গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
গাজা শহর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই ইসরাইলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ১২ জন গাজার একটি স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে নিহত হন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান যুদ্ধে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষের প্রায় সবাই গৃহহারা হয়ে পড়েছেন।
ইসরাইল সম্প্রতি গাজায় তাদের সামরিক হামলা আরও জোরদার করেছে।
গাজাবাসী অনেকে স্কুল ভবনে আশ্রয় নিলেও, সেখানেও বারবার ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রায়ই দাবি করে যে, হামাস যোদ্ধারা এসব ভবনে বেসামরিক লোকদের আড়ালে অবস্থান নেয়।
বৃহস্পতিবার গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর বলেন, ‘মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানে ইসরাইলি বিমান হামলায় ১২ জন শহীদ হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এ হামলায় অনেকেই আহত হয়েছেন।’
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা এই হামলা ও গাজার কেন্দ্রে আরও একটি ঘটনার তদন্ত করছে।
অপরদিকে আল-মুগাইর দাবি করেন, ইসরাইলি বাহিনী মানবিক সহায়তা নেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া মানুষদের ওপরও গুলি চালিয়েছে। তাদের গুলিতে ৬ জন নিহত হন ও অনেক লোক আহত হয়েছেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার বলেছেন, তিনি হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
যদিও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি মধ্যস্থতাকারীদের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ৬০ দিনের জন্য এই নতুন যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে ইসরাইল সমর্থন দিয়েছে।
আল-মুগাইর বলেন, বৃহস্পতিবার গাজার উত্তরের বাইত লাহিয়ায় গোলাবর্ষণে তিন জন নিহত হয়েছেন। জাবালিয়ায় আরেকটি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আল-মাওয়াসি এলাকায় গৃহহারা মানুষ তাঁবুতে বাস করছে। সেখানেও এক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইল এই এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানে একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।
গাজায় সাংবাদিকদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং অনেক এলাকায় তাদের পৌঁছানো কঠিন হওয়ায় এএফপি স্বাধীনভাবে হতাহতের সংখ্যা ও ঘটনার বিস্তারিত যাচাই করতে পারেনি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বাইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও আল-মাওয়াসির ঘটনাগুলো সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে এএফপিকে জানায়, তারা হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে অভিযান চালাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোক।
হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরাইলের হামলায় এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোক। জাতিসংঘ এই সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে।