শিরোনাম :
Logo চাঁদপুরে কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পেয়েছেন ১৯ সাংবাদিক Logo কাল চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল সমাবেশ Logo খানপুর ইয়ং স্টার ক্লাবের উদ্যোগে আট দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। Logo পাইকোশায় ধানের চাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মিথ্যা মামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন Logo চাঁদপুর সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ Logo ইবিতে দুর্গাপূজার মধ্যে পরীক্ষা না নেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি Logo চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন Logo কয়রা হরিণের মাংস উদ্ধার Logo শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে ইবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন Logo পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজে নবগঠিত গভর্নিংবডি পরিচিতি ও মতবিনিময়ে ভরপুর ছিলো প্রাণের উচ্ছ্বাস

ঝিনাইদহে রমরমা ভেজাল গুড় পাটালির হাট, দেখার যেন কেউ নেই!

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ০৬:২৪:১৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০
  • ৭৮২ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হওয়া গুড় ও পাটালি নিয়ে এক বিশাল গুড়ের হাট বসে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ নীমতলা এলাকায়। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শহরের নিমতলা বাসষ্ট্যান্ডে শীত মৌসুমের সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার এই হাট বসে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ এলাকায় খেজুরের রস বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা খেজুরের গুড় ও পাটালি উৎপাদন করে। হাটের দিনে প্রচুর খেজুরের গুড় ও পাটালী উঠে। তাই বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে কালীগঞ্জ গুড়ের হাট নামেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে এটি এখনও টিকে আছে। এই হাট এখানকার একটি ঐতিহ্য। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা (কৃষক) তাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় ও পাটালি বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসেন। বাজার ঘুরে চাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক হাড়ি/কলস (মাটির তৈরি) পত্রে ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের গুড় বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫ টাকা দরে। আর ঝোল (তরল) গুড় বিক্রি হচ্ছে এক কলস ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। রস থেকে তৈরিকৃত পাটালী বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। দেশের অন্য গুড়ের হাট থেকে এই হাটে ভাল মানের গুড় ও পাটালী এবং দামে তুলনামুলক কম থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের গুড় ব্যবসায়ীরা এগুলো ক্রয় করে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম,বরিশাল, রাজশাহিতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে। রাজশাহীর গুড় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ও আওলাদ হোসেন জানান, আমরা প্রতি হাটে রাজশাহী থেকে কালীগঞ্জে গুড় ও পাটালী কিনতে আসি। এখানের গুড় ও পাটালীতে রসের গন্ধ যেন লেগে থাকে। তাই ক্রেতারাও কালীগঞ্জের খেজুরের গুড়ের কথা বললে তা কিনতে আগ্রহ বোধ করে। কালীগঞ্জ থেকে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ ট্রাক গুড় সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা পাঠায়। গান্না গ্রামের আবদুল আলিম জানান, তিনি গত ৩৫ বছর ধরে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। তার নিজের রয়েছে প্রায় ৮২টি খেজুর গাছ। তিনি বলেন, খেজুর গাছ থেকে ৮-৯ কলস (মাটির তৈরি) রশ পেলে মাটির এক কলস (৮-১০) কেজি ভাল গুড় হয়। তিনি বলে, এক কলস ভাল গুড় বর্তমানে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আলিম আরো জানান, গ্রাম থেকে অনেকে কলস ধরে রশ ক্রয় করেন থাকেন গ্রামবাসী। এক কলস রস বিক্রি হয় ১৫০ টাকা দরে। পিঠা ও পায়েশ তৈরির জন্য গ্রামবাসী তাদের কাছ থেকে সকালে রশ ক্রয় করেন। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত খেজুরের গুড়ের ব্যাপক কদর রয়েছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে গুড় কিনে নিয়ে অন্যস্থানে গিয়ে চিনি ভেজাল দিয়ে এক কলস থেকে ২ কলস তৈরি করে বিক্রি করে এলাকার গুড়ের দুর্নাম হচ্ছে। ‘কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় ব্যাপক প্রসিদ্ধ এই গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রান পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের এলাকার গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া শীত মৌসুমে গুড় দিয়ে অনেক পিঠা তৈরি হয়। শীতে কেনা গুড় ব্যবসায়ীরা সারাবছর বিক্রি করে থাকেন। এবছর গুড়ের মধ্যে চিনি মিশিয়ে সাদা করে গুড় বেশি করছে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়িরা। বেশির ভাগ কলসেরই রয়েছে চিনি মিশানো ভেজাল গুড়। আবার পাটলিতে ও ঠিক একই অবস্থা চিনি মিশিয়ে বিক্রি করছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোঃ মোহায়মেন জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহরের নীমতলা স্ট্যান্ডে প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার গুড়ের হাট বসে। এই হাটে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার গুড় উৎপাদক কৃষক গুড় নিয়ে আসেন। এ জেলায় কয়েক লক্ষ খেজুরের গাছ রয়েছে। তবে ইটভাটার কারণে স্থানীয় ভাবে প্রতিদিনই খেজুরের গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষি অফিস উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের খেজুর গাছ রোপন করার জন্য উদ্বুর্দ্ধ করছে। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামে কৃষকরা এখন তাদের জমিতে খেজুর গাছের চারা রোপন করছে। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জেলার এই ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংকিত গুড় ব্যাবসায়ীরা। এ ব্যাপারে গাছিদের খেজুর গাছ লাগানো ও পরিচর্যার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানে সরকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছে অত্র এলাকার সচেতন সমাজ ও ব্যাবসায়ীবৃন্দরা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুরে কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পেয়েছেন ১৯ সাংবাদিক

ঝিনাইদহে রমরমা ভেজাল গুড় পাটালির হাট, দেখার যেন কেউ নেই!

