শিরোনাম :
Logo সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রাণনাশের হুমকির’ অভিযোগ- অভিযুক্তের অস্বীকার Logo শেরপুরে নলকূপ খননে গ্যাসের সন্ধান, আগুনে রান্না করছেন স্থানীয়রা! Logo ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক: শাহাদত হোসেন বিপ্লব Logo কালিবাড়ি মোড়ে ‘কাশমিরী সুইটস এন্ড লাইভ বেকারী’র শুভ উদ্বোধন! Logo জলবায়ু পরিবর্তন, এসআরএইচআর ও সেবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চাঁদপুরে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা Logo ইবিতে দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ক্যাম্পাস ২০২৫’ Logo ১২নং বল্লী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo বেইস ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর কর্মকর্তা বৃন্দ অনাকাঙ্ক্ষিত মানববন্ধনের বিপরীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন Logo জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ Logo খুবির ক্যারিয়ার ক্লাবের ‘পাবলিক স্পিকিং’ প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত

আজ ৫ আগস্ট, চুয়াডাঙ্গায় আজ স্থানীয় শহীদ দিবস আজ

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:১৬ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৫ আগস্ট ২০২০
  • ৭৯০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

আজ ৫ আগস্ট, চুয়াডাঙ্গায় আজ স্থানীয় শহীদ দিবস। চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ দিনটি মর্মান্তিক ও অন্যতম স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এই দিনে জেলার ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে যুদ্ধে শহীদ হন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন। প্রতি বছর ৫ আগস্ট এ দিনটি স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রসাশন স¦াস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
১৯৭১ সালের দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাাকালে ৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধার গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়পুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে পাক-বাহিনীর ওপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী বাগোয়ান গ্রামের মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁনকে ধরে নিয়ে আসেন। ৫ আগস্ট সকালে পাকিস্তানের দালাল কুবাদ খাঁনের দুজন লোক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে খবর দেন, রাজাকাররা তাঁদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ খবর শুনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে এক দল বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র নিয়ে বাগোয়ান গ্রামের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমে দুই দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। নাটুদহ ক্যাম্পের পাক-সেনারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখখেতে ইংরেজি ইউ আকৃতিতে অ্যাম্বুশ করে রাখেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের অ্যাম্বুশে পড়ে যান। এ সময় পাক-সেনাদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রুকে আক্রমণ করতে থাকেন। এ অবস্থায় যেকোনো একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান স্বাভাবিক ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। এ সময় তাঁর অন্য সাথীদের বাঁচাতে সক্ষম হলেও সম্মুখ সমরে শহীদ হন ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা হলেন- হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন।
এই সম্মুখ যুদ্ধে পাক-বাহিনীর অনেক সদস্য মারা যান এবং আহত হন। পরে জগন্নাথপুর গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ রাস্তার পাশে দাফন ছাড়ায় পাক-বাহিনীর উপস্থিতিতে দুটি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ মাটিচাপা দেয়। কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে আটকবর। বিবেক তাড়িত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও কমান্ডার বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে এলজিইডির তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে সরকারি সহায়তায় ঐ গণকবরের ওপর স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলেন। নাম দেওয়া হয় আটকবর। প্রতিবছর ৫ আগস্ট স্থানীয় শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ ,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, ‘করোনা মহামারির কারনে এবার সীমিত পরিসরে পালিত হবে শহীদ দিবস। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ বেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ ও মসজিদে মসজিদে দোয়া। এ সময় উপস্তিত থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রাণনাশের হুমকির’ অভিযোগ- অভিযুক্তের অস্বীকার

আজ ৫ আগস্ট, চুয়াডাঙ্গায় আজ স্থানীয় শহীদ দিবস আজ

আপডেট সময় : ০৯:১৮:১৬ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৫ আগস্ট ২০২০

নিউজ ডেস্ক:

আজ ৫ আগস্ট, চুয়াডাঙ্গায় আজ স্থানীয় শহীদ দিবস। চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ দিনটি মর্মান্তিক ও অন্যতম স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এই দিনে জেলার ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে যুদ্ধে শহীদ হন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন। প্রতি বছর ৫ আগস্ট এ দিনটি স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রসাশন স¦াস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
১৯৭১ সালের দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাাকালে ৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধার গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়পুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে পাক-বাহিনীর ওপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী বাগোয়ান গ্রামের মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁনকে ধরে নিয়ে আসেন। ৫ আগস্ট সকালে পাকিস্তানের দালাল কুবাদ খাঁনের দুজন লোক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে খবর দেন, রাজাকাররা তাঁদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ খবর শুনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে এক দল বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র নিয়ে বাগোয়ান গ্রামের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমে দুই দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। নাটুদহ ক্যাম্পের পাক-সেনারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখখেতে ইংরেজি ইউ আকৃতিতে অ্যাম্বুশ করে রাখেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের অ্যাম্বুশে পড়ে যান। এ সময় পাক-সেনাদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রুকে আক্রমণ করতে থাকেন। এ অবস্থায় যেকোনো একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান স্বাভাবিক ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। এ সময় তাঁর অন্য সাথীদের বাঁচাতে সক্ষম হলেও সম্মুখ সমরে শহীদ হন ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা হলেন- হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন।
এই সম্মুখ যুদ্ধে পাক-বাহিনীর অনেক সদস্য মারা যান এবং আহত হন। পরে জগন্নাথপুর গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ রাস্তার পাশে দাফন ছাড়ায় পাক-বাহিনীর উপস্থিতিতে দুটি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ মাটিচাপা দেয়। কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে আটকবর। বিবেক তাড়িত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও কমান্ডার বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে এলজিইডির তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে সরকারি সহায়তায় ঐ গণকবরের ওপর স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলেন। নাম দেওয়া হয় আটকবর। প্রতিবছর ৫ আগস্ট স্থানীয় শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ ,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, ‘করোনা মহামারির কারনে এবার সীমিত পরিসরে পালিত হবে শহীদ দিবস। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ বেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ ও মসজিদে মসজিদে দোয়া। এ সময় উপস্তিত থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।’