বুধবার | ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ Logo সদরপুরে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস পালিত Logo খুবিতে রফিক আজম ট্রাভেল স্কলারশিপ চালুর লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন সিবি’এর দোয়া মাহফিল Logo জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে হবে— আন্তর্জাতিক সেমিনারে নোবিপ্রবি উপাচার্য Logo পুলিশের অভিযানে পলাশবাড়ীতে চোরাই মাল উদ্ধার : দুই ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আটক Logo পলাশবাড়ীতে জুলাই যোদ্ধার বাবার প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের অভিযোগ Logo পর্যটক সেন্টমার্টিন পৌঁছলে ফুল দিয়ে পর্যটকদের বরণ Logo বিএনপি চেয়ারপার্সনের রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় জীবননগরে ছাত্রদল ও শ্রমিকদের দোয়া

‘মাইরা তো আমরা ফেলছি, এখন কী করবা’, বলা সেই ওসির নেই সম্পদের অভাব

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০১:২৯:৫২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭৪৪ বার পড়া হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তৎকালীন পল্লবী থানার ওসি অপূর্ব হাসানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়। যেই ভিডিওতে তাকে দম্ভভরা কণ্ঠে ছাত্রদের উদ্দেশে বলতে শোনা যাচ্ছিল, ‘মাইরা তো আমরা ফেলছি, এখন কী করবা?’

সেই অপূর্ব হাসানের বিরুদ্ধে এবার অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রশ্রয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। নানা অপকর্মের মধ্যে দিয়ে তিনি ফ্ল্যাট-প্লট-গাড়ি-বাড়ি-খামার-ঘের সব করেছেন।

সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকায় অপূর্ব হাসানের অন্তত চারটি ফ্ল্যাট, প্রাইভেট গাড়ি, প্লট, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় আট একর জমি, গরুর খামার ও মাছের ঘের রয়েছে। এছাড়া ভাটারায় যে ফ্ল্যাটে অপূর্ব পরিবার নিয়ে থাকেন, সেই ভবনে বেনামে তার আরও ৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ ও নামে-বেনামে তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অপূর্ব হাসানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ কারণে এক সময় তিনি ‘ক্ষমতাবান ওসি’ হয়ে ওঠেন।

কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়ার সাধুহাটি গ্রামে অপূর্বর পৈতৃক বাড়ি। তার বাবা প্রয়াত হাসেম আলী মিয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন। গ্রামে হাসেম দারোগা নামে পরিচিত ছিলেন। ভিটে ছাড়া ৫-৬ বিঘা কৃষিজমি রেখে গেছেন তিনি।

অপূর্বরা মোট ছয় ভাইবোন। এক ভাই মুফতি মাওলানা আহসান হাবিব এনজেল গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেটি নিজেই পরিচালনা করেন। আরেক ভাই খাজা নেওয়াজ আওয়ামী লীগের টিকিটে কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের পর পর দুইবার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রকাশ্যে তার কোনো পেশা নেই। রাজনীতিকেই তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

অপূর্ব হাসান ২০০২ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। শুরুতে মূল বেতন ছিল ২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সর্বসাকল্যে বেতন ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকার মতো। ২০১২ সালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান তিনি। বর্তমান তার বেতন সাকল্যে ৬৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২২ বছরের চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ বেতন ধরলেও ১ কোটি টাকার বেশি নয়। তাহলে সরকারি এই কর্মকর্তা কীভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানালেন, এখন সেই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে পল্লবী এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর অতি বলপ্রয়োগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে তাই হয়েছে মামলা। এছাড়া যশোরে তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও গুমের মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১২ আগস্ট অপূর্বকে ঠাকুরগাঁও ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়।

তবে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন অপূর্ব হাসান এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, বদলি নিতেন নিজের পছন্দের থানায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অপূর্ব  যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা, যশোরের কোতোয়ালি, রাজধানীর তেজগাঁও এবং সর্বশেষ পল্লবী থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বদলি হয়ে ঢাকায় ফেরার আগে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি থাকাকালীন সময়ে স্বর্ণ চোরাকারবারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে অপূর্বের। তিনি ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত যশোর বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি ছিলেন। এ সময় কুটখালী চোরাচালানি ঘাটের সিন্ডিকেট প্রধান নাসির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় তার। নাসির ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র, ফেনসিডিল ও গরু আনতেন আর বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ ও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখি পাচার করতেন। এসব কাজে নাসিরকে ওসি অপূর্ব সহায়তা করতেন বলে বেনাপোলের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেনাপোল পোর্ট থানায় ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন অপূর্ব স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনাসহ তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে অপূর্ব সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান।

