সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গোয়ালবাথান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গোপনে সম্পন্ন করেছেন নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় গোপনে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে এলাকার কয়েক ব্যক্তি রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া অভিযোগপত্রের অনুলিপি স্থানীয় সংসদ-সদস্য, শিক্ষার উপ-পরিচালক, পরিচালক মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহী, সচিব, শিক্ষাবোর্ড ঢাকা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাব, দুর্নীতি দমন, সেগুন বাগিচাসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে প্রদান করেছেন।
পরিবারের হাফ ডজন কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি, পুরাতন ঘর বিক্রি, হিসাবে গড়মিল, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মসহ ডজন খানেক অভিযোগ উঠে এসেছে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও সভাপতি আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নজরুল ইসলাম এবং সভাপতি মো: আব্দুস ছাত্তার মাষ্টারের যৌথ কারসাজীতে নানারকম অনিয়ম ও অর্থ বাণিজ্য হয়ে আসছে। ওই দুই ব্যক্তির গোপন চক্রান্তে ৫টি পদে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য ও অনিয়ম করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে বিদ্যানুরাগী ও সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
৫টি পদে যোগদানকৃতরা হলেন, সহাকারী গ্রন্থগারিক কাম ক্যাটালগার কাকলি ছন্দা, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মো: মাসুদ রানা, অফিস সহায়ক মো: জুয়েল রানা, আয়া মোছা: ছনিয়া খাতুন, নৈশ প্রহরী মো: আলমগীর হোসেন।
এ বিষয়ে সহাকারী গ্রন্থগারিক কাম ক্যাটালগার কাকলি ছন্দা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে খন্ডকালিন শিক্ষক হয়ে আছি। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক নেই যার কারনে আমি বিজ্ঞান ক্লাশ নিয়ে থাকি। বিদ্যালয়ের অনলাইনে পিডিএস আইডি ১০১২৯৯১৯০ নম্বর কিভাবে পড়ল এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মো: মাসুদ রানা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় সাহেব আমাকে চাকরি দিয়েছে। যা কিছু বলার প্রধান শিক্ষককে বলেন। নিয়োগ নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.নজরুল ইসলাম বলেন, ৫টি নয় ৪টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকা নেওয়া হয়নি তবে জমি নেওয়া হয়েছে। আরেকজনের নাম কিভাবে অনলাইনে পিআইডিএস আইডি ১০১২৯৯১৯০ এ আসলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের ৯ন ওয়ার্ডের গোয়াল বাথান গ্রামের ইউপি সদস্য রিপন বলেন, এ নিয়োগে কোন পরীক্ষা হয়নি। ৮জানুয়ারী পরীক্ষার কথা বলছে অথচ ওই দিন এমপি জয়কে ফুলের মালা দেয়ার জন্য গিয়েছিল। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে আমরাসহ গ্রামের অনেকেই জানতো কিন্তুু কেউ বলতে পারবে না। কাজেই নিয়োগ প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হলো তা তদন্তে সাপেক্ষে উর্দ্ধতনদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কাজলগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, জানুয়ারী ১ তারিখে ঢাকার উদ্দ্যশে ইজতেমায় যাই। ওইখান থেকে ৫ রমযানে বাড়ীতে আসি। আসার পর প্রধান শিক্ষক ঢেকে নিয়ে আমাকে মিষ্টি দিয়ে বলেছিলো ৪ জনকে নিয়োগ দিছি। নিয়োগ কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া কিভাবে নিয়োগ হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাওয়ার আগেরদিন আমার কাছ থেকে পিয়ন আনোয়ার সিল স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দিছিলো। কিভাবে হলো আমি তা বলতে পারবো না।
নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি কাজিপুর এ.এম ইউ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ছিলেন। প্রার্থীদেরকে ৪০ মিনিটের পরীক্ষা নেয়া হয় এবং তারপরেই ফলাফল ঘোষনা করে চূড়ান্ত ফলাফল সীটে স্বাক্ষর দিয়ে চলে আসছি। সভাপতি ওই নিয়োগের সময় বাহিরে ছিলেন তাহলে ওই দিন তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষর কিভাবে হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে ফোন রেখেন।