কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের কিছু নাম

0
6

মৃত্যুর পর সবার পুনরুত্থানের নাম কিয়ামত। এই দিন প্রত্যেকে তার আমলনামা (ক্রিয়াকর্মের প্রমাণপত্র) অনুযায়ী দোজখ কিংবা জাহান্নামে যাবে। যে জিনিস যতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়, তার নামও ততো বেশি হয়। সে হিসেবে কিয়ামত বা পুনরুত্থানের অনেক নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে। নিম্নে কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের নানা নাম নিয়ে আলোচনা তুলে ধরা হলো—

কিয়ামতের দিন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ—তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি কিয়ামতের দিন তোমাদের অবশ্যই একত্র করবেন; যে দিনের (আসার) ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৭)

শেষ দিন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পুণ্য তো কেবল এটাই নয় যে তোমরা নিজেদের চেহারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং পুণ্য হল (সেই ব্যক্তির কার্যাবলী) যে ঈমান রাখে আল্লাহর, শেষ দিনের ও ফেরেশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীগণের প্রতি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)

আসন্ন দিন : পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, (হে রাসুল!) তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে, যখন বেদম কষ্টে মানুষের প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে যাবে। জালেমদের থাকবে না কোন বন্ধু এবং কোন সুপারিশকারী, যার কথা গ্রহণ করা হবে।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১৮)

সাক্ষাতের দিন : পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি, তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা নিজ হুকুমে রুহ (অর্থাৎ ওহী) নাজিল করেন। এজন্য যে, সে সাক্ষাৎ দিবস সম্পর্কে সতর্ক করবে।’(সুরা : মুমিন, আয়াত : ১৫)

পুনরুত্থান দিবস : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছ, ‘আর যাদের ইলম ও ঈমান দেওয়া হয়েছে তারা বলবে তোমরা তো আল্লাহর লেখা তাকদির অনুসারে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছ—এটাই সেই পুনরুত্থান দিবস কিন্তু তোমরা তো বিশ্বাস করতে না।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৫৬)

সমবেত হওয়ার দিন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (দ্বিতীয় জীবন হবে সেই দিন), যেদিন আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন একত্রীকরণের দিনে। সেটা কিছু লোক কর্তৃক অন্যদের আক্ষেপে ফেলার দিন। আর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে ও সত্কর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার নিচে নহর প্রবাহিত হতে থাকবে। তাতে তারা সর্বদা থাকবে এটাই মহা সাফল্য।’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ৯)

আর্তনাদের দিন : পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য ভয় করি আর্তনাদ-দিবসের।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৩২)
অর্থাৎ যেদিন হবে অত্যন্ত বিভীষিকাময়। মানুষ ভয়ে আর্তনাদ করবে।

হিসাব দিবস : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, মুসা বলল, হিসাব দিবসে বিশ্বাস করে না—এমন প্রত্যেক অহংকারী থেকে আমি সেই সত্তার আশ্রয় গ্রহণ করেছি, যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ২৭)

বিকট আওয়াজের দিন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পরিশেষে যখন কান বিদীর্ণকারী আওয়াজ এসে পড়বে, (তখন এ অকৃতজ্ঞতার পরিণাম টের পাবে।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৩)

অর্থাৎ এর দ্বারা কিয়ামত দিবস বুঝানো হয়েছে, যার সূচনা হবে সিংগার ফুত্কার দ্বারা।

আক্ষেপের দিন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) তাদের আক্ষেপের দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন, যেদিন সব বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যাবে, অথচ মানুষ গাফিলতিতে পড়ে আছে এবং তারা ঈমান আনছে না।’ (সুরা : মারয়াম, আয়াত : ৩৯)
আস-সায়া (সময়) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামত অবশ্যই আসবে। আমি তা (অর্থাৎ তার সময়) গোপন রাখতে চাই। যাতে প্রত্যেকেই তার কৃতকর্মের প্রতিফল লাভ করে।’ (সুরা : তোয়াহা, আয়াত : ১৫)
ভীতির দিন: পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে। এটাই সেই দিন যে সম্পর্কে সতর্ক করা হতো।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ২০)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।