কটূক্তি : চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্সকে মারধরের ঘটনা
সিভিল সার্জন ও আরএমও’র হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত : আজ বসবেন কর্তৃপক্ষ
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপনের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের ভিতরে প্রকাশ্য মারপিট করেন অভিযুক্ত চালক স্বপন। পরে ওই নার্স হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরে। মুহূর্তেই ঘটনাটি সকল নার্সদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদে হাসপাতালের সকল নার্সরা ডিউটি রেখে বিচারের দাবিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামীম কবিরের অফিস ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে এবং অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করেন।
এসময় আরএমও ডা. শামীম কবিরের জিজ্ঞাসাবাদে চালক স্বপন মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করলেই অফিসের মধ্যে চেয়ার তুলে অভিযুক্ত স্বপনের মাথায় ছুড়ে মারেন ভুক্তভোগী সিনিয়র নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখা। এ নিয়ে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন। এ সময় আরএমও’র বাধায় অভিযুক্ত চালক স্বপনকে ছিনিয়ে নিয়ে গণধোলাইয়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয় নার্সরা। ঘন্টাখানেক পরও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। পরে খবর দেয়া হয় উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও সদর থানা পুলিশকে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসময় অভিযুক্ত চালক স্বপন সিভিল সার্জনের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে ও ভিকটিম সিনিয়র নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারের আশ্বাস দেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নার্সরা শান্ত হয়ে ডিউটিতে যোগদান করে। এসময় আরও অনেক নার্স এই চালকের দ্বারা পূর্বেও লাঞ্চিতের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন।
হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। গতকাল বিকালে চালক স্বপন, ইকবাল নামের এক ছেলেকে দিয়ে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠায় একটি বেডসিট নিতে। এসময় মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নার্স ইকবালকে বলে, চালক যে ওয়ার্ডে আছে ওখানে এসির ভিতরে আছে, তাইলে কি ওর বাড়িতেও এসি আছে। পরে ওই ওয়ার্ডবয় রতন চালক স্বপনকে এসে নার্সদের এসব কথা বলে দেন। পরে স্বপন উত্তেজিত হয়ে ওই ওয়ার্ডে গিয়ে নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখাকে স্কেল দিয়ে দুইটি বাড়ি দেয়। এতে ওই সেবিকার হাতের একটি আঙুল ফেটে যায় এবং পায়ে কালশিরা পড়ে যায়।
এদিকে, এ ঘটনার পর সদর হাসপাতালের নার্সরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। বিচারের দাবিতে হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অফিস ঘেরাও করে। পরে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির ভিকটিম ও অভিযুক্ত স্বপনকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মারের বিষয়টি অস্বীকার করে স্বপন। বার বার অস্বীকার করলেও উত্তেজিত হয়ে চালক স্বপনের মাথায় আরএমও’র সামনে চেয়ার ছুড়ে মারেন ওই নার্স। পরে আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে নার্সরা। ঘন্টাব্যাপী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় (আরএমও)। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন হাসপাতালে ছুটে আসেন। এসময় চালক স্বপন মারের কথা স্বীকার করেন।
হাসপাতালের সেবিকারা অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সময় ওই চালক আমাদের সাথে অসদাচরণ করেছে। এমন কি হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে ও বিরক্ত করতো বলে অভিযোগ করে তারা।
সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম বলেন, চালক স্বপন কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখাকে মারধর করেছে। পরে আরএমও অফিসে সবার সামনে ওই সেবিকা চেয়ার ছুড়ে মারে স্বপনকে। আমরা উভয়পক্ষের কথা শুনেছি। হাসপাতালের কমিটির সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক ছেলুন জোয়ার্দার মহোদয়কে বিষয়টা জানাবো। আজ সকাল ৯টায় এ বিষয় নিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে আমরা বসবো। তারপর আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এদিকে ওই সেবিকা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরে।