৫ জনকে আসামি করে মামলা; তদন্তে আসছে ঢাকার আইটি বিশেষজ্ঞ দল
নিউজ ডেস্ক: মেহেরপুর অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাত ঘটনায় অভিযুক্ত অত্র ব্যাংকের ক্লিয়ারিং এর দ্বায়িত্বে থাকা ক্যাশ অফিসার মাহামুদুল করিম শিমুলকে আদালতে প্রেরণ করেছে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ। বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় কত টাকা আত্মসাত হয়েছে তার পরিমাণ নির্ণয় করতে ইতোমধ্যে দুই সদস্যের আইটি বিশেষজ্ঞ একটি তদন্ত দল তাদের অনুসন্ধ্যান অব্যাহত রাখাসহ ঢাকা থেকে আসছে তিন সদস্যের আইটি বিশেষজ্ঞ। এছাড়া প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাত এর মামলাটি পুঙ্খানুরুপে তদন্ত করবে বাংলাদেশ দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক। এর আগে মেহেরপুর অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার মেহেদী মাসুদ বাদী হয়ে আটক মাহামুদুল করিম শিমুলসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা দায়ের করলে বিষয়টি সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। এছাড়া আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করে শিমুল। তবে এ মামলায় বাকি আসামীরা রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। জানা যায়, মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মাহমুদুল করিম শিমুল অভিনব কায়দায় অগ্রণী ব্যাংকের টাকা আত্মসাত করে কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে বানিয়েছেন অঢেল সম্পত্তি। তার টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে আলোচনায় আশে বিষয়টি। প্রাথমিক তদন্তে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সত্যতা পেলে অগ্রণী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার মেহেদী মাসুদ বাদী হয়ে মাহামুদুল করিমসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের হলে ওই দিনই রাত ১০টার পর মাহামুদল করিম শিমুলকে মেহেরপুর ব্রাঞ্চ থেকে আটক করে সদর থানা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পর্যায়ক্রমে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করে শিমুল। গতকাল আটককৃত আসামীকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অপর ৪ আসামী মাহমুদুল করিমের স্ত্রী জেসমিন করিম, ভাই সামিউল করিম, বোন নুরুন নাহার, আত্মীয় বাসার আলী এরা সকলে রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। এদিকে, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ব্যাংকের ভিতর জানাজানি হওয়ার পরপরই ব্যাংকের বিভাগীয় সার্কেল অফিস খুলনা থেকে দুই সদস্যে’র আইটি বিশেষজ্ঞরা মেহেরপুর শাখায় তদন্ত চালাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখছেন। ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যান্ত টেকনিক্যালী এই টাকা আত্মসাত করেছেন মাহমুদুল করিম। টেকনোলজি সম্পর্কে অত্যাধিক জ্ঞান থাকার ফলে এ টাকা সরাতে পেরেছেন তিনি। যা কোন সাধারণ ব্যাংকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আরো বড় অংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে। এছাড়াও প্রকৃত টাকার পরিমাণ নির্ণয় করতে টাকা হেড অফিস থেকে আসছে তিন সদস্যের উচ্চস্তরের আইটি বিশেষজ্ঞের একটি দল। অগ্রণী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মেহেদী মাসুদ বলেন, গত সপ্তাহে প্রধান কার্যালয় থেকে আড়াই কোটি টাকার একটি ট্রান্সজেকশনের খোঁজ পাওয়া না গেলে বিষয়টি তাকে জানানো হয়। পরে ক্যাশিয়ার মাহমুদুল করিম শিমুলকে বামন্দি থেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি বের হয়ে আসে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ইতিমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে জিএম সিরাজুল ইসলাম ও শেখ আব্দুল হালিম নামের দুইজন আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেরপুর শাখায় এসে তদন্ত চলমান রেখেছেন। আজ বুধবার প্রধান কার্যালয় থেকে আরো তিনজন আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেরপুর শাখায় তদন্ত করতে আসছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক মেহেদী মাসুদ। মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে অগ্রণী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার ব্যবস্থাপক মেহেদী মাসুদ তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ৪০৯/৪১৮/৩৪ ধারায় মেহেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিন রাতে মামলার প্রধান আসামি ক্যাশিয়ার মাহমুদুল করিমকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকারসহ তার কাছ থেকে অনেক তথ্য বের হয়ে এসেছে। তবে মামলার বাকি আসামিদে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, অগ্রণী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতকারী মাহমুদুল করীম শিমুল ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল মেহেরপুর শাখার ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। মাঝে এক বছরের জন্য চুয়াডাঙ্গা আছমানখালি ব্রাঞ্চে কাজ করেন। আবার ফিরে আসেন মেহেরপুরে। পরে ২০১৭ সালের ১৫ মে বদলি হয়ে বামন্দি শাখায় যোগদান করেন। ক্যাশ অফিসার হলেও ক্লিয়ারিং এর কাজ করেন তিনি। তবে দীর্ঘ সময় একই ব্যাংকে কাজ করাসহ টেকনোলজি জ্ঞান বেশি থাকায় টাকা আত্মসাতের তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়। মেহেরপুর শাখায় কর্মরত অবস্থায় ২০১৫, ১৬ ও ১৭ সালে ব্যাংকের ইন্টারনাল একাউন্ট থেকে অভিনব কায়দায় ডেবিট করে তার স্ত্রী জেসমিন করিম, ভাই সামিউল করিম, বোন নুরুন নাহার ও নিকট আত্মীয় বাসার আলীর হিসেবে (অ্যাকাউন্টে) ওই টাকা স্থানান্তর করে পরে নিজে তুলে নিতেন তিনি। আর এই টাকা দিয়ে নামে বেনামে বানিয়েছেন সম্পদের পাহাড়। আর এই টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে থলের বিড়াল। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায় প্রাথমিক ভাবে দেড় কোটি টাকা ফেরত দিতে চায় সে। শেষ পর্যন্ত এ ঘটনায় ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বাদী হয়ে গত সোমবার মাহামুদুল করিমকে প্রধান করে মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর তাকে আটক করে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ। পরে গতকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।