শিরোনাম :
Logo আশিকাটি ইউনিয়নে বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায় কর্মসূচীর উদ্বোধন Logo মেধাভিত্তিক নিয়োগ হলে নিয়োগপ্রাপ্ত সকলেই দেশের সম্পদ হবে : আসিফ মাহমুদ Logo অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হাঙরের আক্রমণে নিহত ১ Logo দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি২০ সিরিজে ডাকেটকে বিশ্রাম দিয়েছে ইংল্যান্ড Logo সাইবার নিরাপত্তা আইন এখন অনেক সক্রিয় : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব Logo পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ Logo সাতক্ষীরায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত Logo ইবিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে র‍্যালি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার Logo চাঁদপুর টেলিভিশনের সাংবাদিকদের সাথে জেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময়

সাগরপথে ফের সক্রিয় মানব পাচার চক্র

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১০:১২:২০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • ৭৪৭ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার উপকূলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। স্থানীয় মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক। তারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুকে পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করে নানা প্রলোভনে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তাদের আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করছে দালাল চক্র।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে মানব পাচার আইনে ৭৪১টি মামলা হলেও এখনো একটি মামলারও বিচার শেষ হয়নি। সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলো বছরের পর বছর আটকে আছে। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় পাচারের শিকার পরিবারগুলো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দালাল চক্রের সদস্যরা বারবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

বেসরকারি সংস্থা নোঙরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কক্সবাজারের আট থানায় মানব পাচার সংক্রান্ত ৬৩৭টি মামলা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে আরও ১০৪টি মামলা হয়। তবে বিচারক সংকট ও সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে মামলাগুলো অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডি, উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ছয়টি নৌঘাট থেকে সাগরপথে পাচারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া টেকনাফের বাহারছড়া, নোয়াখালীপাড়া, ইনানী, রেজুর খাল, মহেশখালী ও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন ঘাটকেও পাচারকারীরা ব্যবহার করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানব পাচারে জড়িত চক্রের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম টেকনাফের আরিফুল ইসলাম, জিয়াবুল হক, মো. হোছন, সুলতান মাহমুদ উল্লাহ ও রশিদ মিয়া মেম্বার। এ চক্রের কয়েকজন সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বের হয়ে পুনরায় পাচারের কাজে যুক্ত হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গেল আড়াই মাসে নারী-শিশুসহ ৯৯ জনকে পাচারের সময় উদ্ধার করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর র‌্যাবের অভিযানে ৩১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়, যাদের মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর ১৪ ডিসেম্বর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরীর একটি বাড়ি থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। একইভাবে ৪ নভেম্বর ও ১৪ অক্টোবরেও অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ও পাচারকারী আটক করা হয়।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, চিহ্নিত ঘাটগুলোতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে এবং মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তবে মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় পাচার রোধে বড় ধরনের অগ্রগতি হচ্ছে না।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, মামলাগুলোর চার্জশিট জমা হলেও সাক্ষীর অভাবে বিচার প্রক্রিয়া আটকে আছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচার রোধে শুধু অভিযানে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত বিচার ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টা ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতাই এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আশিকাটি ইউনিয়নে বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায় কর্মসূচীর উদ্বোধন

সাগরপথে ফের সক্রিয় মানব পাচার চক্র

আপডেট সময় : ১০:১২:২০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

কক্সবাজার উপকূলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। স্থানীয় মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক। তারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুকে পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করে নানা প্রলোভনে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তাদের আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করছে দালাল চক্র।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে মানব পাচার আইনে ৭৪১টি মামলা হলেও এখনো একটি মামলারও বিচার শেষ হয়নি। সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলো বছরের পর বছর আটকে আছে। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় পাচারের শিকার পরিবারগুলো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দালাল চক্রের সদস্যরা বারবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

বেসরকারি সংস্থা নোঙরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কক্সবাজারের আট থানায় মানব পাচার সংক্রান্ত ৬৩৭টি মামলা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে আরও ১০৪টি মামলা হয়। তবে বিচারক সংকট ও সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে মামলাগুলো অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডি, উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ছয়টি নৌঘাট থেকে সাগরপথে পাচারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া টেকনাফের বাহারছড়া, নোয়াখালীপাড়া, ইনানী, রেজুর খাল, মহেশখালী ও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন ঘাটকেও পাচারকারীরা ব্যবহার করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানব পাচারে জড়িত চক্রের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম টেকনাফের আরিফুল ইসলাম, জিয়াবুল হক, মো. হোছন, সুলতান মাহমুদ উল্লাহ ও রশিদ মিয়া মেম্বার। এ চক্রের কয়েকজন সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বের হয়ে পুনরায় পাচারের কাজে যুক্ত হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গেল আড়াই মাসে নারী-শিশুসহ ৯৯ জনকে পাচারের সময় উদ্ধার করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর র‌্যাবের অভিযানে ৩১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়, যাদের মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর ১৪ ডিসেম্বর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরীর একটি বাড়ি থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। একইভাবে ৪ নভেম্বর ও ১৪ অক্টোবরেও অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ও পাচারকারী আটক করা হয়।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, চিহ্নিত ঘাটগুলোতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে এবং মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তবে মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় পাচার রোধে বড় ধরনের অগ্রগতি হচ্ছে না।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, মামলাগুলোর চার্জশিট জমা হলেও সাক্ষীর অভাবে বিচার প্রক্রিয়া আটকে আছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচার রোধে শুধু অভিযানে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত বিচার ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টা ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতাই এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।