শিরোনাম :
Logo শহীদ মাহবুব আলমের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীতে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত Logo আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামাব না : শামীমা ইয়াছমিন Logo বোমা হামলায় পৃথিবীতে যত লোক মারা যায় তারচেয়ে বেশি বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় -পঞ্চগড়ে তারিকুল ইসলাম Logo বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে অভিনেত্রী Logo এশিয়া কাপের জন্য প্রাথমিক দল ঘোষণা বিসিবির Logo ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ ফখরের Logo নাটকীয় জয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করল ভারত Logo কচুয়ার বিতারা ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিলিং ফ্যান বিতরন Logo হাতপাখার প্রার্থী মানসুর আহমদ সাকী’র সাথে পূর্ব ফতেহপুর ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় Logo আ’লীগের আরও ১১ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

নিম্নমানের বই ছাপিয়ে ৬ বছরে লোপাট ১৫০০ কোটি টাকা

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:০৮ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭৫২ বার পড়া হয়েছে

২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষভাবে ২০২৩ সালে ২৬৯ কোটি টাকার অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীনে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে।

এসকল দুর্নীতির জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দায়ী, যাদের মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর কর্মকর্তারা অন্যতম। এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

২০২৪ সালে পাঠ্যপুস্তক ছাপার জন্য বাজেটে ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও এর মধ্যে ২৬৯ কোটি টাকার অপচয় এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অডিট রিপোর্টে বলা হয়, নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে বই ছাপার মাধ্যমে ২৪৫ কোটি টাকা লোপাট করা হয় এবং অযাচিত বিল, অতিরিক্ত সম্মানী, আয়কর কর্তন না করা, অগ্রিম সমন্বয় না করাসহ নানা কারণে আরও প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনিয়ম ঘটেছে।

অডিট প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে একই স্পেসিফিকেশন ও এস্টিমেটের বই বিভিন্ন দামে ছাপানোয় ২৩৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সময়ে একাধিক কোম্পানিকে ভিন্ন ভিন্ন দর দিয়ে কাজ দেওয়ার ফলে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন কমিটিকে বাড়তি সম্মানী প্রদান ও অগ্রিম অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে প্রায় ২৫ কোটি টাকার অপব্যয়ের তথ্য উঠে এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের শাসনামলে ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজে ব্যাপক অনিয়ম ঘটে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, বইয়ের আকার ছোট করা এবং ফর্মেটের মান কমিয়ে পাঠ্যবই ছাপানো। এসব কাজের মাধ্যমে মুদ্রণকারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পাঠ্যবই মুদ্রণকাজে প্রতিবছর ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট হতো, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। গত ছয়-সাত বছরে এসব অনিয়ম হয়েছে। নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে বই ছাপানো হয়েছে, যা এক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল টাকা-পয়সার লেনদেন হয়েছে।’

শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে বই ছাপানোর কাজে ৬৪ লাখ টাকার বাড়তি সম্মানী দেওয়া হয়েছে, এবং ২৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত অর্থের অপব্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ফর্মেটের নিয়ম ভেঙে একই মানের বই ভিন্ন দামে ছাপানোর অভিযোগ উঠেছে, যা দুর্নীতির বড় এক দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে বইয়ের মান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বইয়ের কাগজ খারাপ নয়, রং কিছুটা ভিন্ন হলেও এটি নিউজপ্রিন্ট নয়। আমাদের দেশে সবাই মনে করে যে বইয়ের কাগজ যত বেশি সাদা হবে, তত ভালো, কিন্তু তা ঠিক নয়।’

তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অডিট অধিদপ্তর এখন এসব দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শহীদ মাহবুব আলমের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীতে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত

নিম্নমানের বই ছাপিয়ে ৬ বছরে লোপাট ১৫০০ কোটি টাকা

আপডেট সময় : ১১:৩৩:০৮ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষভাবে ২০২৩ সালে ২৬৯ কোটি টাকার অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীনে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে।

এসকল দুর্নীতির জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দায়ী, যাদের মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর কর্মকর্তারা অন্যতম। এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

২০২৪ সালে পাঠ্যপুস্তক ছাপার জন্য বাজেটে ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও এর মধ্যে ২৬৯ কোটি টাকার অপচয় এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অডিট রিপোর্টে বলা হয়, নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে বই ছাপার মাধ্যমে ২৪৫ কোটি টাকা লোপাট করা হয় এবং অযাচিত বিল, অতিরিক্ত সম্মানী, আয়কর কর্তন না করা, অগ্রিম সমন্বয় না করাসহ নানা কারণে আরও প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনিয়ম ঘটেছে।

অডিট প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে একই স্পেসিফিকেশন ও এস্টিমেটের বই বিভিন্ন দামে ছাপানোয় ২৩৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সময়ে একাধিক কোম্পানিকে ভিন্ন ভিন্ন দর দিয়ে কাজ দেওয়ার ফলে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন কমিটিকে বাড়তি সম্মানী প্রদান ও অগ্রিম অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে প্রায় ২৫ কোটি টাকার অপব্যয়ের তথ্য উঠে এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের শাসনামলে ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজে ব্যাপক অনিয়ম ঘটে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, বইয়ের আকার ছোট করা এবং ফর্মেটের মান কমিয়ে পাঠ্যবই ছাপানো। এসব কাজের মাধ্যমে মুদ্রণকারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পাঠ্যবই মুদ্রণকাজে প্রতিবছর ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট হতো, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। গত ছয়-সাত বছরে এসব অনিয়ম হয়েছে। নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে বই ছাপানো হয়েছে, যা এক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল টাকা-পয়সার লেনদেন হয়েছে।’

শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে বই ছাপানোর কাজে ৬৪ লাখ টাকার বাড়তি সম্মানী দেওয়া হয়েছে, এবং ২৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত অর্থের অপব্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ফর্মেটের নিয়ম ভেঙে একই মানের বই ভিন্ন দামে ছাপানোর অভিযোগ উঠেছে, যা দুর্নীতির বড় এক দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে বইয়ের মান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বইয়ের কাগজ খারাপ নয়, রং কিছুটা ভিন্ন হলেও এটি নিউজপ্রিন্ট নয়। আমাদের দেশে সবাই মনে করে যে বইয়ের কাগজ যত বেশি সাদা হবে, তত ভালো, কিন্তু তা ঠিক নয়।’

তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অডিট অধিদপ্তর এখন এসব দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।