শিরোনাম :
Logo নির্ধারিত ছয় মাসের আগেই নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হবে: প্রধান উপদেষ্টাকে কমিশন চেয়ারম্যান Logo ইবি অভয়ারণ্যের শরৎ সম্ভাষণ: “গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া ও বায়োস্কোপের রঙিন আবেশ” Logo চাঁদপুর সদরের ১৪ ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমেছে Logo চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বদলী জনিত বিদায় সংবর্ধনা Logo চাঁদপুরে কবরস্থ করতে দেওয়া শিশু মৃত নয়, জীবিত! Logo “শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তনে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা” – ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান Logo সিরাজগঞ্জে বসতবাড়ির জমি দখলের হুমকির অভিযোগে জিডি Logo  ইবির পাঁচ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার Logo ইবিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ Logo সুন্দরবনে বন বিভাগের পৃথক অভিযানে ৫ জেলে আটক  ৩টা নৌকা, জাল, বিষের বোতল সহ মাছ জব্দ 

যে দেশের শপিংমল এখন কারাগার !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১২:৫৬:২৭ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
  • ৭৫৯ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

শপিংমল এবং কারাগার দুটি স্থান বিপরীত দুই মেরুর বাসিন্দা। একটিতে দিনে-রাতে আলোর ফোয়ারা ছোটে আর অন্যটির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী মানুষেরা মুক্তির প্রহর গোনে।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে এই দুই মেরুর বাসিন্দা এসে মিলিত হয়েছে এক বিন্দুতে। বিশাল বিলাসবহুল একটি শপিংমল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কারাগার হিসেবে।

ষাটের দশক। স্বৈরশাসক মারকোস পেরেজ তখন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই পেরেজের মাথায় শপিংমল বানানোর ভূত চেপে বসল। তিনি রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে সান অগাস্টিন শহরের পাহাড়ের ওপর প্রাসাদোপম একটি শপিংমল বানানোর নির্দেশ দিলেন। এল হেলিকোইডি বা হিলিক্স নামে পরিচিত এই শপিংমলের নকশা করেছিলেন তখন খ্যাতিমান নকশাকার রিচার্ড বুকমিনিস্টার ফুলার।


সর্পিল আকৃতির এই শপিংমলটি দৈর্ঘ্যের হিসাবে প্রায় আড়াই মাইল লম্বা। তিনশ’ দোকান, একটি ফাইভ স্টার হোটেল, সিনেমা দেখার জন্য আলাদা থিয়েটার, চিত্র প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি, জিমনেসিয়াম, পুল খেলার জায়গা এবং নার্সারি সহ শপিংমলটির ছিল নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শপিংমলটির অন্যতম সুবিধা ছিল এর যেকোনো তলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

স্থাপত্যগত দিক দিয়ে এটি এতই সুন্দর ছিল যে, চিলির নোবেল  জয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা শপিংমলটিকে ষাটের দশকের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালি এর ভেতরের নকশা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ভবনটি নির্মাণের সব কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হলো ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে যখন স্বৈরশাসক পেরেজের পতন ঘটল। স্বৈরশাসকের সম্পৃক্ততা থাকায় নতুন সরকার শপিংমটির প্রতি একদমই আগ্রহ দেখায়নি। অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এর কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হলো এটি। অযত্নে-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি মদ, জুয়া আর যৌন ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হলো।


১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে ভবনটিকে জাদুঘর বানানোর অভিপ্রায়ে সরকার এর দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় সকল অবৈধ দখলদারদের। কিন্তু পূর্বের পরিকল্পনা  থেকে সরে এসে সরকার ১৯৮৪ সালে এখানে ভেনিজুয়েলা ইন্টেলিজেন্স পুলিশের সদর দফতর স্থাপন করে।

এর ফলে শপিংমলটি এখন পরিণত হয়েছে কারগারে। রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এখানে প্রায় ১৪৫টির মতো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! যেটি হওয়ার কথা ছিল শপিংমল সেটি এখন ভয়ংকর এক কারাগার। দিনে-রাতে যে শপিংমলটির আলোর ফোয়ারা ছোটানো কথা ছিল তারই চারপাশ এখন বন্দী মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

নির্ধারিত ছয় মাসের আগেই নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হবে: প্রধান উপদেষ্টাকে কমিশন চেয়ারম্যান

যে দেশের শপিংমল এখন কারাগার !

আপডেট সময় : ১২:৫৬:২৭ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

শপিংমল এবং কারাগার দুটি স্থান বিপরীত দুই মেরুর বাসিন্দা। একটিতে দিনে-রাতে আলোর ফোয়ারা ছোটে আর অন্যটির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী মানুষেরা মুক্তির প্রহর গোনে।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে এই দুই মেরুর বাসিন্দা এসে মিলিত হয়েছে এক বিন্দুতে। বিশাল বিলাসবহুল একটি শপিংমল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কারাগার হিসেবে।

ষাটের দশক। স্বৈরশাসক মারকোস পেরেজ তখন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই পেরেজের মাথায় শপিংমল বানানোর ভূত চেপে বসল। তিনি রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে সান অগাস্টিন শহরের পাহাড়ের ওপর প্রাসাদোপম একটি শপিংমল বানানোর নির্দেশ দিলেন। এল হেলিকোইডি বা হিলিক্স নামে পরিচিত এই শপিংমলের নকশা করেছিলেন তখন খ্যাতিমান নকশাকার রিচার্ড বুকমিনিস্টার ফুলার।


সর্পিল আকৃতির এই শপিংমলটি দৈর্ঘ্যের হিসাবে প্রায় আড়াই মাইল লম্বা। তিনশ’ দোকান, একটি ফাইভ স্টার হোটেল, সিনেমা দেখার জন্য আলাদা থিয়েটার, চিত্র প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি, জিমনেসিয়াম, পুল খেলার জায়গা এবং নার্সারি সহ শপিংমলটির ছিল নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া শপিংমলটির অন্যতম সুবিধা ছিল এর যেকোনো তলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

স্থাপত্যগত দিক দিয়ে এটি এতই সুন্দর ছিল যে, চিলির নোবেল  জয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা শপিংমলটিকে ষাটের দশকের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া বিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর দালি এর ভেতরের নকশা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ভবনটি নির্মাণের সব কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হলো ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে যখন স্বৈরশাসক পেরেজের পতন ঘটল। স্বৈরশাসকের সম্পৃক্ততা থাকায় নতুন সরকার শপিংমটির প্রতি একদমই আগ্রহ দেখায়নি। অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এর কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হলো এটি। অযত্নে-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি মদ, জুয়া আর যৌন ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হলো।


১৯৮২ সালের গোড়ার দিকে ভবনটিকে জাদুঘর বানানোর অভিপ্রায়ে সরকার এর দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় সকল অবৈধ দখলদারদের। কিন্তু পূর্বের পরিকল্পনা  থেকে সরে এসে সরকার ১৯৮৪ সালে এখানে ভেনিজুয়েলা ইন্টেলিজেন্স পুলিশের সদর দফতর স্থাপন করে।

এর ফলে শপিংমলটি এখন পরিণত হয়েছে কারগারে। রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এখানে প্রায় ১৪৫টির মতো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! যেটি হওয়ার কথা ছিল শপিংমল সেটি এখন ভয়ংকর এক কারাগার। দিনে-রাতে যে শপিংমলটির আলোর ফোয়ারা ছোটানো কথা ছিল তারই চারপাশ এখন বন্দী মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে।