খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় টার্মের শিক্ষার্থীরা তিন দিনের একটি কৃষি সম্প্রসারণ ট্যুর সম্পন্ন করেছেন। গত ২১ থেকে ২৩ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত এই ট্যুরটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এই ট্যুরের মূল উদ্দেশ্য ছিল “উপজেলা পর্যায়ে কৃষি প্রযুক্তি, জৈব সার ও বালাইনাশক ব্যবহারের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন এবং কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম সম্পর্কে সরাসরি ধারণা লাভ।” গাইড টিচার হিসেবে ছিলেন প্রফেসর ড. মো. বশির আহমেদ এবং প্রফেসর ড. মো. মতিউল ইসলাম।
প্রথম দিন সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও অর্গানোগ্রাম সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেন। পরে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন কৃষি অধিদপ্তরের কাঠামো ও কার্যক্রম তুলে ধরেন। দুপুরে উপসহকারী প্ল্যান্ট প্রোটেকশন অফিসার ধ্রুবজ্যোতি সরকার ধানের রোগবালাই ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পদ্ধতি প্রদর্শন করেন।
দিনের শেষে শিক্ষার্থীরা ফুলতলা ব্লকের ‘পার্টনার’ প্রকল্পের আওতাধীন একটি ডেমোনস্ট্রেশন প্লট পরিদর্শন করেন। সেখানে কৃষকরা শিখন স্কুল, লাইন ও লোগো মেইনটেইন করে চারা রোপণের পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কৌশল প্রদর্শন করেন।
দ্বিতীয় দিন শিক্ষার্থীরা বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস পরিদর্শন করেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলায় প্রায় ৩৪ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে।
এদিন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নিগার সুলতানা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যক্রম, আর মৎস্য কর্মকর্তা মো. সেলিম সুলতান উপজেলার মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
কৃষি ব্যাংক বটিয়াঘাটা শাখার ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম কৃষি ঋণ, ভর্তুকি ও ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা তুলে ধরেন। এছাড়া এটিআই-এর অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কে. এম. মাক্সুদুন্নবী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ‘পার্টনার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (GAP) বাস্তবায়নের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন।
শেষ দিনে শিক্ষার্থীরা পূর্ব মোহাম্মদনগর সুরিখালী গ্রামের কৃষক লঙ্কেশ্বর মণ্ডলের ব্রি ধান ৮৭ এর প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা পোকামাকড় দমন ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পদ্ধতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় খুলনা জেলার অতিরিক্ত উপপরিচালক (প্ল্যান্ট প্রোটেকশন উইং) মেহগনি ফল থেকে জৈব বালাইনাশক তৈরির প্রক্রিয়া হাতে-কলমে দেখান।
ট্যুরের শেষে শিক্ষার্থীরা সাচিবুনিয়ার একটি ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট পরিদর্শন করেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবনানন্দ রায় সার তৈরির প্রক্রিয়া হাতে-কলমে দেখান এবং মাটি ও ফসলের স্বাস্থ্যে এর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন।
এই কৃষি সম্প্রসারণ ট্যুরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাঠপর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পর্কে সরাসরি ধারণা অর্জন করেন। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তারা কৃষি উন্নয়নের বহুমাত্রিক দিক সম্পর্কে সচেতনতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, মাঠপর্যায়ে প্রদর্শনী প্লট ও কৃষকদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ জীবনে প্রয়োগের অনুপ্রেরণা জোগাবে যা কৃষি উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাদের মতে, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, সমাজসেবা ও ব্যাংকের মতো সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ গ্রামীণ উন্নয়নের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বুঝতে







































