চুয়াডাঙ্গায় বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন! হত্যাকারীর আত্মসমর্পণ

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ১১:৫৭:১৯ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯
  • ৭২৭ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাহাপুরে ছোট ভাই সুজন আলীকে (২৭) কুপিয়ে হত্যা করেছে আপন বড় ভাই। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাহাপুর গ্রামে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দু’ঘণ্টা পর ঘাতক বড় ভাই আব্দুল কাদের সদর থানায় এসে পুলিশের কাছে আত্মসমপর্ণ করেছে। নিহত সুজন আলী ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সাহাপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের দু’ছেলে আব্দুল কাদের ও সুজন আলী। রাত ৯টার দিকে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে আব্দুল কাদের ও সুজন আলীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আব্দুল কাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুজনকে কোপাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই সুজনের মৃত্যু।
স্থানীয়রা জানান, বছরখানেক আগে জমি-জমা বিক্রি করে সৌদি আরবে যান সুজন। কিন্তু সৌদিতে যে চাকরির কথা বলে পাঠানো হয়েছিলো সেই চাকরি না দিয়ে মরুভূমির একটি খামারে কাজ দেওয়া হয় সুজনকে। প্রবাসে কষ্টের চাকরি না করে গত ৭ মাস আগে দেশে ফিরে আসে সুজন। বিষয়টি নিয়ে সুজনের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হতো বড় ভাই আব্দুল কাদেরের।
ঘটনার বর্ণনা দিতে দিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এলাকাবাসী ও শাহাপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ প্রতিবেদককে বলেন, বছর খানেক আগে সাহাপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের তিন ছেলে আব্দুল কাদের, আতিয়ার ও মনি একই এলাকার আজিবারের ছেলে রায়হান, ঝাড়– মন্ডলের ছেলে মোমিন, রহিম মাস্টারের ছেলে মুনাসির, আব্দুল কাশেমের ছেলে সেলিম ও তার নিজ ভাই সুজনকে সৌদি আরবে পাঠায়। ঘটনাচক্রে সুজন কয়েকদিন পরে দেশে ফিরলেও বাকিরা বিদেশের মাটিতে থেকে যায়। পরের ছোট ভাই সুজন এই নিয়ে তার ভাইদের সাথে গন্ডগোল বাধে।
তাঁরা আরও জানায়, প্রত্যেকজনের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে নেওয় হয় এবং নিজ ভাইকে ফ্রিতে বিদেশ পাঠানো হয়। দেশে আসার পর সুজন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে সুজন ও তার ভাইয়ের সাথে গন্ডগোল চলতে থাকে। মঙ্গলবার রাতে সুজন ও তার স্ত্রী বাড়ির সামনে বসা ছিল। এ সময় সুজন ভুট্টার একটি ডাল তার স্ত্রীকে ছুড়ে মারলে তার স্ত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কাঁদতে থাকে। এ নিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল কাদেরের সাথে সুজনের তর্কবিতর্ক হয় এবং পূর্বের জের ধরে আব্দুল কাদের উত্তেজিত হয়ে ঘর থেকে ধারালো রামদা দিয়ে সুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময় স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরই মারা যায়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখে পুলিশ।
সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আউলিয়ার রহমান বলেন, সুজনের মাথায় ও ডানহাতে কোপের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই সে মারা যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাতে দুই ভাই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বড় ভাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছোট ভাই সুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় ঘাতক বড় ভাই আব্দুল কাদের। এর দু’ঘণ্টা পর নিজেই সদর থানাতে এসে আত্মসমর্পণ করেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন! হত্যাকারীর আত্মসমর্পণ

আপডেট সময় : ১১:৫৭:১৯ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯

নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাহাপুরে ছোট ভাই সুজন আলীকে (২৭) কুপিয়ে হত্যা করেছে আপন বড় ভাই। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাহাপুর গ্রামে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দু’ঘণ্টা পর ঘাতক বড় ভাই আব্দুল কাদের সদর থানায় এসে পুলিশের কাছে আত্মসমপর্ণ করেছে। নিহত সুজন আলী ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সাহাপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের দু’ছেলে আব্দুল কাদের ও সুজন আলী। রাত ৯টার দিকে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে আব্দুল কাদের ও সুজন আলীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আব্দুল কাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুজনকে কোপাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই সুজনের মৃত্যু।
স্থানীয়রা জানান, বছরখানেক আগে জমি-জমা বিক্রি করে সৌদি আরবে যান সুজন। কিন্তু সৌদিতে যে চাকরির কথা বলে পাঠানো হয়েছিলো সেই চাকরি না দিয়ে মরুভূমির একটি খামারে কাজ দেওয়া হয় সুজনকে। প্রবাসে কষ্টের চাকরি না করে গত ৭ মাস আগে দেশে ফিরে আসে সুজন। বিষয়টি নিয়ে সুজনের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হতো বড় ভাই আব্দুল কাদেরের।
ঘটনার বর্ণনা দিতে দিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এলাকাবাসী ও শাহাপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ প্রতিবেদককে বলেন, বছর খানেক আগে সাহাপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের তিন ছেলে আব্দুল কাদের, আতিয়ার ও মনি একই এলাকার আজিবারের ছেলে রায়হান, ঝাড়– মন্ডলের ছেলে মোমিন, রহিম মাস্টারের ছেলে মুনাসির, আব্দুল কাশেমের ছেলে সেলিম ও তার নিজ ভাই সুজনকে সৌদি আরবে পাঠায়। ঘটনাচক্রে সুজন কয়েকদিন পরে দেশে ফিরলেও বাকিরা বিদেশের মাটিতে থেকে যায়। পরের ছোট ভাই সুজন এই নিয়ে তার ভাইদের সাথে গন্ডগোল বাধে।
তাঁরা আরও জানায়, প্রত্যেকজনের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে নেওয় হয় এবং নিজ ভাইকে ফ্রিতে বিদেশ পাঠানো হয়। দেশে আসার পর সুজন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে সুজন ও তার ভাইয়ের সাথে গন্ডগোল চলতে থাকে। মঙ্গলবার রাতে সুজন ও তার স্ত্রী বাড়ির সামনে বসা ছিল। এ সময় সুজন ভুট্টার একটি ডাল তার স্ত্রীকে ছুড়ে মারলে তার স্ত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কাঁদতে থাকে। এ নিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল কাদেরের সাথে সুজনের তর্কবিতর্ক হয় এবং পূর্বের জের ধরে আব্দুল কাদের উত্তেজিত হয়ে ঘর থেকে ধারালো রামদা দিয়ে সুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময় স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরই মারা যায়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখে পুলিশ।
সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আউলিয়ার রহমান বলেন, সুজনের মাথায় ও ডানহাতে কোপের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই সে মারা যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাতে দুই ভাই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বড় ভাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছোট ভাই সুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় ঘাতক বড় ভাই আব্দুল কাদের। এর দু’ঘণ্টা পর নিজেই সদর থানাতে এসে আত্মসমর্পণ করেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।