নিউজ ডেস্ক:বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন ১৫৬ বছর ১৩ যুগ পূর্তি হতে যাচ্ছে আজ ১৫ নভেম্বর। ১৯৬২ সালে ভারতের কলকাতার রানাঘাট থেকে দর্শনা হয়ে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিঃমিঃ ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলযোগে প্রবেশ করে। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন চালুর মাধ্যমে দেশে রেলওয়ের যাত্রা হয়। রেলগাড়ি প্রথম যেদিন জগতি এসেছিল, সে সময় বিস্ময় ও ভয় যুগপত্ভাবে এলাকাবাসীকে গ্রাস করলেও ট্রেনের সেই নবযাত্রা জীবনে সৃষ্টি করেছিল নতুন ¯্রােত। আজ সেই রেল রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকার তথা জনগণের একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
একে একে ১৫৬ বছরে পা রাখল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১ হাজার ৮৬০ মাস, ৮ হাজার ৮৭ সপ্তাহ ৪ দিন। অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী এ পরিবহন অতিক্রম করেছে ৫৬ হাজার ৬১৩ দিন। এই দীর্ঘ যাত্রায় রেল হারিয়েছে স্টেশন, রেললাইন এবং কমেছে লোকবল, লোকোমোটিভ ও কোচ। আর যাত্রী হারিয়েছে রেল ভ্রমণের আরাম। রেলগাড়ি ঝমঝম, এখন সত্যিকার অর্থেই পা পিছলে আলুর দমের মতো অবস্থা। বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাপনায় যে করুণ পরিণতি পরিলক্ষিত হয়, তা নিয়তি নির্ভর নয়। এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু রক্ষণা বেক্ষণের অভাব। সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বন্দি হয়ে সম্ভাবনাময় রেলওয়ে খাতটি বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রেলওয়ের উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, রেল বাজেট বৃদ্ধি, রেললাইন, লোকোমোটিভ ও কোচ বৃদ্ধিসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এর তেমন সুফল মিলছে না। রেলের দুটি লাইন সমান্তরাল বয়ে গেলেও আয় ও ব্যয়ের হিসাব গানের মতো ‘আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে।’ ১৯৬৯ সালে ৫ দশমিক ৩ কোটি ও ১৯৭২ সালে ৮৬ লাখ টাকা মুনাফা করা রেলওয়ে আজ লোকসানের পথে হাঁটছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেলওয়ের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৬ অর্থবছরে ৯২২ কোটি ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা ছিল ৮০৩ কোটি টাকা। অথচ রেলের ভূসম্পত্তিসহ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, পণ্য পরিবহনে মনোযোগ এবং পরিচালন ব্যবস্থা যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েকে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
দর্শনা হল বাংলাদেশ এর একটি সীমান্তবর্তী রেলওয়ে স্টেশন, যেটি খুলনা বিভাগ-এর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শহর এ অবস্থিত। এটি হল একটি রেল ট্রানজিট পয়েন্ট এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটি সীমান্তবর্তী চেকপয়েন্ট। ১৮৭১ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের কলকাতা-গোয়ালন্দ ঘাট রেলপথ খোলা হলে দর্শনা স্টেশনটি চালু হয়। ১. মৈত্রী এক্সপ্রেস এই স্টেশনের উপর দিয়ে যায়। ২. ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের জন্য বঙ্গ প্রদেশের রেল যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাকে বিভক্ত করা হয় ভারতীয় রাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব বাংলার পাকিস্তানের প্রদেশ (পরে ১৯৫৬ সালে যার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান হয়) এর মধ্যে। অবিভক্ত ভারতের ওপর ব্রিটিশ শাসনের সময়, নিয়মিত রাতব্যাপী ট্রেন চলাচল করত কলকাতা, গোয়ালন্দ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে। ইস্ট বেঙ্গল মেল, ইস্ট বেঙ্গল এক্সপ্রেস এবং বরিশাল এক্সপ্রেস – এই তিনটি ট্রেন, ১৯৬৫ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে নিজেদের পরিষেবা অব্যাহত রেখেছিল যতক্ষণ না ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চারিদিকে ছড়িয়ে সব যাত্রীবাহী ট্রেন লিঙ্ক এর অবসান ঘটায়। ৫. ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ফল স্বরূপ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয় জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসাবে। উপরে উল্লিখিত ট্রেনগুলোর মধ্যে প্রথম দুটো ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস এর মতন একই রুট এ, গেদে এবং দর্শনা হয়ে চলাচল করত এবং বরিশাল এক্সপ্রেস, বনগাঁ ও যশোর এর মাধ্যমে চলাচল করত।
৩. সীমিত মালবাহী সেবা কয়েক বছরের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল করে, কিন্তু যাত্রী পরিষেবা শুধুমাত্র ২০০৮ সালে পুনর্জাগরিত হয়, ২০০৭ সালের ফেব্রুায়রি মাসে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঢাকা ভ্রমনের পর। ২০০৭ সালের জুলাই মাসের ৮ তারিখ প্রথম ট্রেন (মৈত্রী এক্সপ্রেস) ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বহন করে, একটি পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে কোলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলে। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল, বাংলা পয়লা বৈশাখের দিন থেকে দ্বি-সাপ্তাহিক এই ট্রেন সাভিস চালু করা হয়। ৪. মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ভিসার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে এটি “রেল-গেদে দ্বারা” (ভারতীয় ভিসার জন্য) বা “রেল-দর্শনা দ্বারা” (বাংলাদেশী ভিসার জন্য) হিসাবে এন্ট্রি পোর্ট উল্লেখ করার জন্য অপরিহার্য।