স্মার্ট কার্ড প্রত্যাশীদের এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি : ভোগান্তি!
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:চুয়াডাঙ্গায় বহু প্রতীক্ষিত উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে বিতরণ শুরু হয়েছে। অনেকেই কার্ড নিতে এসে না পেয়ে ফিরে গেছেন। আবার সঠিক প্রচারণা না থাকায় সকালে ব্যাপক ভীড় থাকলেও দুপুরের পর তা ফাঁকা হয়ে যায়। প্রথম দিনে চুয়াডাঙ্গা সদরের ১নং ওয়ার্ডের তিনটি মহল্লায় ২৪শ’ কার্ড বিতরণের লক্ষ থাকলেও বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৭শ’। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ এলাকার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এই স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম।জানা যায়, ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র করে, পরিচয় দিন গর্ব ভরে’ স্লোগানে গত বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চুয়াডাঙ্গা’র সদর উপজেলার স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। সে সময় হুইপ মহোদয় আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের স্মার্ট কার্ড গ্রহন করার পর গতকাল সকাল থেকে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ শুরু করা হয়। আর এসময় স্মার্ট কার্ড বিতরণের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি চোখে পড়ে। গতকাল কেদারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১নং ওয়ার্ডের মালোপাড়া, কেদারগঞ্জ ও ভেমরুল্লাহ এই তিনটি মহল্লার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ২ হাজার ৪শ’ কার্ড বিতরণের লক্ষ নিয়ে দিন শুরু করে জেলা নির্বাচন অফিস। দিনশেষে বিকালে তা ১ হাজার ৭শ’ পর্যন্ত বিতরণ করা সম্ভব হয়। এসময় সঠিক লাইন না করায় স্কুলের বারান্দায় গাদাগাদি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে কার্ড নিতে আসা পুরুষ ভোটারদের। স্মার্ট কার্ড নিতে আসা মহিলাদেরও স্কুলের একটি কক্ষে দীর্ঘ সময় ঠাসাঠাসি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া কিছু কিছু কার্ড প্রত্যাশীদের বাড়ির ঠিকানার গড়মিলসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে কার্ড না পেয়ে ফিরে যেতে হয় তাদের। সকালে স্মার্ট কার্ড প্রত্যাশীদের ভিড় বেশি থাকলেও দুপুরের পর তা কমতে থাকে। এছাড়াও স্মার্ট কার্ড বিতরণ বিষয়ে যথাযথ প্রচারণার অভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেক সাধারণ ভোটার স্মার্ট কার্ড বিতরণের সময় ও স্থান সম্পর্কে জানতে পারেননি। না জানার কারনে নির্দিষ্টদিন স্মার্ট কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলেন এসকল ভোটাররা। ফলে এসকল ভোটরদের পূনরায় নির্বাচন অফিস থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
এদিকে, নিজ বাড়ির ঠিকানা জটিলতার কারনে স্মার্ট কার্ড না পাওয়া মালোপাড়ার একজন সাধারণ ভোটার তার ভোগান্তির বিষয়ে বলেন, লোক মারফত জানতে পেরেছেন আজ (গতকাল) তার এলাকার ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্ট কার্ড আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে বুট থেকে নিতে হবে। নির্দিষ্টদিন নিতে না পারলে পরে আবার নির্বাচন অফিস থেকে নিতে হবে। সে হিসেবে তিনি সকাল সকাল চলে আসেন কার্ড নিতে। দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থকার পর কার্ড পাননি তিনি। এসময় জানতে পারেন তার বাড়ির ঠিকানা ভুল আছে। আবার দীর্ঘক্ষণ শ্রেণিকক্ষে দাড়িয়ে থাকার পর এক নারী ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্ট কার্ড হাতে নিয়ে বলেন, সকালে কার্ড নিতে এসেছি। দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকাসহ দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ প্রতিচ্ছবি দিয়ে অনেক ভোগান্তির পর কার্ডটি পেলাম। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ প্রতিচ্ছবি দেওয়া, পুরাতনটি জমা দেওয়া, বিতরণে জনবলের সংকট, সঠিক লাইন না করা, স্বল্প জায়গার মধ্যে অনেক মানুষ একসাথে দাড় করিয়ে রাখার পর অন্যস্থান থেকে কার্ড এনে ভোটরদের সরবরাহ করাসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তবে প্রতিটা সেক্টর আলাদা করে সর্বশেষে ভোটরদের স্মার্ট কার্ড দিয়ে ছেড়ে দিলে এতো ভোগান্তি হবে না বলে সচেতন মহল জানায়।
জেলা নির্বাচন অফিসার রাজু আহম্মেদ সকালে উপস্থিত থেকে এই তিন মহল্লার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু করেন। পরে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার কামরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারের সহায়তায় দিনভর এই স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসার কামরুলের সাথে মুঠোফনে কথা হলে তিনি জানান, ১নং ওয়ার্ডের তিনটি মহল্লায় ২হাজার ৪শ কার্ড বিতরণের লক্ষ নিয়ে বিতরণ শুরু করা হয়। পরে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্বশেষ ১ হাজার ৭শ কার্ড বিতরণ করা সম্বভ হয়। আজ শুক্রবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বুজরুকগড়গড়ি ও সিএন্ডবি এলাকার পুরুষ ও নারীদের স্মার্টকার্ড জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে।