মঙ্গলবার | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান প্রেস সচিবের Logo মহান বিজয় দিবস আগামীকাল Logo নোবিপ্রবি ছাত্রশিবির আয়োজিত আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত Logo জামায়াতের নির্বাচনী সভায় পুলিশ সদস্যের অংশগ্রহণ, এএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা Logo মিজাফ বিজয় সম্মাননা পেলেন চিত্রনায়ক ডি এ তায়েব Logo সমাজসেবায় ৯ বছরের পথচলা: জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা Logo চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন Logo ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ভান্ডার ‘বনফুল’ চাঁদপুর শাখা উদ্বোধন Logo প্রাইভেট হাসপিটাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার কমিটি গঠন সভাপতি ডাঃ মোবারক হোসেন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহীন Logo কচুয়ায় বিশেষ অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত মাদক মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার

পরিবারে ন্যায়বিচার ও সন্তানের অধিকার ইসলাম, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব — তৌফিক সুলতান

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৪:১৭:৫৪ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭৮১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের পারিবারিক জীবনে ন্যায়বিচারের অভাব আজ একটি গভীর সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে। পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টন, সন্তানের প্রতি বৈষম্য, মায়ের প্রতি অবহেলা—এসব যেন অদৃশ্য এক নৈতিক ক্ষয়রোগে সমাজকে আক্রান্ত করছে। সম্প্রতি এক তরুণ তার পিতার অবিচার ও প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চিঠি লিখে সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার ভাষায়, “বাবা জীবিত অবস্থায় আমাদের, ১ম সংসারের সন্তানদের সমান অধিকার দেননি, প্রতারণা ও অবহেলা করেছেন।”
 এই চিঠি শুধু একটি পরিবারের আহাজারি নয়; এটি বাংলাদেশের অসংখ্য অবহেলিত সন্তানের হৃদয়ের আর্তনাদ। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে সামাজিক অবক্ষয়, আইনি দুর্বলতা এবং মানবিক বোধের চরম সংকট।
২. ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ন্যায়বিচারের ভিত্তি হিসেবে পারিবারিক সমতা
ইসলাম পরিবারকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—পিতা যদি জীবিত অবস্থায় সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য করে, তা আল্লাহর কাছে গর্হিত অপরাধ।
 আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে মুমিনগণ! ন্যায়বিচারে অবিচল থাকো, এবং কারও প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের ন্যায় থেকে বিরত না রাখে।” — সূরা আল-মায়েদা (৫:৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে দান-অনুদানে সমতা বজায় রাখো।” — সহীহ বুখারী ও মুসলিম
এগুলো থেকে বোঝা যায়, ইসলাম শুধুমাত্র সম্পত্তির সমতা নয়, মানসিক ও আবেগগত ন্যায়বিচারেরও শিক্ষা দেয়। পিতা যদি কোনো সন্তানের প্রতি অবহেলা করে বা প্রতারণা করে, সে শুধু পারিবারিক নয়, ধর্মীয় অপরাধেও লিপ্ত হয়।
৩. অবিচার ও তার মানসিক প্রভাব
পারিবারিক বৈষম্যের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় সন্তানের মানসিক জগতে। যেই সন্তান ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তার মনে জন্ম নেয় আক্রোশ, অবিশ্বাস ও হতাশা। এই আঘাত আজীবন বহন করতে হয়।
 গবেষণায় দেখা গেছে—পিতামাতার অবিচার, পক্ষপাত বা অবহেলা সন্তানের আত্মসম্মানবোধ ধ্বংস করে দেয়। একজন লাঞ্ছিত সন্তান সমাজে নিজেকে প্রমাণ করতে চায় দ্বিগুণ পরিশ্রমে; আবার কেউ কেউ গভীর মানসিক সংকটে নিমজ্জিত হয়।
 রিয়াদ নামের সেই তরুণ যখন পিতার অবিচারের বিরুদ্ধে লিখছেন, তখন এটি কেবল প্রতিবাদ নয়—এটি এক মানসিক পুনর্জাগরণের প্রকাশ। তিনি দেখিয়েছেন, অন্যায়ের মুখে নীরব থাকা নয়, সত্য প্রকাশ করাই প্রকৃত সাহস।
৪. বাংলাদেশের আইন ও সন্তানের অধিকার
বাংলাদেশের সংবিধান পরিবারকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
 বাংলাদেশ দণ্ডবিধি (Penal Code) ১৮৬০ অনুযায়ী—
ধারা ৩২৫: সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বা শারীরিক নির্যাতনে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।
ধারা ৩৭২ ও ৩৭৪: পরিবারের সদস্যকে মানসিক বা আর্থিক নির্যাতনে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
ধারা ৩৬৪(এ): প্রতারণা, প্ররোচনা বা জোরপূর্বক আটক রাখলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এছাড়াও ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, সন্তানকে যদি পিতা-মাতা ভরণপোষণ না দেন, সন্তান আদালতে মামলা করতে পারে।
 উল্লেখযোগ্য মামলা — আলেয়া বেগম বনাম ল্যান্স নায়েক আবুল কালাম আজাদ (২০১৫) — যেখানে আদালত সন্তানের ভরণপোষণের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ পরিবারে এসব আইন কাগজে থাকে, প্রয়োগে নয়। সামাজিক চাপে, সম্মান রক্ষার ভয়ে, অথবা আর্থিক নির্ভরতার কারণে অনেকেই ন্যায়বিচারের জন্য মুখ খোলেন না।
৫. সমাজে এই অবিচারের প্রভাব
যখন একটি পরিবারে অবিচার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তখন সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ছড়িয়ে পড়ে। সন্তান দেখে, অন্যায়ে সুবিধা পাওয়া যায়, সত্য বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফলে নতুন প্রজন্মের নৈতিক দিক ভেঙে পড়ে।
 পিতামাতার আচরণই সন্তানের প্রথম পাঠ। তাই যদি পিতা অন্যায়ের আশ্রয় নেন, সন্তানরা হয়তো ক্ষণিকের জন্য নীরব থাকে, কিন্তু সমাজের প্রতি তাদের বিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবেই গড়ে ওঠে অবিশ্বাস, হিংসা ও বিভাজনের সমাজ।
৬. রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও নীতিগত সুপারিশ
রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু অপরাধ দমন নয়, পারিবারিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও তার মানবিক কর্তব্য। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ প্রয়োজন:
 ১️⃣ পারিবারিক সালিশ ও কাউন্সেলিং সেল: উপজেলা পর্যায়ে সরকারি সালিশ বোর্ডে পরিবারিক বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
 ২️⃣ সন্তান অধিকার সুরক্ষা আইন: সন্তানদের ভরণপোষণ, সম্পত্তি ও মানসিক নিরাপত্তা রক্ষায় আলাদা আইন প্রণয়ন করা দরকার।
 ৩️⃣ সামাজিক সচেতনতা: মসজিদ, স্কুল ও স্থানীয় সংগঠনগুলোতে ইসলামিক ন্যায়বিচার ও পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।
 ৪️⃣ নারীর সম্মান রক্ষা: প্রতিটি সংসারের মায়ের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করা ইসলামী ও মানবিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে অপরিহার্য।
৭. তরুণ প্রজন্মের সফলতার বার্তা
যে সন্তান অবহেলা, লাঞ্ছনা ও অবিচার সহ্য করেও সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করে, সে কেবল সফল নয়, সে মানবতার প্রতীক। রিয়াদ সেই সাহসী তরুণ—যিনি ব্যথা থেকে প্রতিরোধ গড়েছেন। তিনি সমাজকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন—ন্যায়বিচার বিলম্ব করলে, অবিচারই প্রতিষ্ঠিত হয়।
 তার প্রতিবাদ আমাদের শেখায়—একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ নিজের পরিবার থেকেই শুরু করে সমাজের সংস্কার ঘটাতে পারে।
