শুক্রবার | ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত Logo চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের আলো সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প Logo ফের ভূমিকম্প Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী Logo কুবির বাংলা বিভাগের বাংলা নাটক বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন Logo মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত Logo মাগুরার শ্রীপুরে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৫ এর উদ্বোধন Logo পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ প্রদর্শনী Logo আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী বাবু খান

যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে জামালপুরের পাকরুল গ্রাম

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১০:৩৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭৯৯ বার পড়া হয়েছে

যমুনা নদীর ভাঙনে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রাম। গত ৩ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৪০০ পরিবারের ভিটেমাটি ও আবাদি জমি। বিলীন হয়েছে স্কুল ও মসজিদ।

সবশেষ, ৩ মাসের ভাঙনেই প্রায় ১৫০টি পরিবার সহায় সম্বল হারিয়েছেন।

ভাঙন এখনো অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুর এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

নদীর আশেপাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। সব হারানো মানুষগুলোর শেষ আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে।

এখনও হুমকির মুখে পাকরুল এলাকার শত শত বসতবাড়ি, আশ্রয়ণ কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলি জমিসহ রেড ক্রিসেন্ট কমিউনিটি মিটিং সেন্টার এবং হিদাগাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের গ্রাম হিদাগাড়ী ও কোয়ালীকান্দি গ্রাম।

ভাঙনের শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, ভাঙন শুরু হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিওব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তা কোনো কাজেই আসে না। বরং বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে ওইসব জিও ব্যাগ নদীগর্ভে বিলীয় হয়ে যায়। তাই জিওব্যাগ নয়, নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবি স্থানীয়রা।

রিনা বেগম, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি জানান, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণে ঠাঁই নিয়েছি। কিন্তু এখন সেই আশ্রায়ণ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পথে! এখন আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো?

নদীভাঙনের শিকার আরেক ব্যক্তি অহিরুদ্দি মোল্লা বলেন, এ বছর নদী ভাঙনে আমার বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ও সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে কোনো রকমে মাথা গুজে আছি। সেই জমিও যদি বিলীন হয় তাহলে আমাদের অন্যদেশে চলে যেতে হবে। তাই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ইসমাইল বলেন, কী বলমু! বলার মতো ভাষা নেই। এই যমুনা নদী আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। এখন আমরা অন্যের জায়গায় কোনোমতে বসবাস করছি। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে হয়ত অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির বলেন, গত ৩ বছরে ভাঙনে আমাদের পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার যদি ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয় তবে পাকরুল এলাকার ৪০ ভাগ এখনও রক্ষা করা সম্ভব। তাই অতি দ্রুত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাঙনরোধে যেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) -এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১৫শ মিটার জায়গায় ভাঙন ঠেকাতে ১৬শ মিটার এলাকা জুড়ে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে ১৫শ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই লাঘব হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী

যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে জামালপুরের পাকরুল গ্রাম

আপডেট সময় : ১০:৩৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যমুনা নদীর ভাঙনে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রাম। গত ৩ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৪০০ পরিবারের ভিটেমাটি ও আবাদি জমি। বিলীন হয়েছে স্কুল ও মসজিদ।

সবশেষ, ৩ মাসের ভাঙনেই প্রায় ১৫০টি পরিবার সহায় সম্বল হারিয়েছেন।

ভাঙন এখনো অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুর এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

নদীর আশেপাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। সব হারানো মানুষগুলোর শেষ আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে।

এখনও হুমকির মুখে পাকরুল এলাকার শত শত বসতবাড়ি, আশ্রয়ণ কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলি জমিসহ রেড ক্রিসেন্ট কমিউনিটি মিটিং সেন্টার এবং হিদাগাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের গ্রাম হিদাগাড়ী ও কোয়ালীকান্দি গ্রাম।

ভাঙনের শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, ভাঙন শুরু হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিওব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তা কোনো কাজেই আসে না। বরং বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে ওইসব জিও ব্যাগ নদীগর্ভে বিলীয় হয়ে যায়। তাই জিওব্যাগ নয়, নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবি স্থানীয়রা।

রিনা বেগম, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি জানান, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রায়ণে ঠাঁই নিয়েছি। কিন্তু এখন সেই আশ্রায়ণ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পথে! এখন আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো?

নদীভাঙনের শিকার আরেক ব্যক্তি অহিরুদ্দি মোল্লা বলেন, এ বছর নদী ভাঙনে আমার বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ও সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে কোনো রকমে মাথা গুজে আছি। সেই জমিও যদি বিলীন হয় তাহলে আমাদের অন্যদেশে চলে যেতে হবে। তাই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ইসমাইল বলেন, কী বলমু! বলার মতো ভাষা নেই। এই যমুনা নদী আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। এখন আমরা অন্যের জায়গায় কোনোমতে বসবাস করছি। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে হয়ত অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির বলেন, গত ৩ বছরে ভাঙনে আমাদের পাকরুল গ্রামের ৬০ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার যদি ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয় তবে পাকরুল এলাকার ৪০ ভাগ এখনও রক্ষা করা সম্ভব। তাই অতি দ্রুত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাঙনরোধে যেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) -এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১৫শ মিটার জায়গায় ভাঙন ঠেকাতে ১৬শ মিটার এলাকা জুড়ে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে ১৫শ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই লাঘব হবে।