নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি হর্ন অব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে সাবমেরিন ঘাঁটি বানিয়েছে লাল চীন। এ ধরনের ঘাঁটি আফ্রিকার পূর্ব উপকূল জুড়ে আরও বানাবে তারা।
উদ্দেশ্য একটাই, ভারতকে সামরিকভাবে চাপে রাখা। ১৯৯০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আফ্রিকার অনেক দেশই এক মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়। সেই সুযোগটাকে পুরোদমে কাজে লাগায় চীন। আফ্রিকার যেসব দেশ আন্তর্জাতিক ঋণের বোঝা মেটাতে পারছিল না তাদের অনেককেই চীন অর্থনৈতিক অনুদানের টোপ দেয়। কিছু দেশ উপায়ান্তর না খুঁজে পেয়ে চীনের শর্তে সেই অনুদান নিতে বাধ্যও হয়। শর্ত ছিল একটাই, চীনকে পুরোদমে রণনৈতিক সুযোগ দিতে হবে। জিবুতি আফ্রিকার সে রকমই একটি অসহায় রাষ্ট্র, যারা চীনের সেই শর্ত মেনে নিজেদের সার্বভৌমত্ব খুইয়ে তাকে সাবমেরিন ঘাঁটি বানানোর জায়গা দিতে বাধ্য হয়েছে।
এমনিতেই জিবুতি বরাবরই আফ্রিকার একটি পশ্চাদপদ দেশ। এক সময় ছিল ফরাসি উপনিবেশ। সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই মুসলমান। তবে জাতিগতভাবে তারা দুটি (আফার এবং ইসা) নৃগোষ্ঠীতে বিভক্ত। তাদের মধ্যেকার উপজাতিগত বিভেদকে এক সময় ঠান্ডা মাথায় কাজে লাগিয়েছিল ফরাসি ঔপনিবেশিকরা। আফ্রিকায় সব থেকে বেশিদিন ফরাসি উপনিবেশ বলতে ছিল এই ফ্রেঞ্চ সোমালিল্যান্ড অর্থাৎ জিবুতি-ই। ১৯৭৭ সালের জুন মাসে তারা স্বাধীনতা পায়। এখনও সেই দেশের মূল ভাষা বলতে দুটি— আরবি এবং ফরাসি। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরেও জিবুতিতে দীর্ঘদিন ফরাসি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ছিল। তার কারণ, অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ হলেও জিবুতির উপকূলের রণনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। সুয়েজ খাল নির্মিত হওয়ার পর থেকেই এডেন উপসাগর এবং বাব-এল-মানদেব প্রণালীর নিকটবর্তী জিবুতির বন্দর রণনীতিগতভাবে একটি নতুন গুরুত্ব পায়। তার উপর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে জিবুতি বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হওয়ায় সেই গুরুত্ব আরও বহুগুণে বেড়ে যায়।
ফরাসিরা জিবুতি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে তাদের শূন্যস্থান পূরণ করে মূলত সৌদি আরব। সেদিক থেকে দেখলে জিবুতিকে এখন নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিল সামরিকভাবে চীন এবং বাণিজ্যিকভাবে সৌদি আরব। অর্থাৎ, জিবুতি-র বন্দরে চীনা কুমিরটিকে খাল কেটে নিয়ে গেছে সৌদি আরবই। লক্ষ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারা। একদিকে আমেরিকাকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, এই তল্লাটে কী হবে না হবে সেটা ঠিক করবে সৌদি আরব, পশ্চিমী দুনিয়া নয়। অন্যদিকে, ভারতের মতো দেশকে বুঝিয়ে দেওয়া— পাকিস্তান ছাড়াও পেট্রডলারপুষ্ট মুসলিম দুনিয়ায় লাল চীনের ‘সমস্ত ঋতুর বন্ধু’ আরও আছে! সৌদি আরবের সহায়তা না পেলে চীন কোনো দিনই জিবুতিতে সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করতে পারত না।
আগামী দিনেও এ রকম আরও রণনৈতিক ঘাঁটি আফ্রিকার পূর্ব উপকূল জুড়ে অর্থাৎ আফ্রিকার ভারত মহাসাগরীয় উপকূল জুড়ে বানানোর চেষ্টা চীন চালিয়ে যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা আফ্রিকায় ঢালাও ইউয়ান ছড়াচ্ছে। এক সময় অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধে অগাস্টিনহো নেটোর প্রতিপক্ষ সাভিম্বিকে অস্ত্রশস্ত্র জুগিয়ে মদত দেওয়ার মাধ্যমে আফ্রিকায় লালচীনের নাক গলানো শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই মদতের জায়গাটা তারা পূরণ করে চলেছে লক্ষ কোটি ইউয়ান অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে। অনেকে হয়তো বিশ্বাস করবে না— বিগত দেড়-দুই দশক ধরে ইন্টেলিজেন্স ওয়ারফেয়ারে আফ্রিকায় দুই প্রবল প্রতিপক্ষ হল চীন এবং ইজরায়েল। সেদিক থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইজরায়েল সফরের গুরুত্ব অপরিসীম।
আফ্রিকায় চীনা বাঁদরামোর নতুন নতুন খবরাখবর পেতে হলে ইজরায়েলের মোসাদকেই ভারতের এখন সব থেকে বেশি কাজে লাগবে। এমনও জানা গেছে, মোসাদের গুপ্তচরবাহিনীর ঘাতকেরা আফ্রিকায় চীনা গুপ্তচরদের হাতে পেলে বেঁধে নদীতে কুমিরের মুখেও ফেলে দেয়। অতএব, চীন এবং তাদের সমস্ত ঋতুর বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে মোকাবিলা করতে হলে ভারতের ইন্টেলিজেন্স বাহিনীর মোসাদকেই এই মুহূর্তে সব চাইতে বেশি দরকার। আর কেউ তার পাশে দাঁড়াবে না।
সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর সেভেন