রোজাদারের মানসিক প্রশান্তি

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৩৩ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
  • ৭১৩ বার পড়া হয়েছে
যেকোনো ইবাদত মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। তবে রোজা রেখে মুমিন অন্যসব ইবাদতের তুলনায় অধিক প্রশান্তি খুঁজে পায়। কেননা রোজাদারের জন্য আল্লাহ যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা যেমন প্রেমময়, তেমনি অতিসম্মানের। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই রোজা ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রেদাদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)রোজাকে আল্লাহ নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেন, রোজা আমার জন্য’। যা একজন আল্লাহপ্রেমী মুমিনের জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। মুহাদ্দিসরা বলেন, রোজা রিয়া’ বা প্রদর্শনপ্রিয়তা মুক্ত হওয়ার কারণেই আল্লাহকে তাকে নিজের দিকে সম্বোধন করেছেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, অন্যান্য ইবাদতে রিয়া’ (অন্যকে দেখানোর আগ্রহ) থাকলেও রোজার ক্ষেত্রে তা নেই। রোজা সম্পর্কে কেবল আল্লাহই জানেন। এজন্য আল্লাহ রোজাকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।’ আর ইবনুল জাওঝি (রহ.) বলেন, প্রায় সব আমলই কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং কাজগুলোর খুব কমই অন্যকে দেখানোর মোহ থেকে মুক্ত থাকে। কিন্তু রোজা এর বিপরীত।’ আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) বলেন, অন্য সব ইবাদতের ওপর রোজার মর্যাদা প্রমাণের জন্য আল্লাহ বলেছেন রোজা আমার জন্য। আবু উমামা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেমনটি বলেছিলেন, তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো যেহেতু এর কোনো বিকল্প নাই।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২২০)

পৃথিবীর ভালো কাজের প্রতিদান ও মন্দ কাজের শাস্তি আল্লাহ নিজে দেন। তারপরও উল্লেখিত হাদিসে আল্লাহর ভাষ্যে বলা হয়েছে, আমি তার পুরস্কার দেই। হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, নিজে দেওয়ার দ্বারা রোজা বিশেষ মর্যাদা ও প্রতিদান প্রদান উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, আমলের সাধারণ হিসাব আল্লাহ মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আমলের প্রতিদান ১০ থেকে সাত’শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। রোজা এর ব্যতিক্রম।

আল্লাহ রোজাদারের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রেখেছেন। এক বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ বলেছেন, আমিই রোজার প্রতিদান হয়ে যায়। একজন মুমিনের জন্য এর থেকে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির কথা কি হতে পারে যে, আল্লাহ তাঁর জন্য হয়ে যাবেন!

শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, হাদিসটি নানাভাবে রোজার মর্যাদা প্রমাণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব আমলের মধ্যে রোজাকে নিজের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। কেননা রোজার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য বান্দার নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। এ আমলের রহস্য আল্লাহ ও তাঁর বান্দা ছাড়া অন্যরা জানে না। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর প্রতিদান লাভের জন্য সে তা পরিহার করে। বান্দার এই নিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ সব ইবাদতের মধ্যে নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন।সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার হিসাব নেবেন এবং তার পাপের পরিবর্তে নেক আমল কর্তন করবেন। এমনকি রোজা ছাড়া আর কোনো আমল অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর আল্লাহর রোজার প্রতিদান হিসেবে তার অবশিষ্ট পাপ মার্জনা করবেন এবং রোজার মাধ্যমে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মাজালিসু শাহরি রমাদান, পৃষ্ঠা ১৩)

আল্লাহ সবাইকে রোজার প্রশান্তি অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রোজাদারের মানসিক প্রশান্তি

আপডেট সময় : ০২:০৬:৩৩ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
যেকোনো ইবাদত মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। তবে রোজা রেখে মুমিন অন্যসব ইবাদতের তুলনায় অধিক প্রশান্তি খুঁজে পায়। কেননা রোজাদারের জন্য আল্লাহ যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা যেমন প্রেমময়, তেমনি অতিসম্মানের। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই রোজা ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রেদাদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)রোজাকে আল্লাহ নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেন, রোজা আমার জন্য’। যা একজন আল্লাহপ্রেমী মুমিনের জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। মুহাদ্দিসরা বলেন, রোজা রিয়া’ বা প্রদর্শনপ্রিয়তা মুক্ত হওয়ার কারণেই আল্লাহকে তাকে নিজের দিকে সম্বোধন করেছেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, অন্যান্য ইবাদতে রিয়া’ (অন্যকে দেখানোর আগ্রহ) থাকলেও রোজার ক্ষেত্রে তা নেই। রোজা সম্পর্কে কেবল আল্লাহই জানেন। এজন্য আল্লাহ রোজাকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।’ আর ইবনুল জাওঝি (রহ.) বলেন, প্রায় সব আমলই কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং কাজগুলোর খুব কমই অন্যকে দেখানোর মোহ থেকে মুক্ত থাকে। কিন্তু রোজা এর বিপরীত।’ আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) বলেন, অন্য সব ইবাদতের ওপর রোজার মর্যাদা প্রমাণের জন্য আল্লাহ বলেছেন রোজা আমার জন্য। আবু উমামা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেমনটি বলেছিলেন, তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো যেহেতু এর কোনো বিকল্প নাই।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২২০)

পৃথিবীর ভালো কাজের প্রতিদান ও মন্দ কাজের শাস্তি আল্লাহ নিজে দেন। তারপরও উল্লেখিত হাদিসে আল্লাহর ভাষ্যে বলা হয়েছে, আমি তার পুরস্কার দেই। হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, নিজে দেওয়ার দ্বারা রোজা বিশেষ মর্যাদা ও প্রতিদান প্রদান উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, আমলের সাধারণ হিসাব আল্লাহ মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আমলের প্রতিদান ১০ থেকে সাত’শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। রোজা এর ব্যতিক্রম।

আল্লাহ রোজাদারের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রেখেছেন। এক বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ বলেছেন, আমিই রোজার প্রতিদান হয়ে যায়। একজন মুমিনের জন্য এর থেকে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির কথা কি হতে পারে যে, আল্লাহ তাঁর জন্য হয়ে যাবেন!

শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, হাদিসটি নানাভাবে রোজার মর্যাদা প্রমাণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব আমলের মধ্যে রোজাকে নিজের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। কেননা রোজার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য বান্দার নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। এ আমলের রহস্য আল্লাহ ও তাঁর বান্দা ছাড়া অন্যরা জানে না। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর প্রতিদান লাভের জন্য সে তা পরিহার করে। বান্দার এই নিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ সব ইবাদতের মধ্যে নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন।সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার হিসাব নেবেন এবং তার পাপের পরিবর্তে নেক আমল কর্তন করবেন। এমনকি রোজা ছাড়া আর কোনো আমল অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর আল্লাহর রোজার প্রতিদান হিসেবে তার অবশিষ্ট পাপ মার্জনা করবেন এবং রোজার মাধ্যমে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মাজালিসু শাহরি রমাদান, পৃষ্ঠা ১৩)

আল্লাহ সবাইকে রোজার প্রশান্তি অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।