মঙ্গলবার | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাস করা বসতবাড়ি ভোগদখল জমিজমা নিমিষেই বেদখল Logo আন্তর্জাতিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ‘এডুরম’ উদ্বোধন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে Logo পলাশবাড়ীতে বিএনপির আনন্দ মিছিল Logo মাদকবিরোধী ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে” — অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ এরশাদ উদ্দিন Logo খুলনায় এনসিপি নেতাকে গুলি: সাতক্ষীরা সীমান্ত সিল, বিজিবির ৫৭ চেকপোস্ট ও ৮৭টি অতিরিক্ত টহল Logo কুয়াশার চাদরে মোড়া ডিসেম্বরের ক্যাম্পাস Logo যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জেলেনস্কির Logo নির্বাচনে আস্থার পরিবেশ তৈরিতে অপারেশন শুরু করবে যৌথবাহিনী: ইসি সানাউল্লাহ Logo রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে Logo কুমিল্লায় আইদি পরিবহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, চাঁদপুরে মানববন্ধন

খালেদা জিয়ার রায়ের শুনানিতে যা হলো

  • Nil Kontho
  • আপডেট সময় : ০৮:৩২:৪৫ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১২ মার্চ ২০১৮
  • ৭৫৫ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।

রোববারের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি এক নম্বরে ছিল। বেলা সোয়া ২টার দিকে আদালত কক্ষে দুই বিচারপতি আসেন। শুরুতেই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের কাছে জানতে চান, তাদের কিছু বলার আছে কি না। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, জামিন আবেদনের শুনানি তো শেষ হয়েছে। আমরা আদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি রাষ্ট্রপক্ষ কিছু বলে, তাহলে আমরা জবাব দেব। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, এ মামলাটি স্পর্শকাতর। বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে তাকে ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। যেহেতু নিম্ন আদালতের নথি এসেছে সেহেতু আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেয়া হোক।

তিনি বলেন, এটি একটি দুর্নীতির মামলা। এখানে এতিমের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আত্মসাৎ হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মামলার নজির তুলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এরশাদ সাহেব সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন। আর খালেদা জিয়া মাত্র দুই মাস কারাগারে ছিলেন। অতএব, তাকে জামিন দেয়া ঠিক হবে না। এ সময় আদালত বলেন, তখন তার (এরশাদ) বয়স কত ছিল? আ্যটর্নি বলেন, বয়স ছিল ৬৫ বছর। আদালত বলেন, তিনিতো এ সময় শারীরিকভাবে ফিট ছিলেন। তিনি কারাগারে থেকে বেরিয়ে বিয়ে করেছেন। আল্লাহর রহমতে পুত্রসন্তানও লাভ করেছেন।

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, সাজার পরিমাণ কম এ বিবেচনায় জামিন দেয়া উচিত হবে না। এটা জামিন দেয়ার গ্রাউন্ড হতে পারে না। তারা শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখান নাই। এ সময় আদালত বলেন, এ শুনানি তো আপনি আগেও করেছেন। নতুন কি আছে সেটা বলুন। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আগে খালেদা জিয়া অসুস্থ ছিলেন। এই অসুস্থতার কারণে তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন নাই। এ সময় একটি দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ জামিন দেয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এরপর আদালত চারটি গ্রাউন্ড তুলে ধরে চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। শারীরিক অসুস্থতা। সাজার পরিমাণ, নিয়মিত বিচারিক আদালতে হাজিরা, এবং মামলার পেপারবুক এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় জামিন মঞ্জুর করা হলো। একই সঙ্গে আগামী চার মাসের মধ্যে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন আদালত। শুনানির সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, আবদুল আওয়াল মিন্টু, আব্দুর রেজাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, সাবেক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান ও সগির হোসেন লিওনসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. আক্তারুজ্জামানের আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই আদালত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এ অর্থ দণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সমান অঙ্কে প্রদান করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ের পর থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন দেয়া হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাস করা বসতবাড়ি ভোগদখল জমিজমা নিমিষেই বেদখল

খালেদা জিয়ার রায়ের শুনানিতে যা হলো

আপডেট সময় : ০৮:৩২:৪৫ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১২ মার্চ ২০১৮

নিউজ ডেস্ক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।

রোববারের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি এক নম্বরে ছিল। বেলা সোয়া ২টার দিকে আদালত কক্ষে দুই বিচারপতি আসেন। শুরুতেই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের কাছে জানতে চান, তাদের কিছু বলার আছে কি না। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, জামিন আবেদনের শুনানি তো শেষ হয়েছে। আমরা আদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি রাষ্ট্রপক্ষ কিছু বলে, তাহলে আমরা জবাব দেব। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, এ মামলাটি স্পর্শকাতর। বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে তাকে ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। যেহেতু নিম্ন আদালতের নথি এসেছে সেহেতু আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেয়া হোক।

তিনি বলেন, এটি একটি দুর্নীতির মামলা। এখানে এতিমের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আত্মসাৎ হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মামলার নজির তুলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এরশাদ সাহেব সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন। আর খালেদা জিয়া মাত্র দুই মাস কারাগারে ছিলেন। অতএব, তাকে জামিন দেয়া ঠিক হবে না। এ সময় আদালত বলেন, তখন তার (এরশাদ) বয়স কত ছিল? আ্যটর্নি বলেন, বয়স ছিল ৬৫ বছর। আদালত বলেন, তিনিতো এ সময় শারীরিকভাবে ফিট ছিলেন। তিনি কারাগারে থেকে বেরিয়ে বিয়ে করেছেন। আল্লাহর রহমতে পুত্রসন্তানও লাভ করেছেন।

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, সাজার পরিমাণ কম এ বিবেচনায় জামিন দেয়া উচিত হবে না। এটা জামিন দেয়ার গ্রাউন্ড হতে পারে না। তারা শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখান নাই। এ সময় আদালত বলেন, এ শুনানি তো আপনি আগেও করেছেন। নতুন কি আছে সেটা বলুন। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আগে খালেদা জিয়া অসুস্থ ছিলেন। এই অসুস্থতার কারণে তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন নাই। এ সময় একটি দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ জামিন দেয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এরপর আদালত চারটি গ্রাউন্ড তুলে ধরে চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। শারীরিক অসুস্থতা। সাজার পরিমাণ, নিয়মিত বিচারিক আদালতে হাজিরা, এবং মামলার পেপারবুক এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় জামিন মঞ্জুর করা হলো। একই সঙ্গে আগামী চার মাসের মধ্যে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন আদালত। শুনানির সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, আবদুল আওয়াল মিন্টু, আব্দুর রেজাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, সাবেক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান ও সগির হোসেন লিওনসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. আক্তারুজ্জামানের আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই আদালত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এ অর্থ দণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সমান অঙ্কে প্রদান করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ের পর থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন দেয়া হয়।