জানা গেছে, রাজধানীর একাধিক আবাসিক এলাকায় প্লট রয়েছে অপূর্ব হাসানের। বনশ্রীর ‌‘সি’ ব্লকের আলিশান পুলিশ পার্ক ভবনে অপূর্বর চারটি ফ্ল্যাট ছিল। এর মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে আছে তিনটি। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট। দুটি ফ্ল্যাটের নম্বর পাওয়া গেছে, এ-২ এবং ই-৪। তৃতীয় ফ্ল্যাটটি কয়েক মাস আগে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। সেটির কাগজপত্র এখনও নিজের নামে করেননি।

জাতীয় ওই দৈনিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ভাটারার নয়ানগরের ২ নম্বর রোডের (মিষ্টি গলি) ১৭ নম্বর ভবনের ৬ তলায় নিজের কেনা ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন অপূর্ব হাসান। ‌আটতলা ভবনটির প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট। একেকটির আয়তন ১ হাজার ৪০০ বর্গফুট। অপূর্ব হাসান ছয় তলার দুটি ইউনিট একটিতে (২৮০০ বর্গফুট) রূপান্তরিত করে বসবাস করতেন। তবে ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর দুটি ইউনিটের মাঝখানে দেয়াল তুলে আলাদা করা হয়েছে। এখন ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের একটিতে বাস করেন।

অপূর্বের ঘনিষ্ঠরাই জানিয়েছেন, ওই ভবনে অপূর্ব হাসানের আরও ৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আইনি জটিলতায় পড়ার আশঙ্কায় সেগুলো মালিক পক্ষের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে নেননি। এ ব্যাপারে ভবনের মালিক হাফিজ কামাল জানান, ৯টি ফ্ল্যাট তিনি এখনও বিক্রি করেননি। তবে ওই ভবনে অপূর্ব হাসানের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

জানা গেছে, নিজ গ্রাম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর রাতইল ইউনিয়নে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে ২ একর জমিতে মাছের ঘের করেছেন অপূর্ব হাসান। তার মামাতো ভাই রুহুল আমিন সেটি দেখাশোনা করেন। এছাড়া সাধুহাটি এলাকায় ফয়সাল এগ্রো নামে একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এটি দেখভাল করেন তার আত্মীয় সাবেক ইউপি সদস্য আরোজ আলী।

এলাকাবাসী জানায়, আরোজ আলীর এত বড় গরুর খামার করার আর্থিক সামর্থ্য নেই। খামারটির মালিক অপূর্ব। খামারে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করা হয়। কয়েক মাস আগে ৫০টি বিক্রি করা হয়। সর্বশেষ ১৪টি ছিল। সম্প্রতি সেগুলোও বিক্রি শুরু করে। তবে এ বিষয়ে আরোজ আলীর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপূর্ব হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি দাবি করেন, ‘আমার চাকরির টাকা, বাবার সম্পদ, এসব দিয়ে ফ্ল্যাট করেছি। আমার গরুর খামার নেই। সেটা আরোজ আলীদের। ’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ

‘মাইরা তো আমরা ফেলছি, এখন কী করবা’, বলা সেই ওসির নেই সম্পদের অভাব

আপডেট সময় : ০১:২৯:৫২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তৎকালীন পল্লবী থানার ওসি অপূর্ব হাসানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়। যেই ভিডিওতে তাকে দম্ভভরা কণ্ঠে ছাত্রদের উদ্দেশে বলতে শোনা যাচ্ছিল, ‘মাইরা তো আমরা ফেলছি, এখন কী করবা?’

সেই অপূর্ব হাসানের বিরুদ্ধে এবার অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রশ্রয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। নানা অপকর্মের মধ্যে দিয়ে তিনি ফ্ল্যাট-প্লট-গাড়ি-বাড়ি-খামার-ঘের সব করেছেন।

সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকায় অপূর্ব হাসানের অন্তত চারটি ফ্ল্যাট, প্রাইভেট গাড়ি, প্লট, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় আট একর জমি, গরুর খামার ও মাছের ঘের রয়েছে। এছাড়া ভাটারায় যে ফ্ল্যাটে অপূর্ব পরিবার নিয়ে থাকেন, সেই ভবনে বেনামে তার আরও ৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ ও নামে-বেনামে তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অপূর্ব হাসানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ কারণে এক সময় তিনি ‘ক্ষমতাবান ওসি’ হয়ে ওঠেন।

কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়ার সাধুহাটি গ্রামে অপূর্বর পৈতৃক বাড়ি। তার বাবা প্রয়াত হাসেম আলী মিয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন। গ্রামে হাসেম দারোগা নামে পরিচিত ছিলেন। ভিটে ছাড়া ৫-৬ বিঘা কৃষিজমি রেখে গেছেন তিনি।

অপূর্বরা মোট ছয় ভাইবোন। এক ভাই মুফতি মাওলানা আহসান হাবিব এনজেল গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেটি নিজেই পরিচালনা করেন। আরেক ভাই খাজা নেওয়াজ আওয়ামী লীগের টিকিটে কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের পর পর দুইবার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রকাশ্যে তার কোনো পেশা নেই। রাজনীতিকেই তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

