নিউজ ডেস্ক:
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়। তাদের একজন নার্গিস আহমেদ, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ‘রূপসী বাংলা’ টেলিভিশনের সাপ্তাহিক একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিইউয়র্কে বাংলাদেশি শিশুদের বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা শেখাতেন। তার মতে, শিশুরা যত ভাষা শিখবে তাদের দক্ষতা তত বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে আমেরিকার স্কুলগুলোতে ইংরেজির পর দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্প্যানিশ অথবা ফ্রেঞ্চ শেখানো হয়। এখন বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিছু স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা পড়ানো হয়। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ঢাকায় কয়েকজন আত্মীয়ের বাড়িতে নতুন অভিজ্ঞতা হলো। আমি তাদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলেছি, কিন্তু আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলছেন।’ অনেক উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের এমনকি বাবা-মায়েরাও সন্তানদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলেন না।
অভিযোগের সুরে তিনি বললেন, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি সংগঠনগুলো সভা-সমিতি, পিকনিক আর ইফতার পার্টিতে ব্যস্ত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকশ’ বাংলাদেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে। প্রত্যেক সংগঠন বিনা অর্থে ৫০টি শিশুকে বাংলা ভাষা শেখানোর দায়িত্ব নিলে হাজারো শিশু-কিশোর শুদ্ধ বাংলা শিখতে পারত। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করছেন এমন আরেকজন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র নজরুল একাডেমির সভাপতি। পেশায় ফার্মাসিস্ট হলেও ধ্যানজ্ঞান ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা। ১৯৯০ সালে পেনসিলভানিয়াতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন তিনি। মাতৃভূমি থেকে হাজারো মাইল দূরে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চাকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে তারা বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। ২৫ বছরের পুরনো সংগঠনটির কাজ বর্তমানে অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। অন্যদিকে, ২০০৭ সালে পেনসিলভানিয়াতে টিপু সুলতান প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশি-আমেরিকান আর্ট গ্যালারি। ২০১০ সালে তারা পেনসিলভানিয়াতে সর্বপ্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এবারও দু’দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করেছেন। তার মতে, দু’দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা ভাষা চর্চার তেমন সুযোগ ছিল না। সময়ের ব্যবধানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক বাংলা স্কুল। স্কুল ছাড়াও অনেক সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলা ভাষার চর্চা বাড়াতে কাজ করে। তিনি মনে করেন, ‘ফলস প্রাইড’ থেকে অনেক পিতা-মাতা সন্তানদের বাংলা শেখাতে চান না। তারা মনে করেন, বাংলা শেখা অপ্রয়োজনীয়।
নিউইয়র্কের কুইন্স মেডিকেল সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইউসুফ আল মামুন আমেরিকায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে বাংলা ভাষা চর্চার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, তাদের রোগীদের প্রায় ৯০ ভাগই বাংলাদেশি, যাদের সঙ্গে তিনিসহ তার অফিসের বাংলাদেশি ডাক্তার ও স্টাফরা বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ডা. মামুন মনে করেন, আগের চেয়ে বাংলা ভাষা চর্চার উন্নতি হয়েছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে নতুন প্রজন্ম ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলত। বর্তমানে সে অবস্থা নেই। নতুন প্রজন্মের অনেক শিশু-কিশোর এখন শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে। এ জন্য যোগাযোগ প্রযুক্তিকে তিনি ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের কল্যাণে আমাদের সন্তানরা ঘরে বসেই বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল দেখার সুযোগ পায়। এতে বাংলা ভাষা শেখাটা সহজ হয়ে গেছে।
সবশেষে বলা যায়, ঘর থেকেই বাংলা ভাষা চর্চা শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। যেহেতু শিশু-কিশোররা অধিকাংশ সময় বাসায়ই কাটায় তাই সে সময়টাতে তাদের সঙ্গে বাংলায় কথা বললে সহজেই তারা বাংলা ভাষা রপ্ত করতে পারবে। নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের সংস্কৃতিকে সুউচ্চ রাখতে ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।