, ইয়ারুল ইসলামের স্ত্রী জীবননারার কাছ থেকে ৫ হাজার, শাকিল আহাম্মেদের স্ত্রী পলির কাছে থেকে ৫ হাজার, আহসান আলীর স্ত্রী চাইনার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাসহ সদর উপজেলা আশরাফপুর, ভবানীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক সদস্য তৈরি করে তাদের কাছে ঋণ দেওয়ার নাম করে জামানত হিসেবে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে এনজিওটি।
ভুক্তভোগিরা জানান, সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা এবং ১ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হবে এই বলে গ্রামে গ্রামে মহিলাদের মাঝে প্রচার চালানো হয়। মাত্র মাস খানেকের মধ্যেই গ্রামের সাধারণ মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে সদস্য তৈরি করে তাদের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এনজিও প্রতিষ্ঠানের কাউকে না পেয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের’ কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী আশরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ধরণের একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা এনজিওটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মেহেরপুর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিন জানান, ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের ওই এনজিওটির রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে। তবে সমাজ সেবা কোনও এনজিওকে ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেয় না।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রাহকদের ১৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও!

আপডেট সময় : ১০:২৮:১৯ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিউজ ডেস্ক:মেহেরপুরে ঋণ দেওয়ার নাম করে সদস্যদের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। দুই শতাধিক সদস্যকে ঋণ দেওয়ার নাম করে অনুমানিক ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ সদস্যদের। প্রতিষ্ঠানটির প্যাডে ঋণ প্রস্তাব করা সদস্যদের তালিকা দেওয়া রয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে সিটি কমপ্লেক্স, সার্কুলার রোড, দিলকুশা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর-২২০। তালিকাতে কোন সদস্যকে ৫০ হাজার আবার কোন সদস্যকে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক লাখ টাকার সদস্যর নিকট থেকে ১০ হাজার এবং ৫০ হাজার টাকার ঋণ নেওয়া সদস্যর নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মাস খানেক আগে মেহেরপুর শহরের মিয়াপাড়ার আবু সাইদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের’ অফিস শুরু করে কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম। অফিস ভাড়া নেওয়ার পর থেকে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে তার নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়ে ঋণ দেওয়ার নাম করে প্রথমে তারা সদস্য সংগ্রহ করেন। সদস্যদের সঞ্চয় বাবদ ১৫০টাকা, সঞ্চয় বই বাবদ ৫০ টাকা করে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ঋণ দেওয়ার নাম করে ১০ শতাংশ জামানত হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করেন। গত রবিবার ও গতকাল সোমবার ঋণের টাকা দেওয়া হবে এমন তথ্য জানানো হয় গ্রাহকদের। সে তথ্য অনুয়ায়ী গ্রাহকরা রবিবার সকালে অফিসে যান ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখেন তালা বদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার আগেই ওই এনজিও কর্মকর্তারা সেখান থেকে চলে গেছেন। অফিসের কাউকে না পেয়ে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিক এ ঘটনার পর পরই বাড়ির মালিক আবু সাইদও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের রাজুর স্ত্রী মারিয়ার নিকট থেকে ৫ হাজার, সাবান আলীর স্ত্রী আরজিনার নিকট থেকে ১০ হাজার, রাসেদুলের স্ত্রী সাবানার কাছ থেকে ১০ হাজার, ইনসান আলীর স্ত্রী রহিমার নিকট থেকে ৫ হাজার, দোয়াত আলীর স্ত্রী তানজিলার কাছ থেকে ৫ হাজার, হেরেন আলীর স্ত্রী তানজিলার কাছ থেকে ৪ হাজার, ইয়ারুল ইসলামের স্ত্রী জীবননারার কাছ থেকে ৫ হাজার, শাকিল আহাম্মেদের স্ত্রী পলির কাছে থেকে ৫ হাজার, আহসান আলীর স্ত্রী চাইনার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাসহ সদর উপজেলা আশরাফপুর, ভবানীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক সদস্য তৈরি করে তাদের কাছে ঋণ দেওয়ার নাম করে জামানত হিসেবে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে এনজিওটি।
ভুক্তভোগিরা জানান, সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা এবং ১ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হবে এই বলে গ্রামে গ্রামে মহিলাদের মাঝে প্রচার চালানো হয়। মাত্র মাস খানেকের মধ্যেই গ্রামের সাধারণ মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে সদস্য তৈরি করে তাদের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এনজিও প্রতিষ্ঠানের কাউকে না পেয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের’ কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী আশরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ধরণের একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা এনজিওটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মেহেরপুর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিন জানান, ‘সেবা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের ওই এনজিওটির রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে। তবে সমাজ সেবা কোনও এনজিওকে ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেয় না।