সোমবার | ১ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা, বীরগঞ্জ উপজেলায় অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ Logo চাঁদপুরে যোগদানের প্রথম দিনেই সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময় Logo সদরপুরে গার্ডিয়ান এর এরিয়া অফিস উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে ১০ লাখ টাকার মৃত্যু দাবী চেক বিতরণ। Logo ৪৫তম বিসিএস-এ ক্যাডার বুটেক্সের ১৩ শিক্ষার্থী Logo হাবিপ্রবিতে মশার উপদ্রবে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা, ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের Logo জবিস্থ চুয়াডাঙ্গা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সজিব ও তরিকুল Logo মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া চিকিৎসা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন : ডা. জাহিদ Logo কচুয়ায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা এনায়েত হাসিব Logo কচুয়ায় ইউএনও হেলাল চৌধুরীর বিদায় সংবর্ধনা Logo জীবননগর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা সভাপতি রিংকু, সম্পাদক ফরহাদ

যে দেশের শপিংমল এখন কারাগার !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১২:৫৬:২৭ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
  • ৭৭১ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

শপিংমল এবং কারাগার দুটি স্থান বিপরীত দুই মেরুর বাসিন্দা। একটিতে দিনে-রাতে আলোর ফোয়ারা ছোটে আর অন্যটির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী মানুষেরা মুক্তির প্রহর গোনে।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে এই দুই মেরুর বাসিন্দা এসে মিলিত হয়েছে এক বিন্দুতে। বিশাল বিলাসবহুল একটি শপিংমল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কারাগার হিসেবে।

ষাটের দশক। স্বৈরশাসক মারকোস পেরেজ তখন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই পেরেজের মাথায় শপিংমল বানানোর ভূত চেপে বসল। তিনি রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে সান অগাস্টিন শহরের পাহাড়ের ওপর প্রাসাদোপম একটি শপিংমল বানানোর নির্দেশ দিলেন। এল হেলিকোইডি বা হিলিক্স নামে পরিচিত এই শপিংমলের নকশা করেছিলেন তখন খ্যাতিমান নকশাকার রিচার্ড বুকমিনিস্টার ফুলার।


সর্পিল আকৃতির এই শপিংমলটি দৈর্ঘ্যের হিসাবে প্রায় আড়াই মাইল লম্বা। তিনশ’ দোকান, একটি ফাইভ স্টার হোটেল, সিনেমা দেখার জন্য আলাদা থিয়েটার, চিত্র প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি, জিমনেসিয়াম, পুল খেলার জায়গা এবং নার্সারি সহ শপিংমলটির ছিল নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শপিংমলটির অন্যতম সুবিধা ছিল এর যেকোনো তলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

স্থাপত্যগত দিক দিয়ে এটি এতই সুন্দর ছিল যে, চিলির নোবেল  জয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা শপিংমলটিকে ষাটের দশকের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালি এর ভেতরের নকশা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ভবনটি নির্মাণের সব কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হলো ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে যখন স্বৈরশাসক পেরেজের পতন ঘটল। স্বৈরশাসকের সম্পৃক্ততা থাকায় নতুন সরকার শপিংমটির প্রতি একদমই আগ্রহ দেখায়নি। অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এর কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হলো এটি। অযত্নে-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি মদ, জুয়া আর যৌন ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হলো।


১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে ভবনটিকে জাদুঘর বানানোর অভিপ্রায়ে সরকার এর দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় সকল অবৈধ দখলদারদের। কিন্তু পূর্বের পরিকল্পনা  থেকে সরে এসে সরকার ১৯৮৪ সালে এখানে ভেনিজুয়েলা ইন্টেলিজেন্স পুলিশের সদর দফতর স্থাপন করে।

এর ফলে শপিংমলটি এখন পরিণত হয়েছে কারগারে। রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এখানে প্রায় ১৪৫টির মতো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! যেটি হওয়ার কথা ছিল শপিংমল সেটি এখন ভয়ংকর এক কারাগার। দিনে-রাতে যে শপিংমলটির আলোর ফোয়ারা ছোটানো কথা ছিল তারই চারপাশ এখন বন্দী মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা, বীরগঞ্জ উপজেলায় অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ

যে দেশের শপিংমল এখন কারাগার !

আপডেট সময় : ১২:৫৬:২৭ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

শপিংমল এবং কারাগার দুটি স্থান বিপরীত দুই মেরুর বাসিন্দা। একটিতে দিনে-রাতে আলোর ফোয়ারা ছোটে আর অন্যটির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী মানুষেরা মুক্তির প্রহর গোনে।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে এই দুই মেরুর বাসিন্দা এসে মিলিত হয়েছে এক বিন্দুতে। বিশাল বিলাসবহুল একটি শপিংমল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কারাগার হিসেবে।

ষাটের দশক। স্বৈরশাসক মারকোস পেরেজ তখন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই পেরেজের মাথায় শপিংমল বানানোর ভূত চেপে বসল। তিনি রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে সান অগাস্টিন শহরের পাহাড়ের ওপর প্রাসাদোপম একটি শপিংমল বানানোর নির্দেশ দিলেন। এল হেলিকোইডি বা হিলিক্স নামে পরিচিত এই শপিংমলের নকশা করেছিলেন তখন খ্যাতিমান নকশাকার রিচার্ড বুকমিনিস্টার ফুলার।


সর্পিল আকৃতির এই শপিংমলটি দৈর্ঘ্যের হিসাবে প্রায় আড়াই মাইল লম্বা। তিনশ’ দোকান, একটি ফাইভ স্টার হোটেল, সিনেমা দেখার জন্য আলাদা থিয়েটার, চিত্র প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি, জিমনেসিয়াম, পুল খেলার জায়গা এবং নার্সারি সহ শপিংমলটির ছিল নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শপিংমলটির অন্যতম সুবিধা ছিল এর যেকোনো তলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

স্থাপত্যগত দিক দিয়ে এটি এতই সুন্দর ছিল যে, চিলির নোবেল  জয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা শপিংমলটিকে ষাটের দশকের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালি এর ভেতরের নকশা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ভবনটি নির্মাণের সব কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হলো ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে যখন স্বৈরশাসক পেরেজের পতন ঘটল। স্বৈরশাসকের সম্পৃক্ততা থাকায় নতুন সরকার শপিংমটির প্রতি একদমই আগ্রহ দেখায়নি। অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এর কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হলো এটি। অযত্নে-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি মদ, জুয়া আর যৌন ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হলো।


১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে ভবনটিকে জাদুঘর বানানোর অভিপ্রায়ে সরকার এর দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় সকল অবৈধ দখলদারদের। কিন্তু পূর্বের পরিকল্পনা  থেকে সরে এসে সরকার ১৯৮৪ সালে এখানে ভেনিজুয়েলা ইন্টেলিজেন্স পুলিশের সদর দফতর স্থাপন করে।

এর ফলে শপিংমলটি এখন পরিণত হয়েছে কারগারে। রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এখানে প্রায় ১৪৫টির মতো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! যেটি হওয়ার কথা ছিল শপিংমল সেটি এখন ভয়ংকর এক কারাগার। দিনে-রাতে যে শপিংমলটির আলোর ফোয়ারা ছোটানো কথা ছিল তারই চারপাশ এখন বন্দী মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে।