দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে : ভোগান্তিতে যাত্রীরা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে অনিদ্রিষ্টকালের যাত্রীবাহী বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ফলে চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ পথে কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। এমনকি জেলার ওপর দিয়ে অন্য জেলার কোনো বাস চলতে দেওয়া হচ্ছে না। মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত রয়েল এক্সপ্রেসের নতুন বাস চলাচলকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহের সঙ্গে বিরোধ ও কাউন্টার বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। তবে ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৩টি পথে বাস চলাচল করে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, যশোর, বরিশাল, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি। ধর্মঘটের ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে চুয়াডাঙ্গার পাঁচটি রুটে সকল ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এদিকে, জেলা জুড়ে ধর্মঘটের ফলে গন্তব্যে পৌছাতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। দু’পক্ষকে একত্রে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক।
আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী একরামুল হকের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। জরুরি প্রয়োজনে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। বলেন, ঢাকাগামী বাস না থাকায় অটোরিকশায় ঝিনাইদহে গিয়ে বাসে উঠতে হবে। দৌলাতদিয়াড় বিএডিসি গুদাম চত্বরে অলস অবস্থায় পড়ে আছে রয়েল এক্সপ্রেসের বাসগুলো। জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক এ নাসির জোয়ার্দ্দার জানান, সংগঠনের সভাপতি রয়েল এক্সপ্রেসের মালিক মো. সালাউদ্দিন মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পটুয়াখালী পথে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক দুটি যাত্রীবাহী বাস চালানোর উদ্যোগ নেন। মেহেরপুর থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত প্রতিটি জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম বলেন, ঢাকা ও পটুয়াখালী পথে রয়েল এক্সপ্রেস বাসের স্বাভাবিক চলাচলের সুযোগ এবং চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ পথে ৬০ ট্রিপের অর্ধেক হিসেবে ৩০টি ট্রিপ হিস্যা না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। তিনি আরো জানান, ধর্মঘট শুরুর আগের দিন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার মালিক শ্রমিক নেতারা ও বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের খুলনা আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের সাথে একত্রে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন। এসময় বিভাগীয় কমিশনার দু’জেলার জেলা প্রশাসককে বিষটি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে বলেন।
অন্যান্য জেলায় সমস্যা না হলেও ঝিনাইদহের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে হয়রানি করছেন। তাঁরা পটুয়াখালী পথে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি গত সোমবার রাতে ঢাকাগামী রয়েল এক্সপ্রেসের সব বাস ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফেরত পাঠান এবং সেখানে রয়েল এক্সপ্রেসের টিকিট কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম বলেন, ঢাকা ও পটুয়াখালী পথে রয়েল এক্সপ্রেস বাসের স্বাভাবিক চলাচলের সুযোগ এবং চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ পথে ৬০ ট্রিপের অর্ধেক হিসেবে ৩০টি ট্রিপ হিস্যা না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
ঝিনাইদহ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু দাবি করেন, রয়েল এক্সপ্রেস চলাচলে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি এবং সোমবার রাতেও বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন,‘ ঝিনাইদহের মালিকেরা স্বাধীনতার পর থেকে ব্যবসা করছেন। রয়েল এক্সপ্রেসের নতুন বাস চলাচলে সময়সূচি নিয়ে আলোচনা করতে বলেছিলাম। কিন্তু, পরিবহনটির মালিক তা না করে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে। তারপরও দু’জেলার মালিক শ্রমিক নেতারা যদি একত্রে বসে আলাপ আলোচনা করে তাহলে বিষয়টা অতি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।