ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গোটা জাতি প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রং-ঢং নতুন করে করা হয়েছে, আর রাত পোহালেই ফুলে ফুলে সজ্জিত হবে শহীদ মিনারের বেদি। একুশে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, দেশব্যাপী পালিত হবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হবে।
দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে, রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শুরু হবে একুশের কর্মসূচি। এছাড়া, কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি ও আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
এদিকে, মহান ভাষাশহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি একটি শোক ও বেদনার দিন হলেও, এটি বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এক বিশেষ দিন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ববাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র, যুবক এবং সাধারণ মানুষ প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন মিছিলের গতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালায়, সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক শহীদ হন।
এই আত্মদান নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম তার ‘বায়ান্নর ও আগে’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বরকত ও সালামকে আমরা ভালোবাসি, তবে তাদের চেয়েও বড় কথা হলো— তারা আমাদের ভালোবাসে। তারা আমাদের জীবন দিয়ে আমাদের রক্ষা করেছে। তারা আমাদের জীবনে অমৃতরসের স্পর্শ দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘এদের আত্মদানের মাধ্যমে আমরা অমরতা পেয়েছি। আজ আমরা বলতে পারি, দস্যুদের, বর্বরদের, দাম্ভিকদের: তোমরা আর আমাদের মারতে পারবে না, কারণ বরকত ও সালাম তাদের রক্ত দিয়ে আমাদের জীবন রক্ষা করেছেন।’
বরেণ্য শিক্ষাবিদ আবুল ফজল একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের নিয়ে বলেছেন, ‘মাতৃভাষার দাবি স্বভাবের দাবি, ন্যায়ের দাবি, সত্যের দাবি—এই দাবির লড়াইয়ে শহীদরা প্রাণ দিয়েছেন। তারা প্রমাণ করেছেন, স্বভাব, ন্যায় ও সত্যের ব্যাপারে কোনো আপস হয় না।’
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এদিন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ভাষাশহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় দেশের মসজিদগুলোতে বিশেষ দোয়া ও কোরানখানির আয়োজন করা হবে।
এছাড়া, দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বিভিন্ন সড়কদ্বীপে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাংলা ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন লাগানো হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হবে।
গণমাধ্যমগুলো শহীদ দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে জনসচেতনতা মূলক প্রচারাভিযান চালাবে, এবং বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
টিআই