ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী

0
33
  • * চার দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী
  • * ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
  • * ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
  • * ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
    নিউজ ডেস্ক:শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী ধেয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। ডুবে যেতে পারে নি¤œাঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪০ বছরের মধ্যে সাগরে যত ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার কোনোটি কখনই এত শক্তিশালী আকার ধারণ করেনি। এ কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এদিকে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে অগ্রসর হতে থাকা ফণীর কারণে গতকাল ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অন্ধপ্রদেশ ও ওড়িশায় ভারী বর্ষণ হয়েছে। অন্ধপ্রদেশের রাস্তার ধারে বৈদ্যুতিক পোল ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঝড় ও বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে বাড়িঘর ছাড়ছেন তারা। কাকদ্বীপের উপকূলীয় থানা এলাকায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই ফনি বাংলাদেশে আছড়ে পড়লে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকা দ্বীপ ও চরাঞ্চলসহ নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
    আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সামনে অমাবস্যা থাকায় উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে এই জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ১৯টি উপকূলীয় জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি), ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। ফণী-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩২টি জাহাজ প্রস্তুত রেখেছে নৌবাহিনী। ঢাকার নদীবন্দরসহ সারা দেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। ফণীর আঘাত থেকে রক্ষায় আজ সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলের মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া মাঠে ৮০ শতাংশ পাকা বোরো ধান কাটতে এবং ভুট্টা, চীনা বাদামসহ পরিপক্ক সব ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে গতকাল এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, নির্দেশনার ফলে ঢাকা নদীবন্দরের সঙ্গে ৪১টি রুটের যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
    এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় জেলাগুলোতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ধীরে এগিয়ে এলেও ফণী বেশ শক্তিশালী হয়ে গতি বেড়ে গেছে। তাই ফণী ৪ মের আগে যে কোনো সময় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, ফণীর শক্তি কেমন হবে, সেটি শুক্রবার দুপুরে বোঝা যাবে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ফণী কখন আঘাত হানবে, তার ওপর ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করবে। আঘাত যদি জোয়ারের সময় হয়, তাহলে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বেশি হবে।
    প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপ এক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। নাম হয় ফণী। ১৯৭৬ সালের পর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আর হয়নি। তীব্র ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের বরাতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলের কিছু স্থানে কাল শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।