বৃহস্পতিবার | ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান Logo টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ Logo গাইবান্ধা এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে নিহত যুবক Logo খুবিতে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা: নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় সভা Logo প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠান চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির ‘হেমন্তসন্ধ্যা ও হাঁস পার্টি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে Logo টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ Logo সদরপুরে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস পালিত Logo খুবিতে রফিক আজম ট্রাভেল স্কলারশিপ চালুর লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন সিবি’এর দোয়া মাহফিল

যে দেশের শপিংমল এখন কারাগার !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৪:২৬ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭
  • ৭৭০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

শপিংমল এবং কারাগার দুটি স্থান বিপরীত দুই মেরুর বাসিন্দা। একটিতে দিনে-রাতে আলোর ফোয়ারা ছোটে আর অন্যটির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী মানুষেরা মুক্তির প্রহর গোনে।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে এই দুই মেরুর বাসিন্দা এসে মিলিত হয়েছে এক বিন্দুতে। বিশাল বিলাসবহুল একটি শপিংমল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কারাগার হিসেবে।

ষাটের দশক। স্বৈরশাসক মারকোস পেরেজ তখন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই পেরেজের মাথায় শপিংমল বানানোর ভূত চেপে বসল। তিনি রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে সান অগাস্টিন শহরের পাহাড়ের ওপর প্রাসাদোপম একটি শপিংমল বানানোর নির্দেশ দিলেন। এল হেলিকোইডি বা হিলিক্স নামে পরিচিত এই শপিংমলের নকশা করেছিলেন তখন খ্যাতিমান নকশাকার রিচার্ড বুকমিনিস্টার ফুলার।


সর্পিল আকৃতির এই শপিংমলটি দৈর্ঘ্যের হিসাবে প্রায় আড়াই মাইল লম্বা। তিনশ’ দোকান, একটি ফাইভ স্টার হোটেল, সিনেমা দেখার জন্য আলাদা থিয়েটার, চিত্র প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি, জিমনেসিয়াম, পুল খেলার জায়গা এবং নার্সারি সহ শপিংমলটির ছিল নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শপিংমলটির অন্যতম সুবিধা ছিল এর যেকোনো তলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

স্থাপত্যগত দিক দিয়ে এটি এতই সুন্দর ছিল যে, চিলির নোবেল  জয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা শপিংমলটিকে ষাটের দশকের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালি এর ভেতরের নকশা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ভবনটি নির্মাণের সব কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হলো ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে যখন স্বৈরশাসক পেরেজের পতন ঘটল। স্বৈরশাসকের সম্পৃক্ততা থাকায় নতুন সরকার শপিংমটির প্রতি একদমই আগ্রহ দেখায়নি। অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এর কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হলো এটি। অযত্নে-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি মদ, জুয়া আর যৌন ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হলো।


১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে ভবনটিকে জাদুঘর বানানোর অভিপ্রায়ে সরকার এর দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় সকল অবৈধ দখলদারদের। কিন্তু পূর্বের পরিকল্পনা  থেকে সরে এসে সরকার ১৯৮৪ সালে এখানে ভেনিজুয়েলা ইন্টেলিজেন্স পুলিশের সদর দফতর স্থাপন করে।

এর ফলে শপিংমলটি এখন পরিণত হয়েছে কারগারে। রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এখানে প্রায় ১৪৫টির মতো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! যেটি হওয়ার কথা ছিল শপিংমল সেটি এখন ভয়ংকর এক কারাগার। দিনে-রাতে যে শপিংমলটির আলোর ফোয়ারা ছোটানো কথা ছিল তারই চারপাশ এখন বন্দী মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

যে দেশের শপিংমল এখন কারাগার !

আপডেট সময় : ০৬:৪৪:২৬ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

শপিংমল এবং কারাগার দুটি স্থান বিপরীত দুই মেরুর বাসিন্দা। একটিতে দিনে-রাতে আলোর ফোয়ারা ছোটে আর অন্যটির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী মানুষেরা মুক্তির প্রহর গোনে।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে এই দুই মেরুর বাসিন্দা এসে মিলিত হয়েছে এক বিন্দুতে। বিশাল বিলাসবহুল একটি শপিংমল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কারাগার হিসেবে।

ষাটের দশক। স্বৈরশাসক মারকোস পেরেজ তখন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই পেরেজের মাথায় শপিংমল বানানোর ভূত চেপে বসল। তিনি রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে সান অগাস্টিন শহরের পাহাড়ের ওপর প্রাসাদোপম একটি শপিংমল বানানোর নির্দেশ দিলেন। এল হেলিকোইডি বা হিলিক্স নামে পরিচিত এই শপিংমলের নকশা করেছিলেন তখন খ্যাতিমান নকশাকার রিচার্ড বুকমিনিস্টার ফুলার।


সর্পিল আকৃতির এই শপিংমলটি দৈর্ঘ্যের হিসাবে প্রায় আড়াই মাইল লম্বা। তিনশ’ দোকান, একটি ফাইভ স্টার হোটেল, সিনেমা দেখার জন্য আলাদা থিয়েটার, চিত্র প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি, জিমনেসিয়াম, পুল খেলার জায়গা এবং নার্সারি সহ শপিংমলটির ছিল নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শপিংমলটির অন্যতম সুবিধা ছিল এর যেকোনো তলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

স্থাপত্যগত দিক দিয়ে এটি এতই সুন্দর ছিল যে, চিলির নোবেল  জয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা শপিংমলটিকে ষাটের দশকের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালি এর ভেতরের নকশা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ভবনটি নির্মাণের সব কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হলো ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে যখন স্বৈরশাসক পেরেজের পতন ঘটল। স্বৈরশাসকের সম্পৃক্ততা থাকায় নতুন সরকার শপিংমটির প্রতি একদমই আগ্রহ দেখায়নি। অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এর কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হলো এটি। অযত্নে-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি মদ, জুয়া আর যৌন ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হলো।


১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে ভবনটিকে জাদুঘর বানানোর অভিপ্রায়ে সরকার এর দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় সকল অবৈধ দখলদারদের। কিন্তু পূর্বের পরিকল্পনা  থেকে সরে এসে সরকার ১৯৮৪ সালে এখানে ভেনিজুয়েলা ইন্টেলিজেন্স পুলিশের সদর দফতর স্থাপন করে।

এর ফলে শপিংমলটি এখন পরিণত হয়েছে কারগারে। রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এখানে প্রায় ১৪৫টির মতো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! যেটি হওয়ার কথা ছিল শপিংমল সেটি এখন ভয়ংকর এক কারাগার। দিনে-রাতে যে শপিংমলটির আলোর ফোয়ারা ছোটানো কথা ছিল তারই চারপাশ এখন বন্দী মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে।