মো.ফরিদ উদ্দিন, লামা বান্দরবান: বান্দরবানের লামায় কৃষি ব্যাংকের ৮কোটি ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ৬৩ রাবার ঋণ গ্রহীতাদের নিকট অনাদায়ি পড়ে আছে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সরকারের আমলারা নিজেদের ক্ষমতা ও বিভিন্ন সময় রাজনৈতি চাপ প্রয়োগ করে ব্যাংক থেকে নিজ নামসহ স্ত্রী ও নিকট আত্মীয়ের নামে এসব ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করছেন না। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে অনাদায়ী ঋনের পরিমান। বারবার তাগিদ দেয়া সত্বেও ব্যাংকের ডাকে কোন সাড়া দিচ্ছেনা এসব রাবার ঋণ গ্রহীতারা। ফলে ব্যাংকের অনাদায়ী ঋনের টাকা আর আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অসহাত্ব প্রকাশ করেছেন লামা কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বাবুল কান্তি শর্মা ।
লামা কৃষি ব্যাংক ব্যবস্থাপক জানান, বাবুল কান্তি শর্মা জানায়, মিজানুর রহমান নামক এক ব্যক্তি ১৯৯৬ সালে ৭ মে লামা কৃষি ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা রাবার ঋণ নিয়েছেন। ১৮ বছরের ব্যাবধানে ওই টাকা সুদসহ প্রায় ৬০ লাখ টাকায় পরিনত হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ঋনের এক টাকাও পরিশোধ করেনি মিজানুর রহমান। শুধু মিজানুর রহামনই নয়, তার স্ত্রী আরজুমান আক্তারের নামে ২টিতে ৪০ লাখ টাকা এবং এক নিকট আত্মীয়ের নামে প্রায় ৬০ লাখ টাকা রাবার ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করছেন না মিজানুর রহমান !একই ভাবে বদরুদ্দিন নামক অপর এক ব্যাক্তি নিজ নামে ৩টি ঋনে মোট ৩৯ লাখ টাকা, স্ত্রী সেলিনা আক্তারের নামে ২টিতে ঋনে ২৮ লাখ টাকা ও নিকটতম আত্মীয় মুজিবুর রহমানের নামে নিয়েছে ১টি ঋনে ২২ লাখ টাকা। বারবার তাগিদ দেয়া সত্বেও বদরুদ্দিন ব্যাংকের ডাকে কোন সাড়া দিচ্ছেন না।
এই ঋন খেলাপিতে পিছিয়ে নেই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। মং থোয়াই র্মামা নামক পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা ১৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। এখন পর্যন্ত কোন টাকা পরিশোধ কেরননি তিনি।লামা কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আক্ষেপ করে বলেন, শুধু মিজানুর রহমান বা বদরুদ্দিনই নয় এ রকমন ৬৩ ঋণ গ্রহীতা ব্যাংকের ডাকে সাড়া না দিয়ে নিরব রয়েছেন। রাবার প্লট মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বান্দরবানের লামার ইয়াংছা,কুমারী,ফাঁসিয়ালখালীর হায়দারনাসী, ফাইতং ও সরই এলাকায় এবং নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার চাষের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে। সর্ব প্রথম রাবার চাষের যাত্রা শুরু করে ব্যক্তিমালিকানাধীন গুটিকয়েক কোম্পানীরা।এতে রয়েছে চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), শিল্পপতি সূফি মিজানুর রহমান, মেরিডিয়ান গ্রæপের মো: কামাল উদ্দিন, কহিনূর কামাল, প্রফেসর নাজিম উদ্দিন, চৌধুরী হুমায়ূন কবির, কাবিল হোসেন সহ পুলিশ-সেনা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরকারের নিকট থেকে লীজের মাধ্যমে নেওয়া পাহাড়ী ভূমি রাবার চাষ করার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা নেন সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক থেকে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক আজিজ নগরের অগ্রনী ব্যাকের মাধ্যমে একেক জন ব্যক্তি ৫০ লক্ষ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেন। কিছু ব্যাক্তি রাবার বাগান করলেও বাকীরা রাবার বাগান না করেই পুরো টাকা ভোগ করেছেন নিজেদের অন্যকাজে। পরিশোধের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও পরিশোধ করছেন না ব্যাংকের ঋনের টাকা। রাবার শিল্প সমিতির নেতা শিল্পপতি সূফি মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে এত বছর ঋণ গুলো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে সরকার সুদ মওকুপ করায় ঋণ পরিশোধের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ৭-৮ কিস্তিতে আসল টাকা গুলো পরিশোধ করে দেব।
কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যাবস্থাপক উৎপল কুমার চক্রুবর্তী জানান,রাবার প্লট মালিকরা ইচ্ছে করে ঋণ গুলো পরিশোধ করে নাই। ইতোমধ্যে সরকার তাদের ঋণের সুদ মওকুপ করেছে।দ্রæততম সময়ের মধ্যে ঋনের আসল টাকা পরিশোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করে টাকা আদায় করা হবে।তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদানের কথা লামা কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা বললেও গ্রহৃতীরা তা অস্বীকার করেন।মেরিডিয়ান গ্রæপের মো: কামাল উদ্দিন,বলেন,আমার নামে কোন নোর্টিশ আসে নাই,তবে বারার সমিতির নামে ঋণ নেওয়া হলে ছিল।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বান্দরবান জেলার মহা সচিব রুহুল আমিন বলেন,লামা উপজেলা শাখার বলেন, ব্যাংক থেকে নেয়া ঋনের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পেরে জেলে পর্যন্ত যেতে হয় সাধারণ কৃষকদের। অথচ কোটি টাকা ঋন নিয়ে সুদ মাপ পেয়েও রাবার ঋণ গ্রহীতারা ঋনের টাকা পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের রাবার সম্পত্তি ক্রোক করে ঋনের টাকা আদায় করার নিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারণে করছেননা। এসব বড় বড় অংকের ঋন গ্রহীতার কারণে সাধারণ মাঠ পর্যায়ের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহীতা কৃষকরা কোথাও দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেননা। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব সাধারণ কৃষকদের ঋনের সুদ এখন পর্যন্ত মওকুপ করেননি।