রবিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে Logo কুমিল্লায় আইদি পরিবহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, চাঁদপুরে মানববন্ধন Logo মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চাঁদপুর-৩ আসনে ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক আহসান উল্লাহ Logo আগামী ২৭ ডিসেম্বর শনিবার চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির শীতকালীন গিটারসন্ধ্যা Logo তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ও শুভেচ্ছা মিছিল Logo সুদানের আবেই শান্তিরক্ষা মিশনের ড্রোন হামলায় শহীদ সেনা সদস্যের রাষ্টীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন পলাশবাড়ীতে Logo ৪৭৫ কোটি টাকা ‘জলে’: খনন শেষ হতেই ভরাট সাতক্ষীরার নদী-খাল ​জলাবদ্ধতা কাটেনি, উল্টো সেচ সংকটে কৃষক ও ঘেরমালিকরা ​ Logo খুবিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স ও পিএইচডি ভর্তি শুরু Logo মিয়ানমারে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ সিমেন্টসহ ৮ জন পাচারকারী আটক Logo ইবিতে শহীদ ওসমান হাদি ও দীপু দাশ স্মরণে শান্তি প্রার্থনা

রিমান্ড শেষে আলী হাসান আসকারির ভুয়া নবাবের ঠাঁই কারাগারে

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৮:১৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০
  • ৭৭৭ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ নওয়াব সলিমুল্লাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আলী হাসান আসকারির ঠাঁই হলো কারাগারে। গতকাল সোমবার ভূয়া নবাব আসকারি ও তার ৫ সহযোগীকে আদালতে পাঠালে, আদালতে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ নওয়াব সলিমুলাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া নবাব আসকারির প্রতারণা শিকার হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

যাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে ভুয়া নবাব ও তার চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগী। আসকারি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নার্স পাঠানোর কথা বলে ফেনীর ৪শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আরো কয়েকটি দেশে লোক পাঠিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এসব টাকা হাতিয়ে নেন।

পুলিশের সিটিটিসির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি ও তার চক্রের হাতিয়ে নেওয়া ৬ কোটি টাকার খোঁজ করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের যে দালাল রয়েছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের সিটিটিসির একজন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আলী হাসান আসকারি ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তির মধ্যে শাহবাগের একটি অংশের মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য ভূমি অফিসে দুটি মিসকেস (৭০৭/২০২০, ৮৯০/২০২০) করেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে নবাব এস্টেটের কিছু সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য তিনটি মিসকেস (৬৬৬/২০২০, ৬৬৭/২০২০, ৬৬৮/২০২০) করেন। বর্তমানে এসব সম্পত্তি ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। নবাব পরিবারের বংশধর না হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া নবাব আসকারি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে নিজের নামে নবাব খাজা আলী আহসান আসকারি নামে একটি জন্মনিবন্ধন সনদ নেন। সেই জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি নবাবের বংশধর হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি ঢাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়ে তিনি ২০১৭ সালে আবেদন করে নবাব খাজা আলী হাসান আসকারি নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আরো জানান, ভুয়া নবাব তার স্ত্রীর নাম-পরিচয়ও বদলে দিয়েছেন প্রতারণার মাধ্যমে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে চুয়াডাঙ্গার সবুজপাড়ায় হাতেম আলীর মেয়ে মেরিনা আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে তিনি নাম বদলে সাহেদা হেনা আসকারি হিসেবে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছেন।

এ ছাড়া এএসসি ও এইচএসসির সনদেও মেরিনা তার নাম পাল্টে ফেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কাছে আবেদন করে নতুনভাবে সকল সনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তবে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া কীভাবে বোর্ড পরিবর্তিত নামে মেরিনাকে সনদ দিয়েছিল সে বিষয়টি জানতে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষা বোর্ডে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরো বলেন, নবাবি এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, কামর”ল হাসান হৃদয় নামে এক প্রতারক ভুয়া ও জাল নথিপত্র দিয়ে নবাবের অনেক সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এখন পুলিশের ধারণা, তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া আলী হাসান আসকারি প্রতারক কামর”ল হাসান হৃদয় হতে পারেন। যদিও পুলিশি রিমান্ডে আসকারি দাবি করেন, তিনি কামর”ল হাসান নন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসকারি যে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজন তার আপন ভাই রয়েছেন।