পরিবারের অবিচার শুধু সম্পত্তি বা অর্থের প্রশ্ন নয়—এটি সমাজের নৈতিক রক্তক্ষয়। ইসলাম ও আইন উভয়ই ন্যায়বিচারকে মানব জীবনের মূল বলে ঘোষণা করেছে।
 অতএব, একজন পিতা যদি সন্তানদের প্রতি বৈষম্য করেন, প্রতারণা বা অবহেলা করেন, তবে তা শুধু পারিবারিক নয়—আল্লাহর দৃষ্টিতে অপরাধ।
 ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মানে শুধু আদালতের রায় নয়; এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, এটি সমাজের শান্তির শিকড়।
✎ “ন্যায়বিচার বিলম্বকারী ও অন্যায়ের সহযোগী—দুজনই একই পাপে দগ্ধ।”
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান প্রেস সচিবের

পরিবারে ন্যায়বিচার ও সন্তানের অধিকার ইসলাম, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব — তৌফিক সুলতান

আপডেট সময় : ০৪:১৭:৫৪ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশের পারিবারিক জীবনে ন্যায়বিচারের অভাব আজ একটি গভীর সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে। পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টন, সন্তানের প্রতি বৈষম্য, মায়ের প্রতি অবহেলা—এসব যেন অদৃশ্য এক নৈতিক ক্ষয়রোগে সমাজকে আক্রান্ত করছে। সম্প্রতি এক তরুণ তার পিতার অবিচার ও প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চিঠি লিখে সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার ভাষায়, “বাবা জীবিত অবস্থায় আমাদের, ১ম সংসারের সন্তানদের সমান অধিকার দেননি, প্রতারণা ও অবহেলা করেছেন।”
 এই চিঠি শুধু একটি পরিবারের আহাজারি নয়; এটি বাংলাদেশের অসংখ্য অবহেলিত সন্তানের হৃদয়ের আর্তনাদ। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে সামাজিক অবক্ষয়, আইনি দুর্বলতা এবং মানবিক বোধের চরম সংকট।
২. ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ন্যায়বিচারের ভিত্তি হিসেবে পারিবারিক সমতা
ইসলাম পরিবারকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—পিতা যদি জীবিত অবস্থায় সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য করে, তা আল্লাহর কাছে গর্হিত অপরাধ।
 আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে মুমিনগণ! ন্যায়বিচারে অবিচল থাকো, এবং কারও প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের ন্যায় থেকে বিরত না রাখে।” — সূরা আল-মায়েদা (৫:৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে দান-অনুদানে সমতা বজায় রাখো।” — সহীহ বুখারী ও মুসলিম
এগুলো থেকে বোঝা যায়, ইসলাম শুধুমাত্র সম্পত্তির সমতা নয়, মানসিক ও আবেগগত ন্যায়বিচারেরও শিক্ষা দেয়। পিতা যদি কোনো সন্তানের প্রতি অবহেলা করে বা প্রতারণা করে, সে শুধু পারিবারিক নয়, ধর্মীয় অপরাধেও লিপ্ত হয়।
৩. অবিচার ও তার মানসিক প্রভাব
পারিবারিক বৈষম্যের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় সন্তানের মানসিক জগতে। যেই সন্তান ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তার মনে জন্ম নেয় আক্রোশ, অবিশ্বাস ও হতাশা। এই আঘাত আজীবন বহন করতে হয়।
 গবেষণায় দেখা গেছে—পিতামাতার অবিচার, পক্ষপাত বা অবহেলা সন্তানের আত্মসম্মানবোধ ধ্বংস করে দেয়। একজন লাঞ্ছিত সন্তান সমাজে নিজেকে প্রমাণ করতে চায় দ্বিগুণ পরিশ্রমে; আবার কেউ কেউ গভীর মানসিক সংকটে নিমজ্জিত হয়।
 রিয়াদ নামের সেই তরুণ যখন পিতার অবিচারের বিরুদ্ধে লিখছেন, তখন এটি কেবল প্রতিবাদ নয়—এটি এক মানসিক পুনর্জাগরণের প্রকাশ। তিনি দেখিয়েছেন, অন্যায়ের মুখে নীরব থাকা নয়, সত্য প্রকাশ করাই প্রকৃত সাহস।
৪. বাংলাদেশের আইন ও সন্তানের অধিকার
বাংলাদেশের সংবিধান পরিবারকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
 বাংলাদেশ দণ্ডবিধি (Penal Code) ১৮৬০ অনুযায়ী—