অপূর্ব হাসান ২০০২ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। শুরুতে মূল বেতন ছিল ২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সর্বসাকল্যে বেতন ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকার মতো। ২০১২ সালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান তিনি। বর্তমান তার বেতন সাকল্যে ৬৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২২ বছরের চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ বেতন ধরলেও ১ কোটি টাকার বেশি নয়। তাহলে সরকারি এই কর্মকর্তা কীভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানালেন, এখন সেই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে পল্লবী এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর অতি বলপ্রয়োগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে তাই হয়েছে মামলা। এছাড়া যশোরে তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও গুমের মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১২ আগস্ট অপূর্বকে ঠাকুরগাঁও ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়।

তবে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন অপূর্ব হাসান এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, বদলি নিতেন নিজের পছন্দের থানায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অপূর্ব  যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা, যশোরের কোতোয়ালি, রাজধানীর তেজগাঁও এবং সর্বশেষ পল্লবী থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বদলি হয়ে ঢাকায় ফেরার আগে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি থাকাকালীন সময়ে স্বর্ণ চোরাকারবারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে অপূর্বের। তিনি ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত যশোর বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি ছিলেন। এ সময় কুটখালী চোরাচালানি ঘাটের সিন্ডিকেট প্রধান নাসির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় তার। নাসির ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র, ফেনসিডিল ও গরু আনতেন আর বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ ও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখি পাচার করতেন। এসব কাজে নাসিরকে ওসি অপূর্ব সহায়তা করতেন বলে বেনাপোলের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেনাপোল পোর্ট থানায় ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন অপূর্ব স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনাসহ তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে অপূর্ব সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান।

জানা গেছে, রাজধানীর একাধিক আবাসিক এলাকায় প্লট রয়েছে অপূর্ব হাসানের। বনশ্রীর ‌‘সি’ ব্লকের আলিশান পুলিশ পার্ক ভবনে অপূর্বর চারটি ফ্ল্যাট ছিল। এর মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে আছে তিনটি। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট। দুটি ফ্ল্যাটের নম্বর পাওয়া গেছে, এ-২ এবং ই-৪। তৃতীয় ফ্ল্যাটটি কয়েক মাস আগে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। সেটির কাগজপত্র এখনও নিজের নামে করেননি।

জাতীয় ওই দৈনিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ভাটারার নয়ানগরের ২ নম্বর রোডের (মিষ্টি গলি) ১৭ নম্বর ভবনের ৬ তলায় নিজের কেনা ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন অপূর্ব হাসান। ‌আটতলা ভবনটির প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট। একেকটির আয়তন ১ হাজার ৪০০ বর্গফুট। অপূর্ব হাসান ছয় তলার দুটি ইউনিট একটিতে (২৮০০ বর্গফুট) রূপান্তরিত করে বসবাস করতেন। তবে ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর দুটি ইউনিটের মাঝখানে দেয়াল তুলে আলাদা করা হয়েছে। এখন ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের একটিতে বাস করেন।

অপূর্বের ঘনিষ্ঠরাই জানিয়েছেন, ওই ভবনে অপূর্ব হাসানের আরও ৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আইনি জটিলতায় পড়ার আশঙ্কায় সেগুলো মালিক পক্ষের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে নেননি। এ ব্যাপারে ভবনের মালিক হাফিজ কামাল জানান, ৯টি ফ্ল্যাট তিনি এখনও বিক্রি করেননি। তবে ওই ভবনে অপূর্ব হাসানের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

জানা গেছে, নিজ গ্রাম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর রাতইল ইউনিয়নে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে ২ একর জমিতে মাছের ঘের করেছেন অপূর্ব হাসান। তার মামাতো ভাই রুহুল আমিন সেটি দেখাশোনা করেন। এছাড়া সাধুহাটি এলাকায় ফয়সাল এগ্রো নামে একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এটি দেখভাল করেন তার আত্মীয় সাবেক ইউপি সদস্য আরোজ আলী।

এলাকাবাসী জানায়, আরোজ আলীর এত বড় গরুর খামার করার আর্থিক সামর্থ্য নেই। খামারটির মালিক অপূর্ব। খামারে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করা হয়। কয়েক মাস আগে ৫০টি বিক্রি করা হয়। সর্বশেষ ১৪টি ছিল। সম্প্রতি সেগুলোও বিক্রি শুরু করে। তবে এ বিষয়ে আরোজ আলীর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপূর্ব হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি দাবি করেন, ‘আমার চাকরির টাকা, বাবার সম্পদ, এসব দিয়ে ফ্ল্যাট করেছি। আমার গরুর খামার নেই। সেটা আরোজ আলীদের। ’