যে পাঁচ কাজে মুমিনের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়

0
8

ইসলাম ব্যক্তির আত্মমর্যাদাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে মুমিনের আত্মমর্যাদা সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছে, ‘সব হারাম আত্মমর্যাদার পরিপন্থী’। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কেউ নেই। এজন্য তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতা হারাম করেছেন। প্রশংসা আল্লাহর সবচেয়ে পছন্দের। তাই নিজের প্রশংসা নিজে করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৫৮)

আত্মমর্যাদা ঈমানের অংশ : আত্মমর্যাদা মানুষকে সত্ হতে এবং সত্পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে—তাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মমর্যাদা ঈমানের অংশ আর আচরণে উগ্রতা কপটতার লক্ষণ।’ (সুনানে বায়হাকি : ১০/২২)

যেসব আমলে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়
মুমিনের আত্মমর্যাদার বিকাশ ঘটে আল্লাহর আনুগত্য ও সত্জীবন যাপনের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পরিচ্ছন্ন জীবন কাটানোর মাধ্যমে। এই পরিচ্ছন্ন জীবনের অংশ হিসেবে ইসলামী শরিয়ত কিছু বিধান প্রণয়ন করেছে। যেমন—

১. নারীর পর্দা : মানবসভ্যতার সূচনা থেকে নারীর সম্মান ও সম্ভ্রমকে তার পরিবার ও গোত্র নিজের সম্মান হিসেবে গণ্য করে। বিশেষত পুরুষের জন্য তার স্ত্রীর সম্মান ও সম্ভ্রম আত্মসম্মানের বিষয়। তাই ইসলাম নারীর সুরক্ষার জন্য পর্দার বিধান ফরজ করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা (মুমিন নারী) যেন সাধারণত প্রকাশ পায় এমন ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)
২. দৃষ্টি সংযত করা : কু-দৃষ্টি নারীকে বিব্রত ও লজ্জিত করে এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যদের আত্মমর্যাদা তাতে আহত হয়। কু-দৃষ্টি নারী-পুরুষ উভয়কে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। তাই ইসলাম পুরুষ ও নারী উভয়কে দৃষ্টি অবনত রাখতে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)
৩. লজ্জা ও শালীনতা : লজ্জাহীনতা মানুষকে ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে। নির্লজ্জ মানুষ যে কোন কাজ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) লজ্জাকে ঈমানের অংশ এবং সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘লজ্জা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪)
অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৭)
৪. সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা : নিজের ও পরিবারে সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে কেউ নিহত হলে ইসলাম তাকে শহিদের মর্যাদা দান করেছেন। তবে তা অবশ্যই মিথ্যা ও জাগতিক অহঙ্কার প্রসূত সম্মানবোধ নয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহিদ, যে ব্যক্তি তার পরিবারের (সম্মান রক্ষার) জন্য নিহত সে শহিদ, যে তার দ্বিন রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহিদ, যে আত্মরক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহিদ।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪০৯৫)
৫. আত্মশুদ্ধি : ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা ও আত্মমর্যাদা বোধ লাভের পূর্বশর্ত আত্মা পরিশুদ্ধ করা। কেননা লোভ, লালসা, অহঙ্কার, ঘৃণা, হিংসা, ক্রোধ ইত্যাদি মানবীয় রিপু মানুষকে আত্মমর্যাদার পরিপন্থী ও পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সফল যে আত্মা পরিশুদ্ধ করল এবং ক্ষতিগ্রস্ত যে তা কলুষিত করল।’ (সুরা আশ-শামস, আয়াত : ৯-১০)

আত্মমর্যাদাহীন মানুষের নিন্দা : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আত্মমর্যাদাহীন নির্লজ্জ মানুষের নিন্দা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে, তারা বলে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষকে এই কাজ করতে দেখেছি এবং আল্লাহর আমাদের এর নির্দেশ দিয়েছেন। বলুন! নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ; ২৮)

আল্লাহ সবাইকে আত্মমর্যাদার দৌলত দান করুন। আমিন।