নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়ে ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে চেয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই, এবং এক সপ্তাহ আগে অন্য একটি দল শাপলা চেয়ে ইসির সাড়া পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে এনসিপি কি শাপলা মার্কা পেতে পারে – এই প্রশ্ন এখন জোরালো।
নির্বাচন কমিশনে রোববার (২২ জুন) এনসিপির নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার পর সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, তারা শাপলা, কলম ও মোবাইল – এই তিনটি প্রতীকের জন্য আবেদন করেছেন, যার মধ্যে শাপলাই তাদের প্রথম পছন্দ। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ পেতে কোনো আইনগত বাধা নেই।
তবে, গত বছর মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য তাদের ‘কেটলি’ প্রতীকের বদলে শাপলা বা দোয়েল পাখি চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবের একান্ত সচিব মোখলেছুর রহমান জানিয়েছিলেন, “এ দুটি তো জাতীয় প্রতীক। সচিব মহোদয় তাদের অন্য প্রতীক চেয়ে নতুন করে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছেন।” অর্থাৎ, শাপলাকে জাতীয় প্রতীক বিবেচনা করে আবেদন বাতিল করা হয়।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই বিষয়ে বলেছেন, যদি এনসিপি শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পায়, তাহলে তারা প্রশ্ন তুলবেন। তিনি উল্লেখ করেন, তাদের দলকেও একই কারণে শাপলা প্রতীক দেওয়া হয়নি।
বিধিমালা ও আইনি জটিলতা
নির্বাচন কমিশনের ২০০৮ সালের সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় ৬৪টি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ থাকলেও শাপলা নেই। বিধামালায় শাপলা ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যুক্তি দিয়েছেন যে, জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি দলের মার্কা হিসেবে থাকলেও কোনো সমস্যা হয়নি। একই যুক্তিতে তিনি বলেন, জাতীয় প্রতীকের অংশ হিসেবে ধানের শীষ ও তারকা বা তারা – এই দুটিও দুটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে, সুতরাং শাপলার ক্ষেত্রেও কোনো আইনি সমস্যা নেই।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেছেন, “ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার নামে আমাদের একটি আইন আছে। সেখানে বলা আছে, জাতীয় প্রতীক হবে শাপলা। অতএব, যেহেতু জাতীয় প্রতীক আইন করে বলা হয়েছে শাপলা, এটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এটা শুধু দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা যাবে।”
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তিনি জানিয়েছেন, আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা হবে।