বৃহস্পতিবার | ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত Logo চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের আলো সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প Logo ফের ভূমিকম্প Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী Logo কুবির বাংলা বিভাগের বাংলা নাটক বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন Logo মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত Logo মাগুরার শ্রীপুরে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৫ এর উদ্বোধন Logo পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ প্রদর্শনী Logo আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী বাবু খান

টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী দালালদের সাজা ও নৌকা ডুবির ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে মডেল থানার পুলিশ

  • Nil Kontho
  • আপডেট সময় : ০৪:৩১:৩২ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০১৭
  • ৮২৫ বার পড়া হয়েছে

হাবিবুল ইসলাম হাবিব, টেকনাফ: পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিমদের উপর জুলুম নির্যাতনের কারনে সীমান্তে অসহায় বিপন্ন মানুষের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মানবিক সহায়তার প্রেক্ষিতে টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশরোধ, অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালালদের দমন ও নৌকা ডুবির ঘটনায় লাশ উদ্ধারের পর দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণই চরম চ্যালেঞ্জের মুখে আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী। সীমান্তের এই কার্যক্রম যেন পুলিশ বাহিনীর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৫ আগষ্ট ভোররাতে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সীমান্ত চৌকিতে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার জেরধরে পুরো এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর হামলা শুরু হয়। এরই জেরধরে লক্ষ লক্ষ অসহায় নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো হয়। এদিকে জাতিসংঘসহ একাধিক সংস্থা এই পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ৬লাখ দাবী করলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশী। গত ২৯ আগস্ট বিকাল হতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাস্তুহারা এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া জন্য অঘোষিতভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর ফলেই উখিয়া-টেকনাফের শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে অগনিত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে। গত ৩১ আগষ্ট হতে অদ্যবধি সাগর ও নদী পথে আসা বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনায় প্রায় ২শ হলেও টেকনাফে ১শ ৫৮জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে ছিল ২৩ জন পুরুষ, ৫৬ জন মহিলা, ৪০ জন ছেলে ও ৩৯ জন কন্যা শিশুর মৃতদেহ। নৌকা ডুবির বেশীর ভাগই ঘটনা শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ঘটেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান বলেন, গত ৩১ আগষ্ট হতে নৌকা ডুবির ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ উদ্ধার ও দাফন যেন অত্র উপজেলায় কর্মরত পুলিশের জন্য কঠিন এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই দিন-রাত্রি উপোস থাকা, পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানো পর্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে এতই ব্যস্ততা বাড়ে যায় যে,স্ত্রী-সন্তানেরা টেকনাফ এসে সরেজমিনে দেখে গেছে এই পেশাগত জীবনে কত ব্যস্থতা। তারাও বাস্তব অবস্থা দেখে গিয়ে ফোনে তেমন আর যোগাযোগ করেনা। স্বজনহারা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও সাহস দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছানোর কাজও পুলিশকে করতে হয়েছে। নৌকা ডুবির পর স্বজনহারাদের লাশ দাফন ও অপর পরিচিত জনের নিকট পৌঁছানো খুবই কঠিন ছিল। এরই পাশাপাশি থানার মামলা-মোকর্দ্দমার কার্যক্রম চালানো,মাদক চোরাচালান দমন,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালাল দমন করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা বড়ই কঠিন হয়ে পড়ে পুলিশের জন্য। তিনি আরো জানান, টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সময় একটি চিহ্নিত দালাল চক্রের তৎপরতা রয়েছে বেশি। ফলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বহন করে আনার দায়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর হতে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪শ ২২ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করতে হয়েছে। যার মধ্যে ২ জনকে ৫দিন, ৪ জনকে ৭ দিন, ২ জনকে ১৫ দিন, ৩ জনকে ২০ দিন, ১৫ জনকে ১ মাস, ২৪ জনকে ২ মাস, ৪২ জনকে ৩ মাস, ৬ জনকে ৫ মাস, ৩শ ২৭ জনকে ৬ মাস করে সাজা প্রদান করে করেন। থানা পুলিশকে সাজাপ্রাপ্তদের জেল-হাজতে প্রেরণের কাজ করতে হয়। পাশাপাশি মাদক সেবন, বহন ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১শ ৯৪ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা প্রদান করে আদালতের পাঠানো হয়। যার সাথে নিয়মিত মামলার আসামী আটক, ত্রাণ বিতরণে সহায়তা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এবং বিদেশীদের নিরাপত্তা ও সহায়তার অভিজ্ঞতা যেন পুলিশকে নিতে হয়েছে স্বাভাবিকভাবে। রাষ্ট্রের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুলিশের পক্ষে যা করণীয় তাই করতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় টেকনাফ থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান ও অধীনস্থ সহকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি এই চরম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে বলে জানান। আগামীতেও দেশ এবং জাতির প্রয়োজনে তিনি আরো পরিশ্রম-ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত বলে আশ্বস্থ করেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী

টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী দালালদের সাজা ও নৌকা ডুবির ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে মডেল থানার পুলিশ

আপডেট সময় : ০৪:৩১:৩২ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০১৭

হাবিবুল ইসলাম হাবিব, টেকনাফ: পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিমদের উপর জুলুম নির্যাতনের কারনে সীমান্তে অসহায় বিপন্ন মানুষের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মানবিক সহায়তার প্রেক্ষিতে টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশরোধ, অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালালদের দমন ও নৌকা ডুবির ঘটনায় লাশ উদ্ধারের পর দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণই চরম চ্যালেঞ্জের মুখে আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী। সীমান্তের এই কার্যক্রম যেন পুলিশ বাহিনীর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৫ আগষ্ট ভোররাতে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সীমান্ত চৌকিতে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার জেরধরে পুরো এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর হামলা শুরু হয়। এরই জেরধরে লক্ষ লক্ষ অসহায় নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো হয়। এদিকে জাতিসংঘসহ একাধিক সংস্থা এই পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ৬লাখ দাবী করলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশী। গত ২৯ আগস্ট বিকাল হতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাস্তুহারা এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া জন্য অঘোষিতভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর ফলেই উখিয়া-টেকনাফের শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে অগনিত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে। গত ৩১ আগষ্ট হতে অদ্যবধি সাগর ও নদী পথে আসা বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনায় প্রায় ২শ হলেও টেকনাফে ১শ ৫৮জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে ছিল ২৩ জন পুরুষ, ৫৬ জন মহিলা, ৪০ জন ছেলে ও ৩৯ জন কন্যা শিশুর মৃতদেহ। নৌকা ডুবির বেশীর ভাগই ঘটনা শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ঘটেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান বলেন, গত ৩১ আগষ্ট হতে নৌকা ডুবির ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ উদ্ধার ও দাফন যেন অত্র উপজেলায় কর্মরত পুলিশের জন্য কঠিন এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই দিন-রাত্রি উপোস থাকা, পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানো পর্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে এতই ব্যস্ততা বাড়ে যায় যে,স্ত্রী-সন্তানেরা টেকনাফ এসে সরেজমিনে দেখে গেছে এই পেশাগত জীবনে কত ব্যস্থতা। তারাও বাস্তব অবস্থা দেখে গিয়ে ফোনে তেমন আর যোগাযোগ করেনা। স্বজনহারা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও সাহস দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছানোর কাজও পুলিশকে করতে হয়েছে। নৌকা ডুবির পর স্বজনহারাদের লাশ দাফন ও অপর পরিচিত জনের নিকট পৌঁছানো খুবই কঠিন ছিল। এরই পাশাপাশি থানার মামলা-মোকর্দ্দমার কার্যক্রম চালানো,মাদক চোরাচালান দমন,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালাল দমন করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা বড়ই কঠিন হয়ে পড়ে পুলিশের জন্য। তিনি আরো জানান, টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সময় একটি চিহ্নিত দালাল চক্রের তৎপরতা রয়েছে বেশি। ফলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বহন করে আনার দায়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর হতে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪শ ২২ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করতে হয়েছে। যার মধ্যে ২ জনকে ৫দিন, ৪ জনকে ৭ দিন, ২ জনকে ১৫ দিন, ৩ জনকে ২০ দিন, ১৫ জনকে ১ মাস, ২৪ জনকে ২ মাস, ৪২ জনকে ৩ মাস, ৬ জনকে ৫ মাস, ৩শ ২৭ জনকে ৬ মাস করে সাজা প্রদান করে করেন। থানা পুলিশকে সাজাপ্রাপ্তদের জেল-হাজতে প্রেরণের কাজ করতে হয়। পাশাপাশি মাদক সেবন, বহন ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১শ ৯৪ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা প্রদান করে আদালতের পাঠানো হয়। যার সাথে নিয়মিত মামলার আসামী আটক, ত্রাণ বিতরণে সহায়তা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এবং বিদেশীদের নিরাপত্তা ও সহায়তার অভিজ্ঞতা যেন পুলিশকে নিতে হয়েছে স্বাভাবিকভাবে। রাষ্ট্রের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুলিশের পক্ষে যা করণীয় তাই করতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় টেকনাফ থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান ও অধীনস্থ সহকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি এই চরম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে বলে জানান। আগামীতেও দেশ এবং জাতির প্রয়োজনে তিনি আরো পরিশ্রম-ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত বলে আশ্বস্থ করেন।