আপডেট সময় : ০৬:২৪:১৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হওয়া গুড় ও পাটালি নিয়ে এক বিশাল গুড়ের হাট বসে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ নীমতলা এলাকায়। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শহরের নিমতলা বাসষ্ট্যান্ডে শীত মৌসুমের সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার এই হাট বসে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ এলাকায় খেজুরের রস বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা খেজুরের গুড় ও পাটালি উৎপাদন করে। হাটের দিনে প্রচুর খেজুরের গুড় ও পাটালী উঠে। তাই বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে কালীগঞ্জ গুড়ের হাট নামেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে এটি এখনও টিকে আছে। এই হাট এখানকার একটি ঐতিহ্য। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা (কৃষক) তাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় ও পাটালি বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসেন। বাজার ঘুরে চাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক হাড়ি/কলস (মাটির তৈরি) পত্রে ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের গুড় বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫ টাকা দরে। আর ঝোল (তরল) গুড় বিক্রি হচ্ছে এক কলস ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। রস থেকে তৈরিকৃত পাটালী বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। দেশের অন্য গুড়ের হাট থেকে এই হাটে ভাল মানের গুড় ও পাটালী এবং দামে তুলনামুলক কম থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের গুড় ব্যবসায়ীরা এগুলো ক্রয় করে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম,বরিশাল, রাজশাহিতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে। রাজশাহীর গুড় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ও আওলাদ হোসেন জানান, আমরা প্রতি হাটে রাজশাহী থেকে কালীগঞ্জে গুড় ও পাটালী কিনতে আসি। এখানের গুড় ও পাটালীতে রসের গন্ধ যেন লেগে থাকে। তাই ক্রেতারাও কালীগঞ্জের খেজুরের গুড়ের কথা বললে তা কিনতে আগ্রহ বোধ করে। কালীগঞ্জ থেকে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ ট্রাক গুড় সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা পাঠায়। গান্না গ্রামের আবদুল আলিম জানান, তিনি গত ৩৫ বছর ধরে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। তার নিজের রয়েছে প্রায় ৮২টি খেজুর গাছ। তিনি বলেন, খেজুর গাছ থেকে ৮-৯ কলস (মাটির তৈরি) রশ পেলে মাটির এক কলস (৮-১০) কেজি ভাল গুড় হয়। তিনি বলে, এক কলস ভাল গুড় বর্তমানে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আলিম আরো জানান, গ্রাম থেকে অনেকে কলস ধরে রশ ক্রয় করেন থাকেন গ্রামবাসী। এক কলস রস বিক্রি হয় ১৫০ টাকা দরে। পিঠা ও পায়েশ তৈরির জন্য গ্রামবাসী তাদের কাছ থেকে সকালে রশ ক্রয় করেন। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত খেজুরের গুড়ের ব্যাপক কদর রয়েছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে গুড় কিনে নিয়ে অন্যস্থানে গিয়ে চিনি ভেজাল দিয়ে এক কলস থেকে ২ কলস তৈরি করে বিক্রি করে এলাকার গুড়ের দুর্নাম হচ্ছে। ‘কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় ব্যাপক প্রসিদ্ধ এই গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রান পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের এলাকার গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া শীত মৌসুমে গুড় দিয়ে অনেক পিঠা তৈরি হয়। শীতে কেনা গুড় ব্যবসায়ীরা সারাবছর বিক্রি করে থাকেন। এবছর গুড়ের মধ্যে চিনি মিশিয়ে সাদা করে গুড় বেশি করছে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়িরা। বেশির ভাগ কলসেরই রয়েছে চিনি মিশানো ভেজাল গুড়। আবার পাটলিতে ও ঠিক একই অবস্থা চিনি মিশিয়ে বিক্রি করছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোঃ মোহায়মেন জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহরের নীমতলা স্ট্যান্ডে প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার গুড়ের হাট বসে। এই হাটে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার গুড় উৎপাদক কৃষক গুড় নিয়ে আসেন। এ জেলায় কয়েক লক্ষ খেজুরের গাছ রয়েছে। তবে ইটভাটার কারণে স্থানীয় ভাবে প্রতিদিনই খেজুরের গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষি অফিস উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের খেজুর গাছ রোপন করার জন্য উদ্বুর্দ্ধ করছে। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামে কৃষকরা এখন তাদের জমিতে খেজুর গাছের চারা রোপন করছে। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জেলার এই ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংকিত গুড় ব্যাবসায়ীরা। এ ব্যাপারে গাছিদের খেজুর গাছ লাগানো ও পরিচর্যার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানে সরকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছে অত্র এলাকার সচেতন সমাজ ও ব্যাবসায়ীবৃন্দরা।