রিপোর্ট : ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠিতে মাদক মামলার অাসামী করার ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করে পুলিশের অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার সকাল ১১ টায় সদর উপজলার শেখরহাট বাজারের ব্যবসায়ী শংকর দেবনাথের দোকানে অবৈধ মাল ও নেশাদ্রব্য বিক্রির অভিযাগে ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশী অভিযান চালায় পুলিশ। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেয় শখরহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ক্যাম্প ইনচার্জ (আইসি) এস আই ফারুক। তার সহযাগিতায় ছিলন এ এস আই কামরুল সহ সঙ্গীয় ফার্স। ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান শেষে ৫০ বছরের বশি সময় ধরে চলমান মুদি মনাহরির দোকান থেকে কোন কিছু না পেয়ে ৮ কেজি পলিথিন জব্দ করে এবং ব্যবসায়ী শংকর দেবনাথকে ক্যাম্পে নিয়ে মোটা অঙ্কের রফা-দফায় ছেড়ে দেয়। এসব কথা জানিয় ব্যবসায়ী শংকর দেবনাথ আরো বলেন, সুনামের সাথে আমার পিতা এ বাজার প্রায় ৩০ বছর দোকানদারী করেছে আমি তারপর ২৭ বছর দোকানদারী করছি। হঠাৎ এসে আমার দোকান তল্লাশী চালিয়ে কয়েক কেজি পলিথিন পেয়ে আমাকে তাঁদর সাথে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অামাকে ছেড়ে দিলে অামি চলে আসি। এরপর যত বললো আমি আর যাইনি।
শেখেরহাট বাজারের নরসুন্দর কারিগর (সলুন ব্যবসায়ী) মিটু লাল শীল জানান, গত রাববার (৮ অক্টাবর) রাতে আইসি ফারুক ও এএসআই কামরুল আমার দোকানের সামনে এসে বলে মিটু চল। তোকে আমাদর সাথে যেতে হবে। আমি বের হয়ে কেন যাবো আমার অপরাধ কি? জানত চাইলেই তিনি আমাক বেধরক মারধর করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। গিয়ে দেখি পার্শ্ববর্তী ঔষধ ব্যবসায়ী মহসিনও সেখান। আমাদেরকে বলে তোরা দু’জন গাঁজা খেয়েছো। আমরা অস্বীকার করলে আমাদের প্রচন্ড মারধর করে। একপর্যায় আমি দিগম্বর (উলঙ্গ) হয়ে যাই। সেভাবই ওখানে দাড়িয়ে থাকি। শেখরহাট বাজারে নরসুন্দরের কাজ করি ৩০ বছর ধরে, আমার নামে কোন অভিযাগ নেই। আমার বড় মেয়ে এম এ পাশ করছে এবং ছেলে অনার্স পড়াশুনা করতেছে। আমি গাজা খেয়ছি শুনে অবাক হয়ে যাই। পরে তারা আমাদেরকে ছাড়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। সর্বশষ ২০ হাজার টাকা চুক্তি হলে আমরা ছাড়া পাই। রাতেই ঋণ-কর্জ করে ১০ হাজার টাকা দিয়ছি এখন পর্যন্ত আর দিত পারি নাই। ওরা এমন ভাবে মরেছে জীবনও এতো মার খাইনি বলে কেঁদে ফেলেন মিটু লাল শীল। এ ব্যাপারে ঔষধ ব্যবসায়ী মহসিনের সাথে মাবাইলে যোগাযোগ করলে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি হয়রানির ভয়ে কান কথা বলতে রাজি হননি।
আমেরিকা প্রবাসী জাফর আলী খানের পুত্র ফায়েজ আহমেদকে শেখেরহাট বাজার থেকে ক্যাম্প ইনচার্জ (আই সি) এস আই ফারুক ও এএস আই কামরুল সুর্নিদিষ্ট কোন অভিযাগ ছাড়াই বেধরক মারধর করে ক্যাম্প ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন জাফর আলী খান। পরে জাফর আলী খান তার পুত্রকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন।
মাদক বিক্রির অভিযাগ একই বাজারের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী মেসার্স পলক মেশিনারী স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মুকুল দাসকেও ধরে নিয়ে মারধর করে মোটা অঙ্কের দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পেরে কয়েকদিন আত্মগোপনে থেকে সমঝতা করেছেন মুকুল দাস। হয়রানির ভয় মুকুল দাস কাওলা-জন্ডিসের কারণে কয়েকদিন ভান্ডারিয়ায় চিকিৎসায় ছিলেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
স্থানীয় জয় গুরু বস্ত্র বিতানের সত্ত্বাধিকারী কার্তিক দেবনাথ জানান, কথা বলে লাভ নেই। রাতে এসে ইয়াবা রেখে আমাকে ধরে নিয়ে যাব। টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হবে। এখন ১০ টাকা লাভ হল ৮ টাকা রাখি পুলিশী হয়রানি থেকে প্রতিকার পাবার ভয়। বাকি ২ টাকা দিয়ে ছিল-পুলে নিয়ে খাই।
বাজারর প্রবীণ ব্যবসায়ী অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মোজাম্মল সরদার জানান, শুক্রবার শংকরের দোকানে অভিযান চালিয়েছে, ফয়েজ কে মারধর করে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা যাদর আস্থায় নিরাপদ থাকবা তারাই আমাদের হয়রানি করছে।
শেখরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আই সি এস আই ফারুক’র কাছ তার বক্তব্য জানত চাইল তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি না হয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসানের কাছ থেকে বক্তব্য নেয়ার জন্য বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কল) এমএম মাহমুদ হাসানর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি শেখরহাটের কয়েক দূর্নীতিকারীকে সাবধান হতে বলেছি। কি নিরীহ জনসাধারন ও ব্যবসায়ীদের হয়রানির বিষয়টা আমার জানাছিলো না। তবে খারাপ লোক যেই হোক (পুলিশ/সাংবাদিক/ রাজনৈতিক) বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না বলে আস্থা রাখতে বলেন তিনি।