নিউজ ডেস্ক:জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের আলামিনের বিরুদ্ধে এক গৃহকর্মীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার ধর্ষণে ওই গৃহকর্মী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে একই গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শামসুল হুদা ওই গৃহকর্মীকে ওষুধ খাইয়ে ছয় মাসের অপ্রাপ্ত মৃত সন্তান প্রসব করায় বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে গতকাল শনিবার এ খবর জীবননগরে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। ওই গৃহকর্মী (১৮) জীবননগরের সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের মৃত শামসুদ্দিনের মেয়ে ও কুষ্টিয়ার একটি বাসাবড়ির গৃহকর্মী। এবিষয়ে জীবননগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। যার জিডি নাম্বার -৩৭৬।
জানা যায়, ওই গৃহকর্মী শিশুকাল থেকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিনাপাড়ার ওয়াজ বিশ্বাসের ছেলে দিপুর বাড়িতে কাজ করেন। গত এক বছর আগে দিপুর ভাগনে মিঠু ওই গৃহকর্মীকে তার বাড়িতে কাজ করতে নিয়ে যান এবং ওই গৃহকর্মী গত এক বছর মিঠুর বাড়িতেই কাজ করছেন। গত বৃহস্পতিবার সে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই গৃহকর্মীর মা তাকে জীবননগর গোয়ালপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বাড়িতে এসে ওই গৃহকর্মী গত শুক্রবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাতুড়ে ডাক্তার শামসুল হুদার কাছে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। এসময় হাতুড়ে ডাক্তার শামসুল হুদা একটি ওষুধ খাইয়ে দিলে ডাক্তার বাড়ি ফেরার পথিমধ্যেই ওই গৃহকর্মী একটি অপ্রাপ্ত প্রায় ছয় মাসের মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। ওই গৃহকর্মীর বক্তব্য নেওয়া চেষ্টা করা হলে, তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বক্তব্য নিতে দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, ‘ওই গৃহকর্মীর বাবা মারা যাওয়ায় এবং পৈতৃক ভিটা না থাকায় অভিযুক্ত আলামিনদের একটি জমিতে আলামিনের বাবা তাদের আশ্রয় দেন। তখন থেকেই ওই গৃহকর্মীর মা-বোন সেখানে টিনের-চালার ঘর তুলে বসবাস করে আসছেন। সেই সুবাদে গত রোজার ঈদে মা-বোনের সঙ্গে ঈদ করতে কুষ্টিয়া থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন ওই গৃহকর্মী। সেই সময় মা এবং বোনকে নিজেদের জমিতে থাকতে দিয়েছে, এবিষয়টা পুঁজি করে অভিযুক্ত আলামিন ওই গৃহকর্মীকে তাদের বাড়ির পাশে অবস্থিত একটি আমবাগানসহ গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। তখন ওই গৃহকর্মী ধর্ষণের বিষয়টি সবাই জানানোর চেষ্টা করে তখন হুমকি-ধামকি আর তার মা-বোনকে যদি আশ্রয়ের জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়, এই ভয়ে কাউকে কিছু না জনিয়ে কুষ্টিয়া চলে যান।’
এদিকে, বিষয়টি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে পারিবারিকভাবে ওই গৃহকর্মীকে চাপ দেওয়া হচ্ছে এবং অভিযুক্ত আলামিনের নাম বাদ দিয়ে কুষ্টিয়ার অন্য এক ব্যক্তিকে অপরাধী বলতে ওই গৃহকর্মীকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ওই গৃহকর্মীর মা হাওয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে ১৩ বছর ধরে কুষ্টিয়ায় কাজ করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার মেয়ে অসুস্থ হলে তারা আমাকে খবর দেয়। আমি সেখানে যেয়ে অসুস্থ অবস্থায় আমার মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। এরপর শুক্রবার রাতে আমার মেয়ে পেট ব্যথার কথা বললে আমি আমাদের গ্রামের শামসুল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায। এসময় শামসুল ডাক্তার একটি ওষুধ খাইয়ে বলে বাড়ি চলে যাও, তোমার মেয়ে ভালো হয়ে যাবে। আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির ফেরার পথিমধ্যে আমার মেয়ের পটে থেকে একটি অপ্রাপ্ত বাচ্চা পড়ে। আমার মেয়ের সঙ্গে যে এ ধরণের কাজ করেছে, আমরা তাদের কঠিন শাস্তি চাই।’
এবিষয়ে অভিযুক্ত আলামিন বলেন, ‘আমার মা ওই মেয়েকে মারধর করলে, সে আমার মায়ের উপর রাগ করে বলে আমি নাকি তাকে ধর্ষণ করেছি। সে থাকে কুষ্টিয়াতে। সে ১৩ বছরের মধ্যে গত ঈদে একবার মাত্র এসেছিল। আমি তাকে কীভাবে ধর্ষণ করব। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
এবিষয়ে গোয়ালপাড়া গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শামসুল হুদা বলেন, ‘আমি ওই মেয়েকে কোনো চিকিৎসা দিইনি। তার পেটে বাচ্ছা আছে এ কথা শুনে অবাক হয়ে যায় এবং আমি তার মাকে বলি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে ওই মেয়ের মা যে অভিযোগ করছেন সেটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
এবিষয়ে সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েন বলেন, ‘গোয়ালপাড়া গ্রামে কুমারী একটি মেয়ে অপ্রাপ্ত মৃত বাচ্ছা প্রসব করেছে বলে শুনেছি। আমি বিষয়টি সম্পর্কে জীবননগর থানা পুলিশকে অবগত করেছি। পুলিশের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়ালপাড়া গ্রামে কুমারী একটি মেয়ে অপ্রাপ্ত বাচ্ছা প্রসব করেছে এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে একটি মৃত বাচ্চা উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। অতি দ্রুত তদন্তপূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’