ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফলভাবে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ হামলা কোনোভাবেই ইরানি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য নয় বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
স্থানীয় সময় রোববার (২২ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথ বলেন, ‘এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল কেবল আমাদের জাতীয় স্বার্থে হুমকি হিসেবে বিবেচিত ইরানি পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিষ্ক্রিয় করা এবং আমাদের সৈন্য ও মিত্র ইসরায়েলের যৌথ আত্মরক্ষার স্বার্থ রক্ষা করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই হামলার প্রস্তুতি চলছিল কয়েক মাস ও সপ্তাহ ধরে। যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্দেশ দেন, তখন আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম।’
এর আগে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অভিযানকে ‘অবিশ্বাস্য ও সম্পূর্ণ সফল’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছি। এই অভিযান ছিল সাহসী ও দূরদর্শী। এতে বিশ্ব দেখেছে, আমেরিকান প্রতিরোধ ক্ষমতা আবার ফিরে এসেছে।’
হেগসেথ জোর দিয়ে বলেন, ‘এই হামলার লক্ষ্য ছিল না ইরানি সেনাবাহিনী বা সাধারণ মানুষ। বরং এটা ছিল পারমাণবিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে নিখুঁত একটি সামরিক পদক্ষেপ।’
একই সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান, জেনারেল ড্যান কেইন জানান, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) নেতৃত্বে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ চালানো হয়।
এই অভিযানে ১২৫টিরও বেশি মার্কিন বিমান অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল বি-২ স্টিলথ বোমারু, চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, ডজনখানেক ফুয়েল ট্যাংকার, একটি গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন এবং নজরদারি ও গোয়েন্দা বিমান।
‘এই অভিযান ছিল মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বি-২ বোমারু হামলা এবং ৯/১১-এর পর দ্বিতীয় দীর্ঘতম বিমান অভিযান,’ বলেন জেনারেল কেইন।
তিনি জানান, অভিযানে সাতটি বি-২ বিমান ব্যবহার করে ১৪টি ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি)’ বোমা ফেলা হয় ফরদো ও নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর।
‘প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, তিনটি স্থাপনাতেই ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে,’ বলেন কেইন। মোট ৭৫টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে এ অভিযানে।
উল্লেখ্য, চলমান উত্তেজনার সূচনা হয় ১৩ জুন, যখন ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করে।
এই প্রেক্ষাপটে হেগসেথ বলেন, ‘এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হবে না, প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে তা জানিয়েছেন। তবে যদি প্রয়োজন হয়, আমরা জবাব দিতে প্রস্তুত।’
এদিকে কংগ্রেস সদস্যরা ট্রাম্পের এই ‘একতরফা’ পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসকে না জানিয়ে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
হেগসেথ জানান, ‘যখন বিমানগুলো নিরাপদে ফিরে আসে, তখনই কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে।’