শিরোনাম :
Logo হাসিনার গণহত্যা মামলার প্রতিবেদন জমা; মিলেছে অপরাধের প্রমাণ Logo কচুয়ায় টানা ৪১ দিন জামাতে নামাজ পড়ে সাইকেল পুরস্কার পেল ১০ শিশু-কিশোর Logo চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০ Logo দেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের মতো কিছুই ঘটেনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo কচুয়ায় নিরাপদ সড়ক চাই উদ্যোগে ডা. আমিনুল ইসলামকে ফুলেল সংবর্ধনা Logo আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ কর্তৃক মাদক সম্রজ্ঞী মিনি বেগম মাদক বিক্রয়কালে হাতেনাতে গ্রেফতার Logo ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের আয়োজন Logo নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে না হলে দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে, রয়টার্সকে মঈন খান Logo কলকাতাকে উড়িয়ে মুম্বাইয়ের প্রথম জয় Logo অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে চমক, তালিকায় ২ টেস্ট খেলা ব্যাটার

যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে জামালপুরের পাকরুল গ্রাম

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১০:৩৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭২৮ বার পড়া হয়েছে

যমুনা নদীর ভাঙনে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রাম। গত ৩ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৪০০ পরিবারের ভিটেমাটি ও আবাদি জমি। বিলীন হয়েছে স্কুল ও মসজিদ।

সবশেষ, ৩ মাসের ভাঙনেই প্রায় ১৫০টি পরিবার সহায় সম্বল হারিয়েছেন।

ভাঙন এখনো অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুর এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

নদীর আশেপাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। সব হারানো মানুষগুলোর শেষ আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে।

এখনও হুমকির মুখে পাকরুল এলাকার শত শত বসতবাড়ি, আশ্রয়ণ কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলি জমিসহ রেড ক্রিসেন্ট কমিউনিটি মিটিং সেন্টার এবং হিদাগাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের গ্রাম হিদাগাড়ী ও কোয়ালীকান্দি গ্রাম।

ভাঙনের শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, ভাঙন শুরু হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিওব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তা কোনো কাজেই আসে না। বরং বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে ওইসব জিও ব্যাগ নদীগর্ভে বিলীয় হয়ে যায়। তাই জিওব্যাগ নয়, নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবি স্থানীয়রা।

রিনা বেগম, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি জানান, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণে ঠাঁই নিয়েছি। কিন্তু এখন সেই আশ্রায়ণ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পথে! এখন আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো?

নদীভাঙনের শিকার আরেক ব্যক্তি অহিরুদ্দি মোল্লা বলেন, এ বছর নদী ভাঙনে আমার বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ও সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে কোনো রকমে মাথা গুজে আছি। সেই জমিও যদি বিলীন হয় তাহলে আমাদের অন্যদেশে চলে যেতে হবে। তাই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ইসমাইল বলেন, কী বলমু! বলার মতো ভাষা নেই। এই যমুনা নদী আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। এখন আমরা অন্যের জায়গায় কোনোমতে বসবাস করছি। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে হয়ত অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির বলেন, গত ৩ বছরে ভাঙনে আমাদের পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার যদি ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয় তবে পাকরুল এলাকার ৪০ ভাগ এখনও রক্ষা করা সম্ভব। তাই অতি দ্রুত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাঙনরোধে যেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) -এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১৫শ মিটার জায়গায় ভাঙন ঠেকাতে ১৬শ মিটার এলাকা জুড়ে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে ১৫শ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই লাঘব হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হাসিনার গণহত্যা মামলার প্রতিবেদন জমা; মিলেছে অপরাধের প্রমাণ

যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে জামালপুরের পাকরুল গ্রাম

আপডেট সময় : ১০:৩৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যমুনা নদীর ভাঙনে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রাম। গত ৩ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৪০০ পরিবারের ভিটেমাটি ও আবাদি জমি। বিলীন হয়েছে স্কুল ও মসজিদ।

সবশেষ, ৩ মাসের ভাঙনেই প্রায় ১৫০টি পরিবার সহায় সম্বল হারিয়েছেন।

ভাঙন এখনো অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুর এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

নদীর আশেপাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। সব হারানো মানুষগুলোর শেষ আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে।

এখনও হুমকির মুখে পাকরুল এলাকার শত শত বসতবাড়ি, আশ্রয়ণ কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলি জমিসহ রেড ক্রিসেন্ট কমিউনিটি মিটিং সেন্টার এবং হিদাগাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের গ্রাম হিদাগাড়ী ও কোয়ালীকান্দি গ্রাম।

ভাঙনের শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, ভাঙন শুরু হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিওব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তা কোনো কাজেই আসে না। বরং বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে ওইসব জিও ব্যাগ নদীগর্ভে বিলীয় হয়ে যায়। তাই জিওব্যাগ নয়, নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবি স্থানীয়রা।

রিনা বেগম, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি জানান, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণে ঠাঁই নিয়েছি। কিন্তু এখন সেই আশ্রায়ণ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পথে! এখন আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো?

নদীভাঙনের শিকার আরেক ব্যক্তি অহিরুদ্দি মোল্লা বলেন, এ বছর নদী ভাঙনে আমার বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ও সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে কোনো রকমে মাথা গুজে আছি। সেই জমিও যদি বিলীন হয় তাহলে আমাদের অন্যদেশে চলে যেতে হবে। তাই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ইসমাইল বলেন, কী বলমু! বলার মতো ভাষা নেই। এই যমুনা নদী আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। এখন আমরা অন্যের জায়গায় কোনোমতে বসবাস করছি। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে হয়ত অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির বলেন, গত ৩ বছরে ভাঙনে আমাদের পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার যদি ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয় তবে পাকরুল এলাকার ৪০ ভাগ এখনও রক্ষা করা সম্ভব। তাই অতি দ্রুত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাঙনরোধে যেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) -এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১৫শ মিটার জায়গায় ভাঙন ঠেকাতে ১৬শ মিটার এলাকা জুড়ে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে ১৫শ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই লাঘব হবে।