হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব-২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বিঘ্নে যেন সবাই পূজা উদ্যাপন করতে পারে, তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, গত বছর ১২৩টি পূজামণ্ডপ ছিল জেলায়। চলতি বছর ২১টি পূজামণ্ডপ কমে জেলায় এবার ১০২টি পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছর সদর উপজেলায় ২৮টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩০টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২০টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২৪টি পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা উদ্যাপন করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির রুহুল আমিন, পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত সিংহ রায়, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ রায়, দেবেন্দ্রনাথ দেবসহ জেলার চারটি উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। এসময় চার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার এবং চার উপজেলার পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘একটি কথা শুধু একটা জায়গায় ব্যবহার করা হয় সংখ্যালঘু। এটা শুধু ব্যবহার করা হয় রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু আমি মনে করি এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নন, আমরা সবাই বাঙালী, আমরা সবাই ভাই ভাই।’
তিনি বলেন, আমি সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলতে চাই, কোন শব্দের দ্বারা আমরা যেন কাউকে আঘাত যেন না করি। অমরা মনে করি দেশের প্রতিটি ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্মের উৎসব ও প্রথা নির্বিঘ্নে পালন করার স্বাধীনতা রাখেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি এ জেলার প্রতিটি ধর্মের মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে চলেছে।’
তিনি মুসলিম, হিন্দু, বৈদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশানের সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময় পার করছি যেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য একটি পক্ষ চেষ্টা চালানোর পায়তারা করবে। কিন্তু আমরা সবাই যদি সম্প্রীতির বন্ধনে এক হয়ে থাকতে পারি, আমি বিশ্বাস করি সকল অপশক্তি রুখে দেয়া সম্ভব।’ শরীফুজ্জামান বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে আমরা সকলে সতর্ক থাকবো এবং এই উৎসবকে ঘিরে ছোট কোন বিশৃঙ্খলাও যেন না ঘটে তার জন্য অতন্দ্র প্রহরায় থাকবো।’
জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা শুধু আইন মানার কথাই বলতে চাই, কিন্তু আইন যারা ভঙ্গ করে তাদের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় দেশে আইন ভাঙার প্রবণতা পূর্ব থেকে চলে আসছে। আমি আজ প্রশাসনের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবো আইন ভাঙার সংস্কৃতি যেন আর সৃষ্টি না হয়।’
রুহুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশনা সকল মন্দিরে পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসবে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়, তবে নামাজের সময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। নামাজের সময় সকলে নাও জানতে পারেন, এজন্য প্রতিটি মন্দিরে দুর্গোৎসব চলাকালীন সময়ের নামাজের সময়সূচি রাখতে হবে, যেন নামাজের সময়ের গান বাজানো থেকে বিরত থাকা যায়। আমরা সবাই ভাই ভাই, বন্ধু এবং প্রতিবেশি। আমাদের সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে বন্ধন অটুট হোক।’জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশিত প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল ও পাহারায় থাকবে। পূজা শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য সকলেই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পূজা বিসর্জন দেওয়া রাত ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
এদিকে, মেহেরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. তানভির আহমেদ রুমান, মেজর মো. তৌফিকুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রনি আলম নুর, মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আকাশ কুমার কুণ্ডু, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিতম কুমার সাহা ও ডা. ইনজামামুল হক।
এছাড়াও পূজা উদ্যাপন কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ড. অশোক চন্দ্র বিশ্বাস, হালদার পাড়া পূজামণ্ডপের সভাপতি শ্রী অনন্ত কুমার হালদার, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সেক্রেটারি তপন কুমার সাহা, মেহেরপুর পূজা উদ্যাপন পরিষদ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাধন কুমার দাস প্রমুখ।সভায় পূজামণ্ডপ ও আশপাশের রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেনারেটরের ব্যবস্থা, কন্ট্রোল রুম, আইপি ক্যামেরা, পূজা বিসর্জনে রাস্তা-ঘাট পরিস্কার এবং সড়কে আলোকসজ্জা, আজান এবং নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারে নিয়ম মেনে চলা, সড়কে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবে। এছাড়া থাকবে মোবাইল টিম।
উল্লেখ্য, মেহেরপুরে এ বছর ৩৮টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর ১৪, মুজিবনগর ৭ ও গাংনী উপজেলায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা ১৭টি।