মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়া গেছেন। জানা গেছে, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ৬টি জ্যান্ত হাতি উপহার দিয়েছেন। এই উপহার পেয়ে বৈঠকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন পুতিন।
যদিও বিশ্লেষকেরা এই ‘হস্তী কূটনীতিকে’ ব্যয়বহুল প্রকল্পের কূটনীতির স্মারক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে তার দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রশংসা করেন এবং মস্কোকে ছয়টি হাতি উপহার দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।
যদিও সমর বিশারদরা, মিয়ানমারের তরফ থেকে এই ৬টি হাতি উপহার দেওয়ার বিষয়টিকে, মস্কোর তরফ থেকে নেপিদোকে দেওয়া ৬টি পুরোনো যুদ্ধবিমানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই পুরোনো যুদ্ধবিমান এবং হাতি- দুটোরই পরিচর্যা বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ।
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির জান্তাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনী অং সান সু কির সরকারকে উৎখাত করে। এরপর দেশ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। তবে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই বাড়তে থাকে। এ প্রসঙ্গে পুতিন ক্রেমলিনে মিন অং হ্লাইংকে বলেন, ‘এ বছর আমরা আমাদের দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ভিত্তিতে চুক্তি সইয়ের ২৫ তম বার্ষিকী উদযাপন করছি।’
পুতিন আরও বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক সত্যিই ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হচ্ছে।’ এ সময় তিনি গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। সম্প্রতি দুই পক্ষ মিয়ানমারে একটি ছোট আণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণের বিষয়ে চুক্তি সই করেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত আণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটম জানিয়েছে, প্ল্যান্টটির ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট হবে এবং সেটি তিনগুণ বৃদ্ধি করার সম্ভাবনাও আছে।
পুতিন আরও ঘোষণা করেন, মিয়ানমারের একটি সামরিক ইউনিট আগামী ৯ মে মস্কোতে বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০ তম বার্ষিকীর সামরিক প্যারেডে অংশ নেবে। তিনি বলেন, মিন অং হ্লাইংও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
হাতি উপহার পেয়ে প্রতিক্রিয়ায় পুতিন বলেন, ‘এবং অবশ্যই, আমি আপনাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারি না। কারণ, আপনি আমাদের ছয়টি হাতি উপহার দিয়েছেন এবং সেগুলো ইতিমধ্যে মস্কোর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে।’
মিন অং হ্লাইং রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের গুণগত মানের প্রশংসা করেন এবং বলেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনকে সমর্থন করেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন, মস্কো শিগগিরই জয়ী হবে।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বলেন, তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে কৃষি, আণবিক শক্তি, পরিবহন এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ভালো সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবৈধ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, আমাদের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা সফলভাবে বিকশিত হচ্ছে এবং পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, রাশিয়ার কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের দাওয়েই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানান মিশুস্তিন। যদিও তিনি কোনো কোম্পানি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি। রাশিয়া এবং মিয়ানমার দীর্ঘ সময় ধরে মিয়ানমারে একটি ছোট আণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা আলোচনা করছে।