ধারা ৩২৫: সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বা শারীরিক নির্যাতনে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।
ধারা ৩৭২ ও ৩৭৪: পরিবারের সদস্যকে মানসিক বা আর্থিক নির্যাতনে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
ধারা ৩৬৪(এ): প্রতারণা, প্ররোচনা বা জোরপূর্বক আটক রাখলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এছাড়াও ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, সন্তানকে যদি পিতা-মাতা ভরণপোষণ না দেন, সন্তান আদালতে মামলা করতে পারে।
 উল্লেখযোগ্য মামলা — আলেয়া বেগম বনাম ল্যান্স নায়েক আবুল কালাম আজাদ (২০১৫) — যেখানে আদালত সন্তানের ভরণপোষণের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ পরিবারে এসব আইন কাগজে থাকে, প্রয়োগে নয়। সামাজিক চাপে, সম্মান রক্ষার ভয়ে, অথবা আর্থিক নির্ভরতার কারণে অনেকেই ন্যায়বিচারের জন্য মুখ খোলেন না।
৫. সমাজে এই অবিচারের প্রভাব
যখন একটি পরিবারে অবিচার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তখন সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ছড়িয়ে পড়ে। সন্তান দেখে, অন্যায়ে সুবিধা পাওয়া যায়, সত্য বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফলে নতুন প্রজন্মের নৈতিক দিক ভেঙে পড়ে।
 পিতামাতার আচরণই সন্তানের প্রথম পাঠ। তাই যদি পিতা অন্যায়ের আশ্রয় নেন, সন্তানরা হয়তো ক্ষণিকের জন্য নীরব থাকে, কিন্তু সমাজের প্রতি তাদের বিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবেই গড়ে ওঠে অবিশ্বাস, হিংসা ও বিভাজনের সমাজ।
৬. রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও নীতিগত সুপারিশ
রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু অপরাধ দমন নয়, পারিবারিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও তার মানবিক কর্তব্য। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ প্রয়োজন:
 ১️⃣ পারিবারিক সালিশ ও কাউন্সেলিং সেল: উপজেলা পর্যায়ে সরকারি সালিশ বোর্ডে পরিবারিক বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
 ২️⃣ সন্তান অধিকার সুরক্ষা আইন: সন্তানদের ভরণপোষণ, সম্পত্তি ও মানসিক নিরাপত্তা রক্ষায় আলাদা আইন প্রণয়ন করা দরকার।
 ৩️⃣ সামাজিক সচেতনতা: মসজিদ, স্কুল ও স্থানীয় সংগঠনগুলোতে ইসলামিক ন্যায়বিচার ও পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।
 ৪️⃣ নারীর সম্মান রক্ষা: প্রতিটি সংসারের মায়ের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করা ইসলামী ও মানবিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে অপরিহার্য।
৭. তরুণ প্রজন্মের সফলতার বার্তা
যে সন্তান অবহেলা, লাঞ্ছনা ও অবিচার সহ্য করেও সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করে, সে কেবল সফল নয়, সে মানবতার প্রতীক। রিয়াদ সেই সাহসী তরুণ—যিনি ব্যথা থেকে প্রতিরোধ গড়েছেন। তিনি সমাজকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন—ন্যায়বিচার বিলম্ব করলে, অবিচারই প্রতিষ্ঠিত হয়।
 তার প্রতিবাদ আমাদের শেখায়—একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ নিজের পরিবার থেকেই শুরু করে সমাজের সংস্কার ঘটাতে পারে।
পরিবারের অবিচার শুধু সম্পত্তি বা অর্থের প্রশ্ন নয়—এটি সমাজের নৈতিক রক্তক্ষয়। ইসলাম ও আইন উভয়ই ন্যায়বিচারকে মানব জীবনের মূল বলে ঘোষণা করেছে।
 অতএব, একজন পিতা যদি সন্তানদের প্রতি বৈষম্য করেন, প্রতারণা বা অবহেলা করেন, তবে তা শুধু পারিবারিক নয়—আল্লাহর দৃষ্টিতে অপরাধ।
 ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মানে শুধু আদালতের রায় নয়; এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, এটি সমাজের শান্তির শিকড়।
✎ “ন্যায়বিচার বিলম্বকারী ও অন্যায়ের সহযোগী—দুজনই একই পাপে দগ্ধ।”