দিনাজপুর প্রতিনিধি- দিনাজপুরের অনাকাঙ্ক্ষিত মানববন্ধনের বিপরীতে বেইস ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী ভাতগাঁও শাখার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বীরগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালযয়ে ২৩ অক্টোবর বৃস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেইস মিতালী ভাতগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে বীরগঞ্জের শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ ওমর ফারুক।
লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ১২ অক্টোবর বেইস ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী ভাতগাঁও শাখার কয়েকজন ঋণগ্রহীতা ও কিছু সংখ্যক এলাকাবাসী বিভিন্ন অভিযোগে মানববন্ধন করে বেইস মিতালী প্রশিক্ষন ও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্য করার বিপক্ষে সুষ্ঠ ব্যাখ্যা দিতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৭৭ সালে কতিপয় বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি দ্বারা বেইস মিতালী প্রশিক্ষন ও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি এডুকেশন (বেইস) একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান (এনজিও)।
বেইস একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃক নিবন্ধিত।
বেইস প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, গণ শিক্ষা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রী উপবৃত্তি ও কারিগরী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সুনামের সাথে বাস্তবায়ন করে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করেছে। বেইস দিনাজপুরসহ ৬টি জেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচী চালিয়ে আসছে।
শুধু বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলায় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর আওতায় বর্তমানে ৭ হাজার ৪৪৪ জন সদস্য সুবিধাভোগী হিসেবে যুক্ত রয়েছেন।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাঠকশিকড় গ্রামের মৃত তারা মিয়ার ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ বেইস ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী ভাতগাঁও শাখায় ঋণ সুপারভাইজার হিসাবে যোগদান করেন এবং গত ৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে তাকে কাহারোল শাখায় বদলি করা হয়। এরপর তিনি কর্মস্থলে যোগ না করে সদস্যদের কাছ থেকে আদায়কৃত সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তির টাকােউত্তলন করে অফিসে জমা না দিয়ে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, ১৭ জন সদস্যের ২ লাখ ২ হাজার ৮৫৯ টাকা পাশবইয়ে এন্ট্রি থাকলেও অফিসে জমা হয়নি, এছাড়া আরও ১২ জন সদস্য মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন যে, সুপারভাইজার তাদের কাছ থেকে টাকা নিলেও পাশবইয়ে উল্লেখ করেননি এবং অফিসে জমাও দেননি। এভাবে মোট ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৮০ টাকা সহ সর্বমোট ১৫ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৯ টাকা আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত সুপারভাইজারের যোগসাজশে কিছু সদস্য ও বহিরাগত ব্যক্তিরা মানববন্ধন করে বেইসকে বিভ্রান্তিকরভাবে দায়ী করেন বলে দাবি করেন তিনি। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে। অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, বেইস একটি মানবিক সামাজিক উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠান। কারিগরি প্রশিক্ষনে বেইস মিতালী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্র এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত বেইস মিতালী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯,১৪২ জন বেকার, অর্ধ-শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সেলাই, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, অটোমোবাইল এবং কম্পিউটার ও আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
যাদের মধ্যে অধিকাংশই দেশে ও বিদেশে কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। একক কোনো অনিয়মের দায় পুরো সংস্থা নেবে না। আমরাও স্বচ্ছতার সাথে ঘটনার বিচার চাই।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বীরগঞ্জ শাখার অধ্যক্ষ মোঃ জুলফিকার আলী ভুট্টু, প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিক্ষা বাবু গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, কামরুল ইসলাম আইটি প্রশিক্ষক, সিরাজুল ইসলাম হিসাব রক্ষক শিক্ষা, মোছাঃ তাজমিরা বেগম হিসাব রক্ষক, রবিউল আলম ও মাঠকর্মী আল আমিনসহ অন্যান্য স্টাফগন।