ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের সমাপ্তি এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি শেষে তারা ক্যাম্পাসজুড়ে একটি মৌন মিছিলও করেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি আদায়ে অগ্রগতি না হলে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাবেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—এটি নিঃসন্দেহে একটি রহস্যজনক মৃত্যু। প্রশাসনের কাছে আমাদের স্পষ্ট দাবি ছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও প্রশাসন তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসনের কথাবার্তার সাথে কার্যকলাপের মিল নেই। তারা এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনায়ও নিচ্ছে না।”
তারা আরও বলেন, “আমরা যে দাবি তুলেছি, প্রশাসন মৌখিকভাবে তা মেনে নিলেও বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। বরং আমাদের আবেগের প্রশ্ন তোলে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে যাব।”
শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম সাকিব বলেন, “আন্দোলন কীভাবে করবো, সেটা নাকি প্রক্টর স্যার আমাদের বলে দেন! এটা লজ্জাজনক। তিনি তার নিরাপত্তার ও অবহেলার দায় কখনোই এড়াতে পারেন না। বরং আন্দোলন বানচাল করতে প্রশাসন এখন নানা কৌশল নিচ্ছে। আমরা এটা কখনোই হতে দিবো না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রশাসন আমাদের বলছে—তোমরা দাবিদাওয়া দাও। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কীসের ভিত্তিতে নতুন দাবি দেবো, যখন পুরনো দাবিগুলোর বাস্তবায়নই হয়নি? যদি শিগগিরই এসব দাবি বাস্তবায়ন না হয়, বরং উল্টো আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে আমরা বাধ্য হবো আমরণ অনশন শুরু করতে। তখন প্রশাসনের করণীয় কিছুই থাকবে না।”
এর আগে, গত ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
মৃত্যুর পরদিন (১৮ জুলাই) প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে হল প্রশাসন শহিদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে সাজিদ আবদুল্লাহ্’র মৃত্যু হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু মানতে নারাজ তার সহপাঠী বন্ধু ও অভিভাবকরা। তাই মৃত্যুকে নিয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিরাজ করছে উত্তেজনা।