তারা হলেন- রাশেদ ওরফে রহমত আলী ওরফে রাজা, মো. আহাম্মদ আলী ও বরকত আলী ওরফে রানা। আবার তিন সহোদর দাবি করছেন, কামর”ল হাসান হৃদয় নামে তাদের এক ভাই ছিল, যিনি সৌদি আরবে মারা গেছেন বলে তারা দাবি করেছেন। তবে সৌদি আরবে কবে কীভাবে মারা গেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি তারা। পুলিশের ধারণা, গ্রেফতার রাজা, আলী ও রানার বড় ভাই ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি। তিনিই কামরুল হাসান হৃদয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে

রিমান্ড শেষে আলী হাসান আসকারির ভুয়া নবাবের ঠাঁই কারাগারে

আপডেট সময় : ০৫:৩৮:১৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০

নিউজ ডেস্ক:পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ নওয়াব সলিমুল্লাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আলী হাসান আসকারির ঠাঁই হলো কারাগারে। গতকাল সোমবার ভূয়া নবাব আসকারি ও তার ৫ সহযোগীকে আদালতে পাঠালে, আদালতে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ নওয়াব সলিমুলাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া নবাব আসকারির প্রতারণা শিকার হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

যাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে ভুয়া নবাব ও তার চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগী। আসকারি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নার্স পাঠানোর কথা বলে ফেনীর ৪শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আরো কয়েকটি দেশে লোক পাঠিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এসব টাকা হাতিয়ে নেন।

পুলিশের সিটিটিসির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি ও তার চক্রের হাতিয়ে নেওয়া ৬ কোটি টাকার খোঁজ করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের যে দালাল রয়েছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের সিটিটিসির একজন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আলী হাসান আসকারি ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তির মধ্যে শাহবাগের একটি অংশের মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য ভূমি অফিসে দুটি মিসকেস (৭০৭/২০২০, ৮৯০/২০২০) করেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে নবাব এস্টেটের কিছু সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য তিনটি মিসকেস (৬৬৬/২০২০, ৬৬৭/২০২০, ৬৬৮/২০২০) করেন। বর্তমানে এসব সম্পত্তি ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। নবাব পরিবারের বংশধর না হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া নবাব আসকারি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে নিজের নামে নবাব খাজা আলী আহসান আসকারি নামে একটি জন্মনিবন্ধন সনদ নেন। সেই জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি নবাবের বংশধর হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি ঢাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়ে তিনি ২০১৭ সালে আবেদন করে নবাব খাজা আলী হাসান আসকারি নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আরো জানান, ভুয়া নবাব তার স্ত্রীর নাম-পরিচয়ও বদলে দিয়েছেন প্রতারণার মাধ্যমে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে চুয়াডাঙ্গার সবুজপাড়ায় হাতেম আলীর মেয়ে মেরিনা আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে তিনি নাম বদলে সাহেদা হেনা আসকারি হিসেবে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছেন।

এ ছাড়া এএসসি ও এইচএসসির সনদেও মেরিনা তার নাম পাল্টে ফেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কাছে আবেদন করে নতুনভাবে সকল সনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তবে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া কীভাবে বোর্ড পরিবর্তিত নামে মেরিনাকে সনদ দিয়েছিল সে বিষয়টি জানতে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষা বোর্ডে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরো বলেন, নবাবি এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, কামর”ল হাসান হৃদয় নামে এক প্রতারক ভুয়া ও জাল নথিপত্র দিয়ে নবাবের অনেক সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এখন পুলিশের ধারণা, তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া আলী হাসান আসকারি প্রতারক কামর”ল হাসান হৃদয় হতে পারেন। যদিও পুলিশি রিমান্ডে আসকারি দাবি করেন, তিনি কামর”ল হাসান নন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসকারি যে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজন তার আপন ভাই রয়েছেন।

তারা হলেন- রাশেদ ওরফে রহমত আলী ওরফে রাজা, মো. আহাম্মদ আলী ও বরকত আলী ওরফে রানা। আবার তিন সহোদর দাবি করছেন, কামর”ল হাসান হৃদয় নামে তাদের এক ভাই ছিল, যিনি সৌদি আরবে মারা গেছেন বলে তারা দাবি করেছেন। তবে সৌদি আরবে কবে কীভাবে মারা গেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি তারা। পুলিশের ধারণা, গ্রেফতার রাজা, আলী ও রানার বড় ভাই ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি। তিনিই কামরুল হাসান হৃদয়।